প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে কয়েক দিন ধরে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। রোববার থেকে সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। রেলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ফলে শিডিউল বিপর্যয় না থাকায় দুর্ভোগও নেই। সড়ক ও নৌপথে নির্বিঘেœ চলাচল করছে মানুষ। আজ সোমবার পোশাক কর্মীদের ছুটি হবে। একসঙ্গে লাখ লাখ মানুষ সড়কে নামবে। এজন্য আজ তীব্র যানজট হওয়ার শঙ্কা করছে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ। তবে তারা জানিয়েছেন, যানজট যেন অসহনীয় পর্যায়ে না যায়, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
এদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় গাবতলী টার্মিনাল হয়ে ছেড়ে যাওয়া গাড়ির চাপ কমেছে। যাত্রীর দেখা নেই বললেই চলে। পদ্মা সেতু হওয়ায় দৌলদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথেও গাড়ি ও যাত্রীর চাপ নেই। তেমন কোনো ভোগান্তি ছাড়া গাড়ি ও যাত্রী পারাপার করছে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর চাপ আগের মতো নেই। স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানজট নেই, নির্বিঘেœ মানুষ পারাপার হচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকটি ফ্লাইওভার ও ওভারপাস চালু হওয়ায় ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সাভার, ঢাকার সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী সড়কে রোববার নির্বিঘ্নে পরিবহণ চলাচল করেছে।
রোববার কমলাপুর রেল স্টেশনে ভিড় বাড়ে যাত্রীদের। সরেজমিন দুপুর ১২টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, ঘরমুখো যাত্রীদের সংখ্যা বেড়ে চলছে। অধিকাংশ ট্রেন ছাড়ার বেশ আগেই স্টেশনে পৌঁছেছে।
যাত্রীরা বলছেন, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি পাওয়ায় রাজধানীবাসীর বাড়ি ফেরার হার তুলনামূলক বেড়েছে। এমনিতেই স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। আর এবার লম্বা ছুটি পাওয়ায় আরও বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ছে।
সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছেÑআইজিপি : ঈদে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। রোববার বিকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কিনা তার খোঁজ নেন।
আইজিপি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশসহ বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিট একযোগে দায়িত্ব পালন করছে। ঈদের ছুটিতে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে জনসমাগম হয়। তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোলরুম), উপনিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করে নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যাতে যাত্রীরা নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।
যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, যাত্রাপথে সহযাত্রীদের দেওয়া কোনো খাবার বা পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। কারণ, এতে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকসহ কোনো বাহনে যাত্রী হয়ে উঠবেন না। সড়কে নসিমন করিমন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন যাতে চলাচল করতে না পারে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রোববার ঢাকা নদীবন্দরও পরিদর্শন করেছেন আইজিপি। এ সময় তিনি ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় নিজ ফ্ল্যাট বা বাড়ির সিসি ক্যামেরাগুলো সচল করে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
গুলিস্তানের সড়ক দখল দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে : গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকার সড়ক হকার ও বাসের দখলে থাকায় দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। ওই এলাকার সড়কজুড়ে গাড়ির স্ট্যান্ডসহ গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। ফলে দীর্ঘ যানজটে এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে যানবাহনগুলোকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে থাকতে হচ্ছে। এতে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা।
সরেজমিন জানা গেছে, রাজধানীর জিপিও মোড় থেকে সমগ্র গুলিস্তানে সড়ক বাসস্ট্যান্ড ও হকারদের দখলে রয়েছে। গোলাপ শাহ মাজার চত্বর থেকে স্টেডিয়ামের দিকের সড়ক দখল করে নানা পণ্যের দোকান বসানো হয়েছে। ওই দুই সড়কের ফুলবাড়িয়া ও কাপ্তানবাজার পর্যন্ত দোকান ও বাসস্ট্যান্ড বানিয়ে রাখায় ওই স্থানটুকু পার হতে যানবাহন দীর্ঘ সময় যানজটে পড়ে থাকছে।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি হয়ে বাবুবাজার সেতু ও আরমানী টোলা এলাকায় সড়কের দু’পাশে বাস-ট্রাক ও লেগুনা স্ট্যান্ড বানিয়ে রাখায় ওইসব স্থান দিয়ে পার হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। সড়কের ওপর এলোপাতাড়ি গাড়ি রেখে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি স্ট্যান্ডের সামনে রাস্তার পূর্বপাশে সুন্দরবন মার্কেটের চারপাশে ইলিশসহ কয়েকটি পরিবহণ কোম্পানি ও সদরঘাট-কদমতলীগামী লেগুনা স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা থেকে বঙ্গবাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা দিয়ে সড়কের দুই পাশে অসংখ্য বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। নোয়াখালীর হাতিয়াগামী যাত্রী আব্দুল আজিজ বলেন, সড়কে বিভিন্ন জায়গায় গণপরিবহণ থেমে থেমে যাত্রী নিচ্ছে। কুরিয়ার সার্ভিস পার্সেল উঠাচ্ছে। হকারের চাপে গাড়ি চলছে না। পল্টন এসে গাড়ি আর চলছিল না। বিরক্ত হয়ে জিরো পয়েন্ট নেমে যাই। সেখান থেকে বংশাল পর্যন্ত হেঁটে আসছি। এরপর রিকশা নিয়ে সদরঘাট এসেছি।
গুলিস্তানের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, গুলিস্তান এলাকায় বাসস্ট্যান্ড ও ফুটপাতের দোকানের কারণে যানজট লেগে থাকছে। ৩০ বছর ধরে একই রকম রয়েছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি।
যাত্রীর অপেক্ষায় গাবতলী টার্মিনাল : ঈদের আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকলেও রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীর দেখা নেই। যাত্রী না থাকায় কয়েকটি পরিবহণ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে টিকিট দিয়েও যাত্রী পাচ্ছে না। রোববার সরেজমিন গাবতলী ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। যাত্রী না থাকায় কয়েকটি কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে।
ঈগল পরিবহণের ম্যানেজার মো. শফিক বলেন, শনিবার যাত্রী কম থাকায় শিডিউল বাতিল করা হয়েছে। রোববারও একই অবস্থা। আগে ১০ দিন আগে বুকিং দিয়েও টিকিট পাওয়া যেত না। আগামী ২ দিন যাত্রীর চাপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন বিশ্বাস বলেন, আমরা তিন বন্ধু একসঙ্গে বাড়ি যাব। এসেই টিকিট পেয়েছি। লোকজনের ভিড় নেই।