২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা অনশনে বসেছেন। শুক্রবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তারা এ কর্মসূচি শুরু করেন। দাবি মেনে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে শিক্ষক, শিক্ষক পরিবার ও শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তারা আরও বৃহৎ আন্দোলনের যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা স্থগিত হওয়া প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচির বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অধ্যক্ষ দেলাওয়ার বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত সুস্থভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। সরকার যদি অবস্থার পরিবর্তন না করে-তাহলে আমরা বাধ্য হয়ে আরও কঠোর আন্দোলনে যাব।
আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা এর আগে শুক্রবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ষষ্ঠ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সকাল ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে যান। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে আবার তারা শহীদ মিনারে ফিরে আসেন। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শনিবার (আজ) কালো পতাকা মিছিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দুই শতাধিক শিক্ষক জাতীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বাড়তে থাকে তাদের উপস্থিতি। সেখানে শিক্ষকদের ‘নেব না, নেব না, ৫০০ টাকা নেব না’, যাব না, যাব না, বাড়ি ফিরে যাব না’, ‘২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘বাংলার শিক্ষক, এক হও, এক হও’, ‘শিক্ষকদের সঙ্গে প্রহসন, মানি না মানি না’সহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শিক্ষকরা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি নিয়ে সরকার গড়িমসি করছে। ফলে টানা আন্দোলনে থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি ছাড়া তাদের অন্য কোনো পথ নেই। তারা দাবি আদায় করেই বাড়ি ফিরতে চান। দাবি না মানা ও সরকার প্রজ্ঞাপন না দেওয়ায় দুপুর ২টার পর শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষক নেতা দেলাওয়ার হোসেন বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাই। কিন্তু আমাদের যৌক্তিক দাবি বারবার উপেক্ষা করা হলে আমরা তিন দফা থেকে সরে এসে এক দফায় যেতে বাধ্য হব। তাই অবিলম্বে আমাদের তিন দফা দাবি মেনে সরকারকে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়ি ভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এতে সারা দেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেন। কিন্তু সেখানে পুলিশের লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ এবং ধাওয়া পালটা-ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যান তারা। পুলিশি বাধার মুখে তারা অবস্থান নেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর মঙ্গলবার ও বুধবার ‘মার্চ টু সচিবালয়’ এবং শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার আমন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যান ১৬ সদস্যের শিক্ষক প্রতিনিধিদল। বৈঠক থেকে বেরিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা তাদের সঙ্গে প্রহসনমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন। ঘোষণা দেওয়া হয় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। সেই ঘোষণার অংশ হিসাবে অনশন কর্মসূচির পর আজ শনিবার তারা কালো পতাকা মিছিল করবেন।