anusandhan24.com
শাহীনের ‘মিয়া ভাই’ ফাঁসতে পারেন
শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ
anusandhan24.com anusandhan24.com :

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এবার তদন্তের আওতায় আসছেন কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান সেলিমসহ আরও কিছু নেতা। আনার হত্যায় জড়িত চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহকে নতুন মোবাইল ও হাত খরচের জন্য টাকা পাঠানোর কথা ছিল সেলিমের। এই সেলিম আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আক্তারুজ্জামান শাহীনের বড় ভাই। এছাড়া শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে আনার হত্যার আগে ও পরে স্থানীয় বেশ কিছু হেভিওয়েট নেতার কথা হয়। গ্রেফতারের পর শিমুলের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব থেকে সম্প্রতি প্রতিবেদন পৌঁছেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে। এদিকে এমপি আনারের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে ডিবির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে কলকাতা সিআইডি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আনার হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুসহ মোট নয়জন।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যাকাণ্ডের পর শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে শাহীনের ফোনের একটি কথোপকথনে উঠে এসেছে মেয়র সেলিমের বিষয়টি। শাহীন শিমুলকে বলেছে, ফোনের যত তথ্য আছে সব ডিলিট করে ফোন ফেলে দে। না হলে ফোনের এমনকি হোয়াটসঅ্যাপের তথ্যও উদ্ধার করা যাবে। তোর ফোন কেনার টাকার ব্যবস্থা আমি করব। শাহীনের এমন কথার জবাবে শিমুল বলেন, ‘তুমি যা বলবা আমি তাই করব, যার সঙ্গে বলবা তার সঙ্গেই যোগাযোগ করব। তবে আমি তো চলতেও পারছি না, আমার তো টাকা দরকার।’

তখন শাহীন বলেন, ‘আমি তো রইছি আরেক জায়গায়। বড় ভাইকে বলে দিচ্ছি তোকে টাকা দেবে। কামরুলের মাধ্যমে পাঠায় দেবে। তুই বিকাশে নিয়ে নিবি।’

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শিমুলকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ বলছে এই বড় ভাই হলেন কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান সেলিম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র শহীদুজ্জামান সেলিম শুক্রবার বিকালেবলেন, ‘শাহীন কাউকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে আমাকে কিছু বলেনি। আমিও কাউকে কোনো টাকা দিইনি।’

এমপি আনার হত্যার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়র শহীদুজ্জামান সেলিমকে আটকের দাবি ওঠে। গত ২৬ মে কালীগঞ্জে এক অবস্থান কর্মসূচিতে শাহীনের বড় ভাই মেয়র সেলিমকে গ্রেফতারের দাবি জানান আনারের ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি বলেন, আক্তারুজ্জামান শাহীনের ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র। এর আগেও শাহীন বিভিন্ন মানুষকে মেরেছে। এতকিছুর পরও তার বড় ভাই কিছুই জানত না? একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে তার ভাইয়ের ব্যাপারে একটা পদক্ষেপ নিতে পারত না? ডরিন প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, তার ভাইকেও (মেয়র) আইনের আওতায় আনা হোক, জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এমপি আনার হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে কলকাতার সিআইডি। আর বাংলাদেশের ডিবি তদন্ত করছে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ মামলা। তদন্তের অংশ হিসাবে এমপি আনারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে ঢাকার ডিবির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে কলকাতা সিআইডি। চিঠিতে আনারের ছবি, হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে তার মুভমেন্ট হিস্ট্রি, পাসপোর্টের বিদেশ যাত্রার তথ্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাওয়া হয়েছে। এমন চিঠির পর আনারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট টিম। তবে এমপি আনার লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করেন এবং আনারের তিনটি পাসপোর্টই হত্যার পর সিয়ামের কাছে ছিল বলে জানিয়েছে ডিবি। উল্লেখ্য, সিয়াম কলকাতা সিআইডির কাছে গ্রেফতার রয়েছে।

ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আনার হত্যায় সরাসরি জড়িত সবাইকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন এই হত্যার পেছনে নানাভাবে ভূমিকা রাখা বেনিফিশিয়ারি গ্রুপকে তদন্তের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে দ্রুতই অভিযান চালাবে ডিবি।

সূত্র বলছে, আনার হত্যায় সর্বশেষ গ্রেফতার ফয়সাল ও মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলার তথ্য মেলেনি। তারা খুবই দরিদ্র, ফয়সাল ট্রাক ড্রাইভার আর মোস্তাফিজ অটো বা সিএনজিচালক। এদের মধ্যে মোস্তাফিজ ৪ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত। আর ফয়সালের কোনো ভিটাবাড়িই নেই, সেও ঋণগ্রস্ত। শিমুল ভূঁইয়া তাদের বলেছিল, তোমাদের যা কিছু দেনা আছে তা শোধ করে সারাজীবন চলার মতো টাকা দেবে কাজটি করলে। শিমুলের কথামতো সবকিছু করে তারা।

গত ৯ জুন কলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার একটি খাল থেকে কিছু হাড় উদ্ধার করে সিআইডি। ধারণা করা হয় হাড়গুলো এমপি আনারের। ডিবিতে রিমান্ডে থাকাকালে সেই হাড়গুলোর ছবি দেখানো হয় ফয়সালকে। ওই হাড়ের বিষয়ে ডিবিকে বিস্তারিত জানিয়েছে ফয়সাল। হাড়ের ছবি দেখে ফয়সাল বলে, বড় হাড়টি ঊরুর, এছাড়া হাতের দুটি, হাঁটুর নিচের দুটি ও অন্যগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশের। হাড় থেকে মাংস আলাদা করার পর খালে ফেলার আগে হাড়গুলোকে পলিথিনের প্যাকেটে ভরে স্কচটেপ দিয়ে পেঁচানো হয় বলেও জানায় ফয়সাল।

উল্লেখ্য, এমপি আনার ১২ মে ভারতে যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে ডরিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে নয়জনকে গ্রেফতার করেছে।