সোমবার ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৪ঠা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগুনে রূপপুর প্রকল্পের মালামাল পোড়ার সত্যতা মেলেনি

প্রকাশিত : ০৭:০৫ পূর্বাহ্ণ, ২০ অক্টোবর ২০২৫ সোমবার ৫ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কিছু বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে যাওয়ার দাবি করা হলেও এর কোনও সত্যতা মেলেনি। রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তা, রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছুই জানে না এ বিষয়ে। এমনকি যে সিঅ্যান্ডএফের বরাত দিয়ে ওই দাবি করা হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে রূপপুর প্রকল্পে তারা কোনও কাজ করে না।

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হওয়ায় এই প্রকল্পের মালালাম পুড়ে যাওয়ার খবরটি দিনভর আলোচনায় ছিল। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ঘটনার কোনও সত্যতা খুঁজে পায়নি। তাহলে কেন এমন তথ্য প্রচার করা হলো সেই প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ধোঁয়াশা।

শনিবার দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ওই কমপ্লেক্সে আকাশ পথে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্য রাখার গুদাম রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবির প্রচেষ্টায় সাত ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও সেখানে থাকা বহু মূল্যমান মালামাল পুড়ে যায়। যার মধ্যে রাশিয়া থেকে আনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন সিঅ্যান্ডএফ মমতা ট্রেডিং কোম্পানির কথিত কর্মকর্তা সরকার বিপ্লব হোসাইন।

মমতা ট্রেডিং মূলত আমদানিকৃত পণ্য খালাসে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি ওয়েবসাইট থেকে ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করা হলে আশরাফুল আলম নামের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা রূপপুর প্রকল্পের কোনও কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। তাছাড়া বিপ্লব হোসাইন নামে কেউ আমাদের এখানে কাজ করেন না।

বিমান বন্দর এলাকায় বিপ্লব হোসাইন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রূপপুর প্রকল্পের জন্য রাশিয়া থেকে সাতটি শিপমেন্টের মাধ্যমে প্রায় ১৮ টনের মতো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আনা হয়েছিলো ৬ দিন আগে। এসব পণ্য খালাসের জন্য পরমাণু শক্তি কমিশন থেকে এনওসি (অনাপত্তিপত্র) নিতে হয়। সেই এনওসি নিতে দেরি হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পণ্য খালাস করা যায়নি। রবিবার তা খালাস হওয়ার কথা ছিল।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক মো. কবির হোসেনর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ের ৪ জন কর্মকর্তারা সঙ্গে কথা হয় । তারা জানান, রূপপুর প্রকল্পের জন্য বেশিরভাগ মালামাল পানিপথে আসে। কিছু মালামাল আসে বিমানে। এসব মালামাল আমদানি ও তা স্থাপনের দায়িত্ব রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। যেভাবেই মালামাল আমদানি করা হোক না কেন তা প্রকল্প এলাকায় পৌছানোর পর যখন হস্তান্তর করা হয় তখনই কেবল এর দায় দায়িত্ব প্রকল্পের ওপর পড়ে। তার আগে এই মালামাল তাদের নয়। তাছাড়া প্রায়ই বিভিন্নভাবে মালামাল আমদানি করা হচ্ছে।

কর্মকর্তাদের একজন বলেন, ঘটনা শোনার পর আমরাও রাশিয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারাও বিষয়টি জানে না বলে জানিয়েছে। তাছাড়া মমতা ট্রেডিং নামে কোনও প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের কাজও রাশিয়ানরা দেয়নি বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার মূল ঠিকাদার তাদের কাজের সুবিধার্থে বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। সেই সাব কন্ট্রাক্টরদের কেউ কেউ আবার তাদের সাব কন্ট্রাক্টর নিয়োগ দেয়। ফলে অনেক কিছুই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের এমনকি রাশিয়ানদেরও জানা থাকে না। কিন্তু ১৮ টনের মতো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যদি সত্যিই রাশিয়া থেকেই আমদানি করা হয় তাহলে তো রাশিয়ানদের কোনও না কোনোভাবে জানার কথা। আবার প্রশ্ন উঠেছে রাশিয়া থেকেই যদি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি আমদানি করা হয় তাহলে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান কেন আরেক প্রতিষ্ঠানকে সাব কন্ট্রাক্ট দেবে? এই রহস্য উৎঘাটন করা দরকার। এ বিষয়ে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, রাশিয়ার আর্ধিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট মিলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রসাটম।

ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। সেই সঙ্গে এগিয়ে চলেছে দ্বিতীয় দফার নির্মাণ কাজ। দুই দফা সময়সীমা পিছিয়ে চলতি বছর প্রথম ইউনিট এবং আগামী বছরে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও কাজের অগ্রগতি বলছে, আগামী বছর প্রথম ইউনিট এবং পরের বছর উৎপাদনে আসবে দ্বিতীয় ইউনিট।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT