গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের জীবনযাপনও কঠিন হয়ে পড়েছে। গত ৩ দশকে আর কখনোই এত দীর্ঘসময় উচ্চ মূল্যস্ফীতি স্থায়ী হতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, জুলাইয়ে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগের মাসে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্যমতে, সম্প্রতি খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়েছে। তবে কয়েক বছর ধরে বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে, বাস্তবে সেটি আরও বেশি। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের আয় কমেছে। এতে আরও বেশি চাপে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। এ অবস্থায় গরিব মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের উৎপাদন, মজুত, সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে হঠাৎ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ভরা মৌসুমেও পণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে। এসব বিবেচনায় নিলেই বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর অদক্ষতা স্পষ্ট হয়। বর্তমানে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট বন্ধে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিজয়ী শিক্ষার্থীরা। আশা করা যায়, এর প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমবে। তবে বহু কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেও দাম বাড়ে। যে কোনো পণ্যের উৎপাদন পর্যায় থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত আসতে বহুবার হাতবদল হয়। যতবার হাতবদল হয়, ততবারই পণ্যের দাম বাড়ে।
বাজার তদারকি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাতের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। কাজেই সরষের ভেতরের ভূত তাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিনির্ভরতা কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজারে দীর্ঘদিন ধরে যা চলছে, তা অরাজকতার পর্যায়েই পড়ে। অসৎ ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে ইচ্ছামতো বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাজারের এ পরিস্থিতি আর চলতে দেওয়া যায় না। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসায় মানুষ আশা করছে বাজারে সব ধরনের কারসাজি বন্ধ হবে এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবে।
মোটকথা, যেভাবেই হোক, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সরকারকে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। চাঁদাবাজসহ অন্য যাদের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এদের বিরুদ্ধে যত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়, ততই মঙ্গল।