রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ক্ষুধায় পথে পথে পড়ে আছে মানুষ

প্রকাশিত : ০৮:৪২ পূর্বাহ্ণ, ২৪ জুলাই ২০২৫ বৃহস্পতিবার ৩২ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

গাজার পথে পথে ক্ষুধার্ত মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। বৃদ্ধ ও শিশুদের পথেঘাটে মরে পড়ে থাকার নজির মিলছে। গাজাবাসীর দুঃস্বপ্ন আর শেষ হচ্ছে না। গাজায় ত্রাণকেন্দ্র ঘিরে মৃত্যুফাঁদের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন সেখানকার বাসিন্দা চার সন্তানের বাবা রায়েদ জামাল।

দক্ষিণ-পশ্চিম গাজার আল-মাওয়াসি বাস্তুচ্যুত শিবিরে তাঁর তাঁবু। ট্যাঙ্ক এসে গুলি চালাতে শুরু করে। এতে শহীদ হয় তার তিন ছেলে। তবে বিতরণকেন্দ্রে তিনি কিছুই পাননি। সেখানে ছিল কেবল দুটি খালি বাক্স। প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্যমতে বর্ণনা তুলে ধরেছে দ্য গার্ডিয়ান।

রায়েদ জামাল মার্কিন-ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করেন। এই কেন্দ্রটি এমন একটি এলাকায় অবস্থিত, যেখানে উচ্ছেদের নোটিশ জারি হয়েছে। কেন্দ্রটি আট মিনিটের জন্য খোলা থাকে। নকশা অনুসারে ত্রাণকেন্দ্রটি বিপজ্জনক স্থানে অবস্থিত। ত্রাণ আনতে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পথ রয়েছে। খাবারের জন্য এই পথে গাদাগাদি করে প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন গাজাবাসী। উদ্দেশ্য একটাই, সন্তানদের পেটে একমুঠো খাবার তুলে দেওয়া।

জামালের মাথার ওপর দিয়ে গুলি চলে যায় প্রায়ই। খাবার আনতে প্রায়ই ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক কিংবা সেনাদের পাশ দিয়েই যেতে হয়। এই স্থানগুলোতে মার্কিন ভাড়াটে সৈনা নিয়োগ করা আছে। জামাল বলেন, গুলির মুখে প্রতিদিন পড়ি। আমাদের হৃদয় থেকে মৃত্যুভয় চলে গেছে।

পশ্চিম গাজা শহরের একটি তাঁবুতে বসবাসকারী ২৭ বছর বয়সী মাহমুদ আলারির বলেন, তিনি ওয়াদি গাজার একটি ত্রাণকেন্দ্রে যান। ইসরায়েলি সেনা পরিচালিত নেটজারিম করিডোর দিয়ে তাঁকে যেতে হয়। সেখান থেকে প্রতিদিন একটি ট্রাকের পেছনে উঠে পড়েন তিনি। মাহমুদ বলেন, ত্রাণ আনতে গিয়ে আমরা প্রতিদিন একটি মৃত্যুফাঁদে আটকে যাই।

অপরাধের শাস্তি না হওয়ায় ইসরায়েল গাজার মানুষকে অনাহারে রাখতে বাধ্য করছে। গাজায় কাজ করা একটি এনজিও হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন ইউকের আঞ্চলিক যোগাযোগ ও অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মারা বার্নাসকোনি আলজাজিরাকে বলেন, গাজা এখন অনাহারের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গাজাবাসীর সামনে এক অন্তহীন দুঃস্বপ্ন। বাসিন্দাদের সামনে এখন শুধুই মৃত্যু, ক্ষুধা, বাস্তুচ্যুতি ও বিপদ।

ক্ষুধায় ৮৫ শিশুসহ ১০১ জনের মৃত্যু

আলজাজিরা জানায়, অনাহারে এ পর্যন্ত ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের ৮৫ জনই শিশু। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ ২৮টি দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অনাহারে হত্যার অভিযোগ তুলেছে। ১০৯ মানবিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তারা অবিলম্বে গাজায় মানবিক করিডোর তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।

গত মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। মে মাস থেকে জিএইচএফ প্রতিষ্ঠা করে বিতর্কিত ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে। ক্ষুধার্তদের আটকে ফেলে হত্যা করা হচ্ছে। এই কৌশলে এ পর্যন্ত এক হাজার ৫৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

বুধবার গাজায় ২১ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাদের মধ্যে দক্ষিণ রাফায় ত্রাণকেন্দ্রের কাছে গুলিবিদ্ধ দুজন রয়েছেন। হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৯ হাজার ১০৬ জন নিহত ও এক লাখ ৪২ হাজার ৫১১ জন আহত হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় ইউরোপে ট্রাম্পের দূত

মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাক্সিওস জানায়, ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ইসরায়েল প্রতিশ্রুতি দিলেও তা ভঙ্গ করেছে। থমকে গেছে যুদ্ধবিরতির আলোচনা। এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়ায় প্রাণ ফেরাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ ইউরোপ সফরে রয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার তিনি ইতালির রোমে ইসরায়েলের কৌশলগতবিষয়ক মন্ত্রী রন ডার্মার ও কাতারের একজন জ্যেষ্ঠ দূতের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আলোচনায় অগ্রগতি হলে তিনি এই সপ্তাহেই মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে দোহায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এতে গাজায় একটি মানবিক করিডোর স্থাপনের ওপর জোর দেবেন তিনি।

গাজা থেকে সাংবাদিকদের উদ্ধারে এএফপির অনুরোধ

গাজা থেকে নিজেদের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের সরিয়ে নিতে চায় ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। শিগগিরই তাদের উপত্যকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে ইসরায়েলের প্রতি আকুতি জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি। কাতারি সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এএফপি বলেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে এখন সাংবাদিকরা ‘ভয়াবহ’ ও ‘অসহনীয়’ পরিস্থিতির মুখোমুখি।

ইসরায়েল কর্তৃক বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে স্থানীয় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকরাই বিশ্বকে গাজার বাস্তবতা জানিয়ে আসছেন। অথচ তারাই এখন চরম অনাহার, দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। মাসের পর মাস আমরা আমাদের সাংবাদিকদের দুর্দশা শুধু চোখের সামনে দেখে গেছি। তারা তাদের সাহস, পেশাদারি এবং সহনশীলতার অসাধারণ নজির স্থাপন করেছেন। তাদের বর্তমান অবস্থা আর সহনীয় নয়। তাদের জীবন এখন হুমকির মুখে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।     বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন।  নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।  নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন।  তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।  বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।   এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে।  ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন। তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT