anusandhan24.com
নরওয়েতে জনপ্রিয় হচ্ছে ইসলাম
শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৫১ পূর্বাহ্ণ
anusandhan24.com anusandhan24.com :

উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ে। ইউরোপের অন্যতম স্থিতিশীল এবং উন্নত অর্থনীতির দেশ নরওয়ে। খ্রিষ্টধর্ম প্রধান নরওয়ের রয়েছে একটি ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস। নিশীথ সূর্যের দেশ হিসেবে খ্যাত নরওয়েতে খ্রিষ্টানরা সংখ্যাগুরু হলেও সেখানে মুসলিম জনসংখ্যা সম্প্রতি লক্ষণীয় হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি গবেষণা বিভাগ ও ওরিয়েন্টাল ভাষা বিভাগের গবেষণায় ইসলামের ক্রম বিকাশের এই চিত্র উঠে এসেছে। নরওয়েতে খ্রিষ্টধর্মের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হলো ইসলাম।

সিআইএ দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকের ২০২৪ সালের তথ্য মতে, নরওয়ের মোট জনসংখ্যা ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩ জন। তার মধ্যে মুসলিম ৩. ১ শতাংশ।

নরওয়ের ভৌগলিক অবস্থান, জনসংখ্যাও ধর্মীয় পরিচিতি
অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ নরওয়ে বিশ্বের এক নম্বর সুখী দেশের তালিকায় স্থান লাভ করেছে। নরওয়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান উপদ্বীপের পশ্চিম অর্ধেক এলাকা দখল করে আছে। দেশটির দুই তৃতীয়াংশ পাহাড়ি এলাকা। নরওয়ের উত্তরে আছে ব্যারেন্টস সাগর, পশ্চিমে নরওয়েজিয়ান সাগর এবং উত্তর সাগর, দক্ষিণে স্ক্যাগারাক প্রণালী অবস্থিত। দেশটির পূর্বে স্থল সীমানা আছে সুইডেন, রাশিয়া ও ফিনল্যান্ডের সাথে।

নরওয়ের আয়তন ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২০৭ বর্গকিলোমিটার। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী নরওয়ের জনসংখ্যা ৫৬ লাখ। জনসংখ্যার ৬১.৭ শতাংশ খ্রিষ্টান। আর ৩.৪ শতাংশ মুসলিম। এই হিসাব মতে নরওয়েতে ১ লাখ ৯০ হাজার মুসলিমের বাস। এদের বেশির ভাগই সুন্নি মুসলমান। মুসলিমদের অধিকাংশ অভিবাসী।

নরওয়েতে ইসলামের আগমন
১২৬০ সালে নরওয়েতে ইসলামের সূচনা হয়। তখন তিউনিসিয়ার সুলতান নরওয়ের রাজা হকন হকন্সসের জন্য মূল্যবান উপহারসামগ্রী পাঠিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে নরওয়ের সাথে তিউনিসিয়ার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তবে বিশ শতকের শেষার্ধ পর্যন্ত দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যার তেমন কোনো উপস্থিতি ছিলো না।

পরবর্তী সময়ে দেশটিতে ক্রমান্বয়ে মুসলমানদের আগমন ঘটে। ১৯৫৮ সালে নরওয়ের কিছু লোক ধর্মান্তরিত হলে অসলোতে মুসলমানদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী তৈরি হয়। ১৯৬০ সালের দিকে নরওয়েতে অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে শ্রমিক হিসেবে মুসলমানদের আগমন ঘটে। ১৯৬৭ সালে প্রথম শ্রমিক অভিবাসীরা আসে নরওয়েতে। তবে এই অভিবাসীর সংখ্যা ছিলো খুবই নগন্য।

ফলে দেখা যায়, ১৯৮০ সালে নরওয়েতে নিবন্ধিত সুসলিম ছিল মাত্র ১,০০৬ জন। ২০০৪ সালের এক হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০,৮৩৮ জনে। তবে বলা যায়, নরওয়েতে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ধীর গতিতে চলছিলো। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১১ সালে নরওয়েতে সরকারিভাবে নিবন্ধিত মুসলিমের সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ২১ হাজার ৯৫ জন।

পিউ সেন্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালে নরওয়েতে মুসলিম ছিলো জনসংখ্যার ৫.৭ শতাংশ। তারপরও ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার জনে। পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, নরওয়েতে মুসলিম জনসংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

নরওয়ের নিকট ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নরওয়ের সমাজে মুসলিমরা কখনো কখনো রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিলো। ২০১২ সালে নরওয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন হাদিয়া তাজিক নামীয় একজন মুসলিম তরুণী। তাঁকে নিয়োগ দেওয়ার পর নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টেলটেনবার্গ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নতুন মূল্যবোধ, শক্তি ও ভাবনাগুলোকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি নবায়ন ও ধারাবাহিকতার একটি মিশ্রণ।’

নরওয়েতে মসজিদ ও ইসলামিক সংগঠন
নরওয়েতে ছোট-বড় ২০০টি মসজিদ আছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানী অসলোতেই রয়েছে ৩০টি মসজিদ। এখানে ‘বায়তুন নাসের’ মসজিদটি সবচেয়ে বড়। নরওয়ের অসলোতে প্রথম মসজিদ স্থাপিত হয় ১৯৭৪ সালে। পাকিস্তানি অভিবাসীরা এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলো। অন্য একটি মসজিদ অসলোতে নির্মাণ করা হয় ১৯৭৪ সালে। এটি ‘ইসলামিক কালচারাল সেন্টার’ নামেও পরিচিত।

নরওয়ের মুসলমানদের স্বার্থ এবং ধর্মীয় বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য ১৯৯৩ সালে ‘নরওয়ে ইসলামিক কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানকার মুসলিম মহিলাদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘উর্তেহেগেন ফাউন্ডেশন।’