
anusandhan24.com :
এমনিতেই নানা কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে দেশের বনজ সম্পদ। এর মধ্যেও দেশের ৫৯ দশমিক ৩১ শতাংশ পরিবার রান্নার প্রধান জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করছে কাঠ, খড়ি বা লাকড়ি।
এ রকম পরিবার রয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৭৭ হাজার ৯৯১টি। দেশে মোট ৪ কোটি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৮টি খানা (পরিবার) রয়েছে। সবচেয়ে বেশি কাঠ পুড়ছে বরিশাল বিভাগে এবং সবচেয়ে কম ঢাকা বিভাগে। এ অবস্থায় টেকসই জ্বালানি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক প্রকাশিত ‘জনশুমারি ও গৃহগণনার ন্যাশনাল রিপোর্ট-১ ভলিউম’-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১-এর প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন শনিবার বলেন, এসব তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মাঠ পর্যায় থেকে তুলে আনা হয়েছে। দেশের বনজ সম্পদের কতটা শুধু রান্নার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে সেটি দেখা হয়েছে।
এর বিপরীতে টেকসই জ্বালানির কতটা ব্যবহার করা হচ্ছে সেটিও উঠে এসেছে। উন্নত বিশ্বে রান্নার জন্য কী ধরনের জ্বালানি বেশি ব্যবহার হচ্ছে সেসব তথ্য থাকলে নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে।
এই প্রতিবেদনে নবায়নযেগ্য জ্বালানি এবং বায়ো ফুয়েল কতটা ব্যবহার হচ্ছে সেটির তথ্য আছে। এগুলোর ব্যবহার এখনও অনেক কম। প্রকৃতি বাঁচাতে আমাদের বনজ সম্পদ রক্ষা করতে হবে।
প্রতিবেদনে পরিবারের রান্নার জ্বালানির প্রধান উৎস সংক্রান্ত উপাত্তে দেখা যায়, যেসব উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে মানুষ রান্নার কাজে ব্যবহার করে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে কাঠ। এক্ষেত্রে পল্লি এলাকার পরিবারগুলোর ৭০ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং শহরের পরিবারগুলোর ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ রান্নার জন্য কাঠ ব্যবহার করে।
এ ছাড়া জ্বালানি হিসাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হচ্ছে সাপ্লাই গ্যাস। এক্ষেত্রে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ পরিবার এই গ্যাসে রান্না করে। পল্লি এলাকায় গ্যাস ব্যবহার করে ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং শহর এলাকার ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ পরিবার।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সম্পাদক সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, রান্নায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহার হওয়ায় একদিকে যেমন বনজ সম্পদ নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ দূষণ হচ্ছে। এজন্য সরকার উন্নত চুলা দেওয়ার কাজ করছে। এই কাজের আরও বিস্তার ঘটানো দরকার।
পাশাপাশি রান্নার জ্বালানি হিসাবে কাঠের ওপর নির্ভরতা কমাতে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল ব্যবহার করা প্রয়োজন। গ্রামের বাড়িগুলোতে প্রচুর রোদ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভাগভিত্তিক শতাংশের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি বরিশালের ৮৫ দশমিক ১০ শতাংশ পরিবার কাঠ ব্যবহার করছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৩৯ দশমিক ১১ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৬৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ,ময়মনসিংহ বিভাগে ৭৫ দশমিক ০৬ শতাংশ, রাজশাহী ৫৫ দশমিক ১২ শতাংশ, রংপুরে ৭১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ৬৯ দশমিক ৩২ শতাংশ কাঠ ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদনের পরিবারভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে বেশি পরিবার অর্থাৎ ৪৬ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪টি খানা বা পরিবারে রান্নার প্রধান জ্বালানি উৎস কাঠ। এছাড়া রান্নায় কাঠ ব্যবহার করে বরিশাল বিভাগের ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৬৪৭টি পরিবার।
ঢাকা বিভাগে ৪৩ লাখ ৭২ হাজার ৮০৯টি, খুলনা বিভাগে ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৪২৮টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫৯টি, রাজশাহীতে ২৯ লাখ ৪১ হাজার ৮৫১টি, রংপুরে ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৮টি এবং সিলেট বিভাগে ১৫ লাখ ২৫ হাজার ৮৭৫টি পরিবার রান্নার জ্বালানি হিসাবে প্রধানত কাঠ ব্যবহার করে।
এসব তথ্যের প্রয়েজনীয়তা বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, জনশুমারি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পরিকল্পনাবিদ, শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা নানা উন্নয়ন ও তাত্ত্বিক গবেষণায় ব্যবহার করতে পারবেন।
এছাড়া জনশুমারি থেকে প্রাপ্ত তথ্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনি এলাকা নির্ধারণ, সরকারি চাকরিতে কোটা নির্ধারণ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সুবিধাভোগী নির্বাচনসহ সম্পদের সুষম বণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এই শুমারি থেকে পাওয়া সব তথ্য-উপাত্তই সরকারের সব ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরিতে বেঞ্চমার্ক হিসাবে কাজ করবে।