রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের মহাকাশভিত্তিক ‘গোল্ডেন ডোম’-এ ফিকে ইসরাইল-রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা?

প্রকাশিত : ০৪:৩৭ অপরাহ্ণ, ২৫ মে ২০২৫ রবিবার ৫৮ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

এবার দুর্ভেদ্য বর্মে দেশের আকাশকে ঢেকে ফেলার ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন ধরনের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ বা এয়ার ডিফেন্স তৈরি করতে কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঢালের নাম ‘গোল্ডেন ডোম’। অবশ্য ২০২৯ সালের আগে সেটি চালু হওয়ার কোনো আশাই নেই। তবে ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর দুনিয়া জুড়ে চলছে আমেরিকার ‘গোল্ডেন ডোম’-এর সঙ্গে ইসরাইলি ‘আয়রন ডোম’ ও রাশিয়ার ‘এস-৪০০’-এর তুলনামূলক আলোচনা।

গোল্ডেন ডোম, আয়রন ডোমের মূল লক্ষ্য এক। শত্রুর ছোড়া ব্যালেস্টিক বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান থেকে জনসাধারণ ও সামরিক কৌশলগত সম্পত্তিকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এগুলোকে তৈরি করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যে ‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরি করতে যাচ্ছে, তার কার্যপদ্ধতি হবে সম্পূর্ণ আলাদা। যুক্তরাষ্ট্রের এই হাতিয়ারটি হবে সম্পূর্ণ মহাকাশভিত্তিক। এর মাধ্যমে ইনফ্রারেড লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে শত্রুর ছোড়া ব্যালেস্টিক বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করবে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর জন্য স্থলভিত্তিক রেডারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে এই ব্যবস্থা। তারপর লেজার ব্যবহার করে হাইপারসনিক, ব্যালেস্টিক এবং ক্রুজ— তিন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করবে গোল্ডেন ডোম।

তবে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা মনে করেন, একাধিক পর্যায়ে এই অস্ত্র ব্যবহার করবে মার্কিন সামরিক বাহিনী। যার দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকবে স্থলভিত্তিক মিডকোর্স প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে (ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) চিহ্নিত করে তা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে এর জুড়ি মেলা ভার। গত কয়েক বছরে বহুবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আইসিবিএম হামলার হুমকি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার ‘সুপ্রিম লিডার’ কিম জং-উন। তাই এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পূর্বের প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে মোতায়েন রাখতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

বর্তমানে এজিস বিএমডি বা ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্স নামের একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে মার্কিন নৌবাহিনী। এতে রয়েছে এসএম-২ নামের ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র। মূলত রণতরীগুলোকে রুশ আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে এটি মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌসেনা। ২০০৯ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে এজিস বিএমডির সাহায্যে যুদ্ধজাহাজগুলোকে দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করে মার্কিন মুলুক।

এছাড়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর হাতে রয়েছে আরও দু’টি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সেগুলো হল, টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স বা থাড। হিট-টু-কিল প্রযুক্তিতে তৈরি এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকানো সম্ভব। বর্তমানে এর কয়েকটি ইউনিট ইসরাইলে মোতায়েন রেখেছে ওয়াশিংটন। গত বছরের ডিসেম্বরে ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিদের ছোড়া ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে শূন্যে ধ্বংস করে খবরের শিরোনামে আসে থাড।

যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট অ্যাডভান্সড কেপেবিলিটি-৩ (পিএসি-৩) নামের এয়ার ডিফেন্সেও রয়েছে হিট-টু-কিল প্রযুক্তি। এতে এর নকশা স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের জন্য করা হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সংশ্লিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটিকে মোতায়েন রেখেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। চীনা হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। ওয়াশিংটনের সহযোগিতায় পিএসি-৩ মোতায়েন করেছে জাপানও।

অন্যদিকে, ইসরাইলের হাতে যে আয়রন ডোম রয়েছে, তা কৃত্রিম উপগ্রহ পরিচালিত নয়। স্বল্পপাল্লার রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র, মর্টার ও কামানের গোলা আটকাতে এর নকশা তৈরি করেছেন ইহুদি প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিতের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে চলা যুদ্ধে দখলদার ইসরাইলের এই ‘আয়রন ডোম’ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফলতা দেখিয়েছে। দেশটির দাবি, হামাসের ছোড়া ৯৮ শতাংশ রকেটকে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে তাদের ‘আয়রন ডোম’।

বিশ্বের অত্যাধুনিক ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’র তালিকায় অবশ্যই আসবে রাশিয়ার তৈরি ‘এস-৪০০’। এতে রয়েছে উন্নত রেডার, কমান্ড সেন্টার এবং ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র। একসঙ্গে মোট ৮০টি লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানতে সক্ষম ক্রেমলিনের ‘এস-৪০০’।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, সব ধরনের পরিবেশে কাজ করতে পারে রুশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। অর্থাৎ, মরুভূমির প্রবল গরম এবং হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় সমানভাবে কার্যকর এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ‘এস-৪০০’র রাডারের পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। অন্যদিকে, স্টেল্থ যুদ্ধবিমান, ক্রুজ এবং ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে মাঝ-আকাশেই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে মস্কোর এই অস্ত্রের। এস-৪০০’র নির্মাণকারী সংস্থা হল আলমাজ সেন্ট্রাল ডিজাইন ব্যুরো। এটি একসঙ্গে চিহ্নিত করতে পারে ৩০০ লক্ষ্যবস্তু।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবশ্য দাবি, ইসরাইলি আয়রন ডোমের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে আমেরিকার গোল্ডন ডোম। এর জন্য প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার খরচ করবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। তবে প্রাথমিকভাবে, এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরিতে আড়াই হাজার কোটি ডলার দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে বিশ্বের কোনো দেশের কাছে কৃত্রিম উপগ্রহ ভিত্তিক ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ নেই। ফলে গোল্ডেন ডোম তৈরি হলে, সেদিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে যাবে আমেরিকা। তবে এই ধরনের প্রযুক্তি তৈরিতে খুব একটা পিছিয়ে নেই রাশিয়া ও চীনও।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।     বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন।  নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।  নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন।  তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।  বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।   এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে।  ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন। তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT