জোট নয়, একাই নির্বাচন করতে চায় এনসিপি
প্রকাশিত : ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ শুক্রবার ২ বার পঠিত
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে দলের শীর্ষপর্যায় থেকে তৃণমূলে এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে জোট না হলেও নির্বাচনি কৌশল হিসাবে অভিন্ন এজেন্ডা এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
আসন্ন নির্বাচনে ঢাকাসহ অন্তত ১৭০টি আসনে দলীয় প্রার্থীর একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছে এনসিপি। এছাড়া নাহিদ, জারা, আদিব, সামান্থা, নিভাসহ শীর্ষপর্যায়ের বেশ কয়েক নেতা ঢাকা ও আশপাশের আসন থেকে লড়বেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব মঙ্গলবার দলীয় কার্যালয়ে বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোটে না গিয়ে স্বতন্ত্র অবস্থানে থাকার বিষয়ে বেশির ভাগ নেতাকর্মী মতামত দিয়েছেন। এছাড়া ‘আসন সমঝোতা’ কথাটির সঙ্গেও আমরা একমত নই। তবে অভিন্ন এজেন্ডা, ঐক্য এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এনসিপিকে নিজেদের নির্বাচনি জোটে পেতে চায় বিএনপি। তবে এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীও পিছিয়ে নেই। তারাও এনসিপিকে তাদের নির্বাচনি জোটে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য উভয় দল থেকে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা পর্দার আড়ালে এনসিপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জোট, মহাজোট, আসন ভাগাভাগি এবং প্রার্থী মনোনয়নের মাঝেও নির্বাচন নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার আচরণও প্রশ্নবিদ্ধ। উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে দুটি বড় রাজনৈতিক দলের কোনো একটিতে ভিড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ আছেন নিরাপদ প্রস্থানের চিন্তায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক যুগ্ম-আহ্বায়ক বলেন, নিজেদের সঙ্গে জোট না করলেও এনসিপি যাতে কোনোভাবেই জামায়াতের জোটে যোগ না দেয়, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বিএনপি। এজন্য দলটির পক্ষ থেকে ঢাকার বেশ কয়েকটি আসনসহ অন্তত ২০টিতে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে মন্ত্রিসভায় এনসিপির প্রতিনিধি রাখা হবে-এমন কথাও বলা হচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে এনসিপির পক্ষ থেকে এখনো চূড়ান্ত কিছু বলা হয়নি।
এনসিপিকে নির্বাচনি জোটে টানার আলোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দলটির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে জোটবদ্ধ হব কি হব না, তারা হবে কি হবে না-সেটি রাজনীতির মাঠে নির্ধারিত হবে। এসব বিষয়ে কোনো কিছুই আগে থেকে বলা যায় না।
এদিকে এনসিপিসহ আরও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিজেদের জোটে টানতে তৎপর জামায়াতে ইসলামী। তারাও এনসিপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলছে। এক্ষেত্রে জামায়াতের পক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এনসিপি নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনের ব্যাপারে দলীয় অবস্থানের কথা ইতোমধ্যে জামায়াতকেও জানিয়ে দিয়েছে এনসিপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বৃহস্পতিবার বলেন, এনসিপিকে নিয়ে জোট করব, এ কথা আমরা কখনোই বলিনি। তবে নানা ইস্যুতে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ তো আছেই।
এছাড়া অভিন্ন কর্মসূচিতে কিছু কিছু ইসলামি এবং সমমনা দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার অনানুষ্ঠানিক আলোচনা পরস্পরের মধ্যে হচ্ছে। তবে এখনো এটা চূড়ান্ত রূপ পায়নি। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার এখনো সময় বাকি আছে। এর মধ্যে আরও অনেক কিছু হবে।
সূত্র জানায়, জামায়াত, বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে এনসিপির রাজনৈতিক বোঝাপড়া নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না যাওয়া, গণভোট, উচ্চকক্ষে পিআর প্রভৃতি নিয়ে মতভিন্নতা দেখা দেয়। এর মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে এনসিপি। এছাড়া জামায়াতকে আক্রমণ করে দলের অন্যতম নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্য রীতিমতো আগুনে ঘি ঢালে। এরপরই দলগুলোর সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক বোঝাপাড়ার আলোচনা কিছুটা পিছিয়ে যায়।
এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের আহ্বায়ক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে একদফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, ডা. তাসনিম জারা, আরিফুল ইসলাম আদিব, সামান্থা শারমিনসহ দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা এবং আশপাশের কয়েকটি আসন থেকে লড়বেন।
এছাড়া দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর, সারজিস আলম পঞ্চগড়, হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এর বাইরে উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই ছাত্রনেতা পদত্যাগ করে এনসিপিতে যোগ দিলে তাদের জন্য দলীয় পদ এবং সংসদীয় আসনের বিষয়টিও চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ঢাকাসহ অন্তত ১৭০টি আসনে দলীয় প্রার্থীর একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছে এনসিপি। এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম রাজধানীর সবুজবাগ-মতিঝিল ও ডেমরা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯ অথবা ১১ আসন, দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদিব মিরপুর এলাকার একটি আসন থেকে, মেধাবী চিকিৎসক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ), রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে দলের যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হোসেন ও ঢাকা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী রাসেল আহম্মেদ, ঢাকা-৭ থেকে আরিফ ও সোহেল, ঢাকা-৪ ও ৫ থেকে এসএম শাহরিয়ার ও নিজাম উদ্দিন, ঢাকা-১৭ থেকে আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, উত্তরা থেকে দলের মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, ঢাকা-১৯ থেকে যুগ্ম সদস্য সচিব ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ঢাকা-২০ থেকে আসাদুল ইসলাম মুকুল, ঢাকা-৬ থেকে কেন্দ্রীয় সদস্য খান মো. মোরসালিন এবং ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন ও সিনিয়র যুগ্ম সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা।
দলীয় সূত্র বলছে, অভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলেও বিদ্যমান কয়েকটি বড় দলের চরিত্র বদল হয়নি। বিশেষ করে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশজুড়ে চর দখলের মতো করে হাট-মাঠ-ঘাট দখল করা হয়েছে। অথচ উত্তাল জুলাইয়ে কোটি জনতা রাজনৈতিক পরিবর্তনের আশায় রাজপথে নেমে এসেছিল। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল হাজারো তরুণ। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের এখনো স্বপ্ন সুদূরপরাহত।
দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী মনে করেন, জুলাইয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে এনসিপিকে আরও বহুদূর যেতে হবে। এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন বিদ্যমান রাজনৈতিক স্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়ানো। কিন্তু তা না করে এনসিপি যদি ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে বা বিদ্যমান দলগুলোর সঙ্গে ভিড়ে যায়, তবে দলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য। তাই যে কোনো মূল্যে এনসিপিকে স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে হবে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


 
















