রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুই ‘মাস্টারের’ জুয়ার ফাঁদে নিঃস্ব হচ্ছেন তরুণরা

প্রকাশিত : ০৮:৪২ পূর্বাহ্ণ, ৯ জুলাই ২০২৫ বুধবার ৬৬ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

মেহেরপুরের মুজিবনগর আদর্শ মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নুরুল ইসলাম এবং অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক জামান উদ্দিন। কলেজে শিক্ষাদান তাদের কাজ হলেও তারা অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম বসিয়ে এলাকার যুবসমাজকে ফেলেছেন হুমকির মুখে। তাদের ফাঁদে পড়ে যুবক থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ হয়েছেন নিঃস্ব।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে প্রভাষক নুরুল ইসলাম ওরফে লালন মাস্টার ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে ২০২২ সালে এলাকায় এসে জামান উদ্দিন ওরফে জামান মাস্টারের সঙ্গে মিলে কোমরপুর বাজারে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা খোলেন। এর চার মাস পর তারা মেহেরপুর জেলায় অনলাইন জুয়ার প্রথম এজেন্টশিপ আনেন মুকুল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে। সে সময় নুরুল ও জামান নিজেদের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে মুকুলকে এজেন্ট সিম ও জুয়ার ব্যবসা পরিচালনার টাকা দেন। এক পর্যায়ে জুয়া খেলে মুকুল টাকা নষ্ট করতে শুরু করলে জামান ও নুরুল মাস্টার তার মাধ্যমে অনলাইন জুয়া পরিচালনার জন্য আলাদা কয়েকটি চ্যানেল বের করে নেন। জামান মাস্টারের চ্যানেলের নাম ‘জামান নগদ’, ‘জামান রকেট’ ও ‘জামান উপায়’। আর নুরুল ওরফে লালন মাস্টারের চ্যানেলের নাম ‘ড্রাগন বিকাশ’, ‘ড্রাগন নগদ’, ‘ড্রাগন রকেট’ ও ‘মেলবেট চ্যানেল’। এর পর থেকে জামান ও নুরুল যৌথভাবে অনলাইন জুয়ার ব্যবসা চালাতে থাকেন। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

অনলাইন জুয়ার পাশাপাশি নুরুল মাস্টার আদম ব্যবসাতেও হাত পাকান। এলাকায় অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে না পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মেহেরপুর জেলার কয়েকজন তরুণকে রাশিয়ায় নিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছিল একটি চক্র। এই চক্রে নুরুল মাস্টারের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

মুজিবনগর আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ওমর খৈয়াম উষা বলেন, ‘এর আগে দুজনের বিরুদ্ধে অনলাইন জুয়ায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলার খবর পেয়ে তাদের শোকজ করেছিলাম। তারা শোকজের উত্তর দিয়েছিলেন। এরপর আমাদের কিছুই করার ছিল না। কলেজের কাজ শেষে বাইরে তারা কী করেন, সেটি আমার জানার বা দেখার বিষয় নয়। তবে বিদেশে পাঠানোর নাম করে অনেকের কাছ থেকে নুরুল মাস্টার টাকা নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা আমার কলেজে এসে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি যতটুকু জানি কিছু জমি বিক্রি করে নুরুল সেই টাকা পরিশোধ করেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বর্তমানে আমি খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। সিটি ব্যাংকের একটি এজেন্ট আউটলেট ছাড়া আমার এখন আর কিছুই নেই। জমি-বাড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি। দোয়া করবেন যেন আমার তিনটি মেয়ে নিয়ে কোনো রকমে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি।’

বিদেশে লোক পাঠানোর নামে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটা ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। উনার ওপর বিশ্বাস করে কীভাবে যে কী করেছিলাম! এখন আমি সম্পূর্ণ নিঃস্ব।’ তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে লোক পাঠানোর অভিযোগের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

অন্য অভিযুক্ত জামান উদ্দিন বলেন, ‘মেহেরপুর জেলায় আমি প্রথম ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট পয়েন্ট নিয়ে এসেছি। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই চাকরি করে। কিছু জমি জায়গা কিনেছি। অল্প সময়ের মধ্যে আমার উন্নতি দেখে কোমরপুর গ্রামের অনেকেই হিংসায় আমার নামে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের কথা শুনে আপনি আমার বিরুদ্ধে লিখলে সেটি সঠিক হবে না।’

জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, ‘আপনি যেটা বলছেন সেটা অভিযোগ মাত্র, প্রমাণিত কিছু না। এজন্য এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। তবে বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে খতিয়ে দেখতে বলব।’

মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিনুর রহমান খান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। তদন্ত চলছে। অনলাইন জুয়ায় সম্পৃক্ত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT