মাঠ প্রশাসন চাঙা রাখা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করা, তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের নীতি-দর্শন বাস্তবায়ন, সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সরাসরি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিবছর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জেলা প্রশাসক সম্মেলনের আয়োজন করে। এবারের ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ডিসিদের অনুরোধ করেছেন, তারা যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করেন, বিশেষ করে রোজার আগে তারা যেন পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহযোগিতা করেন।
লক্ষ করা যাচ্ছে, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভোক্তাদের যখন দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তখনো নানা অজুহাতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতিরিক্ত মুনাফা করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে। মূলত বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেপরোয়া মুনাফা করার সুযোগ পায়। জীবনযাত্রায় বাড়তি ব্যয়ের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষ। সিন্ডিকেটের সদস্যরা কখনো কখনো তৈরি করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট।
এ সিন্ডিকেট ভাঙা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। বহুদিন ধরেই ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন, সড়কপথে চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাবে ভোক্তা পর্যায়েও দাম বাড়ে। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে এমন অনেক সংকট সহজে নিরসন করা না গেলেও বিভিন্ন পর্যায়ের চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধ করা তুলনামূলক সহজ। কাজেই চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। পরিবহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবৈধ চাঁদাবাজির সঙ্গে কেবল বিশেষ কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীই জড়িত, বিষয়টি এমন নয়; চাঁদাবাজির শেকড় দেশজুড়ে বিস্তৃত। কাজেই স্থানীয় পর্যায়ে পরিবহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধে জেলা প্রশাসকরা কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে তা নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমরা লক্ষ করেছি, সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। লক্ষ করা গেছে, যখন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়, তখন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা আরও বেড়ে যায়, সংশ্লিষ্ট পণ্যের সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় পর্যায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশা।