রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হত্যার পর লাশ ঘিরে প্রকাশ্যে উল্লাস

প্রকাশিত : ০৮:৪০ পূর্বাহ্ণ, ১১ জুলাই ২০২৫ শুক্রবার ৫৭ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

বুধবার দিন গড়িয়ে তখন সন্ধ্যার কাছাকাছি। পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল কম্পাউন্ডে তখন চিরচেনা ভিড়ে ভাটা পড়েছে। রোগীর স্বজনদের আনাগোনাও কমেছে। ঠিক এমন সময়ই হাসপাতাল কম্পাউন্ডে শুরু হয় এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড। চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে ধরে এনে সেখানে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে কম্পাউন্ডের বাইরের সড়কে এনে শত শত মানুষের সামনে চলে উন্মত্ততা। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই হত্যাকাণ্ডস্থলের একটি সিসিটিভি ফুটেজ কাছে আসে। তাতে দেখা যায়, লাশ ঘিরে সন্ত্রাসীদের নৃশংস আচরণ।

ঘটনার সময় অদূরেই চলছিল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা, নিরাপত্তায় ছিলেন আনসার ক্যাম্পের সদস্যরাও। তবে এমন সন্ত্রাস আতঙ্কে কেউ এগিয়ে আসেনি। যখন তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়, তখন চিকিৎসক জানান, আগেই মারা গেছেন সোহাগ।

গতকাল প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছিলেন, শুধু হত্যা করেই থেমে থাকেনি সন্ত্রাসীরা। সোহাগের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও লাশের ওপর চলতে থাকে নৃশংসতা। রক্তাক্ত নিথর দেহটি রাস্তার মাঝখানে ফেলে লাশের ওপর দাঁড়িয়ে চলে ভয়াবহ উন্মত্ত উল্লাস। একজন নয়, একাধিক যুবক লাশের নাক-মুখে এবং বুকের ওপর একের পর এক আঘাত করে যেতে থাকে।

ওই এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আতঙ্কিত অনেক লোকজন ভিড় করে তাকিয়ে কী যেন একটা ঘটনা দেখছেন! কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, সোহাগের অর্ধবিবস্ত্র নিথর দেহ দুই তরুণ টেনেহিঁচড়ে রাস্তার মাঝখানে নিয়ে আসে। ওই সময় আশপাশে শত শত লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি।

ভিডিওতে দেখা যায়, নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসা লোকদের মধ্যে একজন মোবাইলে কথা বলছিল। ওই সময় দুই হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে থাকা সোহাগের রক্তাক্ত মুখের ওপর কিলঘুষি দিতে থাকে আরেকজন। অন্য এক তরুণ দৌড়ে এসে পড়ে থাকা নিথর দেহের বুকের ওপর লাফাচ্ছিল! মানুষজনও দেখছিল এমন ভয়ংকর দৃশ্য।

প্রকাশ্যে কেন এই নৃশংসতা: পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, নিহত সোহাগ মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙাড়ি ব্যবসার সঙ্গে পুরোনো বৈদ্যুতিক কেবল কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। তার দোকানের নাম সোহানা মেটাল। ওই এলাকায় বিদ্যুতের তামার তার ও সাদা তারের ব্যবসার একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণ ছিল সোহাগের কাছে। তবে নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া ছিল মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু নামে আরও দুজন। তারা অনেকটা ওই অবৈধ বাণিজ্যের ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিল। তা না হলে নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল তারা। এর জেরেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেই দ্বন্দ্বে ঘটে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ঘটনার দিন সোহাগকে তার দোকান থেকে ডেকে আনা হয়েছিল।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহত সোহাগ ও হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মহিন, টিটুসহ জড়িত অন্যরাও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিত এবং স্থানীয়ভাবেও তাদের সবাই যুবদলের নেতা বলে জানে। তবে সংগঠনে তাদের কোনো পদ রয়েছে কি না, পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী, আনিসুর রহমান হাওলাদারসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনার মূলহোতা মহিনকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরেক আসামিকে যৌথ বাহিনী আটক করেছে।

নিহতের ভাগ্নি মীম আক্তার জানান, তার মামার পরিচিত লোকজনই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার মামা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং মিটফোর্ড এলাকায় ব্যবসা করতেন। কিন্তু টিটু, মহিনসহ স্থানীয় আরও কয়েকজন এই ব্যবসায় ভাগ বসাতে চাচ্ছিল। ওই প্রতিপক্ষের লোকজনও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

তিনি জানান, খুনিরা সোহাগের কাছে ব্যবসার ৫০ শতাংশ অংশীদার দাবি করেছিল। নইলে লাভের ৫০ শতাংশ চাঁদা দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল। এ নিয়ে ওই গ্রুপটি কয়েকদিন আগে তার মামাকে হত্যার হুমকিও দেয় এবং তিন দিন তার দোকান খুলতে দেয়নি।

নিহতের অন্য এক স্বজন জানান, বুধবার দুপুরে টিটু সোহাগের বাসায় খাওয়া-দাওয়া করে। ভাত খাওয়ার সময় টিটু সোহাগকে বলে সব মিটমাট করে ফেলবে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই যেন ব্যবসা করা যায়, সেজন্য সবার সঙ্গে বসে একবার কথা বললেই হবে। এই কথা বলে টিটু সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করা ৪০ থেকে ৫০ জন সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনের এডিসি আমিনুল কবির তরফদার বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক এবং ভয়াবহ। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। আসামিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT