রবিবার ১৬ মার্চ ২০২৫, ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়

প্রকাশিত : ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রবিবার ১৭ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলনে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে দুই দেশ সম্মত হলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা অতীত অভিজ্ঞতা উল্লে­খ করে বলেন, এমন প্রতিশ্রুতি আগে অনেকবার দেওয়া হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন তেমন দেখা যায়নি। এবারও কি সিদ্ধান্তগুলো শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি কার্যকর হবে এ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করা, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান রোধের প্রতিশ্রুতি বিএসএফ’র আগেও বহুবার দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রতিশ্রুতির পরও সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলিতে ঝরে যাওয়া প্রাণের সংখ্যা কমেনি। এবার যে সাত সিদ্ধান্তে দুই দেশ সম্মত হয়েছে, তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, সেটাই দেখার বিষয়।

এ ব্যাপারে কূটনীতি বিশেষজ্ঞ সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিমা হায়দার শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ভারতের সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের সমসম্পর্ক ততটা ভালো নয়। ভারত ইতোপূর্বে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত তারা কোনো বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি নয়। এরই মধ্যে এই সীমান্ত সম্মেলনে যেসব প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তা আমার মনে হয় কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, অতীতে বিজিবি সীমান্ত ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিতে পারত না। তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। বিজিবি যে এখন আগের মতো নয়, তা ভারতীয় পক্ষ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। এবার বিজিবি বুক চিতিয়ে কথা বলেছে।

সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী স্পষ্টভাবেই সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীর কাছে তিনি এসব হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান। সংশ্লিষ্টদের মতে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের জটিল সমীকরণে এসব সিদ্ধান্ত কাগজ থেকে বাস্তবে নামবে কি-না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

এদিকে সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যা বন্ধে ‘অ-প্রাণঘাতী নীতি’ অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এখন দেখার বিষয়, প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কতদূর হয়, নাকি আবারও সীমান্তের এই সংকট অমীমাংসিতই থেকে যায়!

সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত

সীমান্ত হত্যা শূন্যকরণ : সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো, হত্যা ও মারধরের ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত।

গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় : সীমান্ত অপরাধ দমনে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে তাৎক্ষণিক ও আগাম গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বাড়ানোর উদ্যোগ।

সচেতনতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম : সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন।

হত্যার তদন্ত ও ব্যবস্থা : সীমান্তে যে কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।

১৫০ গজের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণে কঠোরতা : সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে স্থাপনা, কাঁটাতারের বেড়া বা প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো নির্মাণের আগে যৌথ পরিদর্শন ও আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালান প্রতিরোধ : ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, স্বর্ণ, জাল মুদ্রা ও অস্ত্র চোরাচালানসহ সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া।

মানব পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা : সীমান্ত পথে মানব পাচার বন্ধ করতে উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করবে এবং পাচারের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধারে সহযোগিতা বাড়াবে।

প্রসঙ্গত, ভারতের নয়াদিল্লিতে ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি- চার দিনব্যাপী এ সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিজিবি প্রধানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT