বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘টিন সেক্স’ নিয়ে নতুন বিতর্ক

প্রকাশিত : ০৮:০৮ পূর্বাহ্ণ, ২ আগস্ট ২০২৫ শনিবার ৪৪ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

ভারতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের (কিশোর-কিশোরী) মধ্যে সম্মতির ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই আইন পরিবর্তনের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন জমা পড়েছে। প্রখ্যাত আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং-এর করা এই পিটিশনটি দেশজুড়ে ‘টিন সেক্স’ বা কিশোর-কিশোরীদের যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে।

ভারতের বর্তমান আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু ইন্দিরা জয়সিং তার আবেদনে যুক্তি দিয়েছেন, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে যদি সম্মতির ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ক হয়, তাহলে তা শোষণমূলক বা আপত্তিকর হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। তিনি আদালতের কাছে আবেদন করেছেন, এই ধরনের সম্পর্ককে ফৌজদারি বিচার থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।

তবে ভারত সরকার এই আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমন কোনো ব্যতিক্রম চালু করলে শিশুদের (১৮ বছরের কম বয়সীদের) সুরক্ষা ও নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে। এতে পাচার ও শোষণের মতো অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।

এই ইস্যুতে সমাজকর্মী ও অধিকার কর্মীদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। শিশু অধিকার কর্মীরা বলছেন, টিনএজারদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এই ধরনের আইন পরিবর্তন করা জরুরি।

অন্যদিকে, বিরোধীরা মনে করছেন, এমন পদক্ষেপ মানব পাচার ও বাল্যবিবাহের মতো অপরাধকে উসকে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আরও প্রশ্ন তুলেছেন, কোনো কিশোর বা কিশোরী যদি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে প্রমাণের ভার বহন করার সক্ষমতা তাদের কতটা আছে?

ভারতে যৌন সম্মতির বয়স নির্ধারণ নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে বিতর্ক চলছে। ১৮৬০ সালে দেশের প্রথম দণ্ডবিধি চালু হওয়ার সময় এই বয়স ছিল ১০ বছর। ১৯৪০ সালে তা বাড়িয়ে ১৬ করা হয়। এরপর ২০১২ সালে শিশুদের যৌন নির্যাতন থেকে সুরক্ষার জন্য প্রণীত ‘প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেনসেস অ্যাক্ট’ (পিওসিএসও) অনুসারে, যৌন সম্মতির বয়স ১৮ বছরে উন্নীত করা হয়।

গত এক দশকে ভারতের বিভিন্ন আদালত ও শিশু অধিকার কর্মীরা আইনের এই বয়সসীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, এই আইনটি অনেক সময় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যকার সম্মতিমূলক সম্পর্ককেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। সমাজের নানা শ্রেণি ও ধর্মীয় বিভাজন থাকায় আইনটি প্রায়শই ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।

২০২২ সালে কর্ণাটক হাইকোর্ট ভারতের আইন কমিশনকে এই বিষয়ে পুনরায় বিবেচনা করতে বলে। সেখানে আদালত বেশ কিছু মামলার উদাহরণ তুলে ধরে, যেখানে ১৬ বছরের বেশি বয়সী মেয়েরা প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে পালিয়ে যাওয়ার পর ছেলের বিরুদ্ধে পিওসিএসও আইনে ধর্ষণের অভিযোগ আনার মতো রয়েছে।

আইন কমিশন ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে যৌন সম্মতির বয়স কমানোর বিরুদ্ধে মত দিলেও, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের সম্মতিমূলক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিচারকদের ‘গাইডে জুডিশিয়াল ডিসক্রিশন’ বা সীমিত বিচারিক বিবেচনা ব্যবহারের সুপারিশ করে। এর ফলে বিচারকেরা মামলার পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাজা কমানো, জামিন দেওয়া বা মামলা বাতিল করার ক্ষমতা পাবেন।
ইন্দিরা জয়সিং অবশ্য মনে করেন, শুধু বিচারকদের বিবেচনা যথেষ্ট নয়। কারণ, অভিযুক্তকে দীর্ঘ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, এটাও একটা শাস্তি। ভারতের বিচার ব্যবস্থায় মামলার দীর্ঘসূত্রতা একটি বড় সমস্যা। ২০২১ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, পিওসিএসও আইনে প্রায় আড়াই লাখ মামলা বিচারাধীন।

ইন্দিরা তার আবেদনে পিওসিএসও আইনে একটি ‘ক্লোজ-ইন-এইজ এক্সেপশন’ যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই ব্যতিক্রমের মাধ্যমে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী সমবয়সীদের মধ্যে সম্মতির ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে না।

শিশু অধিকার কর্মী ও আইনজীবী ভুবন রিবহু অবশ্য এই ধরনের কোনো ব্যতিক্রমের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তার মতে, এর অপব্যবহার করে অপহরণ, মানব পাচার এবং বাল্যবিবাহের মতো অপরাধ বেড়ে যেতে পারে।

তবে মানবাধিকার সংগঠন ‘এইচএকিউ: সেন্টার ফর চাইল্ড রাইটস’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এনাক্ষী গাঙ্গুলি ইন্দিরা জয়সিং-এর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আইনের অপব্যবহারের ভয়ে আমরা আইন পরিবর্তন করা থেকে পিছিয়ে আসতে পারি না। আইনকে সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, তবেই তা কার্যকর ও প্রাসঙ্গিক থাকবে।’

সূত্র: বিবিসি

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।     বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন।  নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।  নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন।  তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।  বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।   এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে।  ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন। তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT