বুধবার ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুর্বল ১২ ব্যাংক পেল ৫৩ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত : ০৬:৪১ পূর্বাহ্ণ, ২৯ জুন ২০২৫ রবিবার ৫৮ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ১২ ব্যাংককে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত গ্যারান্টি ও বিশেষ সুবিধার আওতায় এসব ঋণসহায়তা দেওয়া হয়। তবুও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

যদিও দুর্বল ব্যাংককে আর টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে না, দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিকবার এমনটাই বলেছিলেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। কিন্তু সেই কথায় অনড় থাকতে পারেননি তিনি। পূর্বসূরিদের মতো তিনিও টাকা ছাপিয়ে ‘ব্যাংক বাঁচানোর’ পথ অনুসরণ করে চলেছেন।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংককে সহায়তার এই পথটা ঠিক নয়। এতে ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার করা তো যাবেই না, উল্টো মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দুই কার্যদিবস আগেও পাঁচটি ব্যাংককে তিন হাজার কোটি ছাপানো টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংককে এক হাজার কোটি, এবি ব্যাংককে ৫০০ কোটি, বেসিক ব্যাংককে ৫০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংককে ৫০০ কোটি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়।

তীব্র তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংককে ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বিপরীতে ১০ শতাংশ সুদে ৯০ দিনের জন্য টাকা ছাপিয়ে পাঁচ ব্যাংককে এই ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত প্রচলিত জামানত না থাকায় ‘টাকা ছাপিয়ে’ এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়। এতে ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে, এমন আশা করা হয়েছিল। কিন্তু পর্ষদ পরিবর্তনেও তারল্য সংকটে ভুগছে এসব ব্যাংক। আমানতের টাকা তুলতে ব্যাংকগুলোর শাখায় শাখায় ধরনা দিচ্ছেন গ্রাহকরা, কিন্তু টাকা দিচ্ছে না ব্যাংক। এ অবস্থায় গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক জামানত ছাড়াই ৫৩ হাজার কোটি টাকা ধার দেয় ব্যাংকগুলোকে। এতেও গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও লুকোচুরি খেলছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। গত ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে গোপনে টাকা ছাপিয়ে ছয় দুর্বল ব্যাংককে সহায়তা করার কথা স্বীকার করেন।

তিনি সেদিন জানান, ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজন হলে আরও দেওয়া হবে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। মূলত গোপনে টাকা দেওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দেওয়া শুরু করেছে। প্রথম ধাপে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ধার পায় ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির মাধ্যমে ৯০ দিনের জন্য এক হাজার কোটি টাকা ধার পায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, এক্সিম, এনবিএল, এসআইবিএল। ধার দেয় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি, ডাচ্-বাংলা, বেঙ্গল ও রাষ্ট্র্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। আর গত নভেম্বরে ছয় হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা পায় দুর্বল ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এক হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এক হাজার কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৯২০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৭০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪০০ কোটি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২৯৫ কোটি টাকা পেয়েছে। এই তারল্য সহায়তা দিয়েছে সোনালী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ইস্টার্ন, শাহজালাল ইসলামী, সিটি, ব্র্যাক, পূবালী, ঢাকা ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক। এভাবে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে দুর্বল ব্যাংকগুলো।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT