কাল বেঁচে থাকব কিনা জানি না
প্রকাশিত : ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ, ২ নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার ১১৯ বার পঠিত
বিরামহীনভাবে চলছে ইসরাইলি আক্রমণ। বোমাবর্ষণ থামেনি মোটেও। গাজায় কোথাও নিরাপত্তা নেই। না উত্তরে, না দক্ষিণে। এই মুহূর্তে আমার মোবাইলের খুব সামান্য আলোয় বসে আছি। আর ভাবছি। আমার জন্য নয়। ভাবছি ছেলেমেয়েদের নিয়ে। আমি নিজের জন্য ভয় পাই না। সন্তানদের জন্য ভয় পাই। তাদের স্মৃতি আমাকে তাড়া করে।
ইসরাইলের হিংস্র হামলায় কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকব কিনা জানি না। আজ আমি আমার কনিষ্ঠ সন্তানের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তাকে জান্নাত সম্পর্কে, আমাদের বিশ্বাস ও ভাগ্য সম্পর্কে এবং আল্লাহর ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখতে বলেছি।
আমরা মৃত্যুর অনেক কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি। আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ৭ অক্টোবর যা ঘটেছে তা কোনো ফিলিস্তিনিদের জন্য বিস্ময়কর ছিল না। ৭৫ বছর ধরে আমরা অত্যধিক অপমান, যন্ত্রণা ও কষ্ট সহ্য করছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কারণ এটি আমাদের প্রকৃতি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা মুসলিম, শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমরা ধর্ম, বর্ণ বা ভাষা নির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে শান্তিতে থাকতে চাই। ইহুদিবাদীরা ইউরোপ ছেড়ে যাওয়ার আগে আমাদের দাদা-দাদি শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করছিলেন। তারা আমাদের কাছে বেড়াতে আসতেন। আমরা অনেক মজা করতাম।
১৯৪৮ সালে ইসরাইলিরা আমাদের জমি দখল করে। জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে, তথাকথিত ইসরাইলকে অবশ্যই ১৯৬৭ সালের পর দখলকৃত অঞ্চলগুলো ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল। তারা তো ছাড়েইনি। বরং আমাদের কাছ থেকে আরও নেওয়ার চেষ্টা করছে। পরিকল্পনা করেছে আমাদের ধ্বংস করার। আমরা আমাদের জমি এবং অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য সব উপায়ে চেষ্টা করেছি। শান্তিপূর্ণ আলোচনার চেষ্টা করেছি।
কিন্তু ইসরাইল দিন দিন আরও নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে। অথচ আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ৭ অক্টোবর কোনো একক বেসামরিক ব্যক্তিকে আক্রমণ করেনি। এমনই কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইহুদিবাদী বন্দিদের সঙ্গে সদয় আচরণ করা হয়েছে। এটাই আমাদের নীতি।
বর্তমানে ধ্বংসের আকার অকল্পনীয় হয়ে উঠেছে। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় যদি এটি একটি দুঃস্বপ্ন হতো। লাশ, বাস্তুচ্যুত আর ধ্বংসে একাকার হয়ে গেছে আমাদের ফিলিস্তিন। এখনো অনেক ড্রোন গাজা উপত্যকার আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বোমা বিস্ফোরণই একমাত্র সমস্যা নয়। আমরা ছোট-বড় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। মৌলিক চাহিদার দুর্ভোগ একটি ভয়াবহ সমস্যা।
বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানীয়জলের অভাব। টয়লেটে যাওয়াও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি জানেন, মুসলমান হিসাবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রধানত বিশুদ্ধ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি। পরিষ্কার পানির অভাবের কারণে আমি সব সময় টয়লেটে যেতে পারি না।
জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করায়, ডিস্যালিনেশন স্টেশনগুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি আমার ছেলেমেয়েদের খাবার সংরক্ষণ করতে এবং টয়লেটে যাওয়ার পরিমাণ কমাতে রোজা রাখা শুরু করেছি। রোজা রাখার আর একটা কারণ হলো, আমরা যখন রোজা রাখি তখন দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
যুদ্ধের আগে আমরা সবাই কাজে লিপ্ত ছিলাম। ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠতাম। নামাজ পড়তাম। তারপর আমার অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতাম। কাজে ব্যস্ত থাকতাম। ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরতাম। কিন্তু ইসরাইল আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। দৈন্দিন কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। আমি মনে করি, এই যুদ্ধ ছদ্মবেশী কষ্টের রূপে একটি ভালো খবরও বয়ে আনতে পারে।
আহমেদ আয়েশ আলনাজ্জার, মহাপরিচালক জনসংযোগ, শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়, গাজা, ফিলিস্তিন
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।