দেশের সবচেয়ে বড় দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, অদৃশ্য শক্তির ইশারায় জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল, নিয়ন্ত্রিত প্রচারাভিযানসহ সব ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন হস্তক্ষেপের মধ্যে পাকিস্তানে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এসব কিছু সত্ত্বেও ভোটদান তুলনামূলক স্বচ্ছ হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল জয় পেতে পারে বলে তাঁর কর্মীরা বিশ্বাস করেন।
এমনটা ঘটলে যদিও তা প্রায় অসম্ভব, দেশটি আবার গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করতে পারে। অন্যদিকে, সেনাবাহিনী ভোটের ফলাফলে নগ্ন হস্তক্ষেপ করলে নির্বাচনের পর রাজনীতিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও পোক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দুরবস্থায় থাকা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম জনবহুল দেশটিতে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে। সন্ত্রাসকবলিত দেশটিতে ভোটের আগের দিন জোড়া বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ২৮ জন নিহত হন।
নির্বাচনে ইমরান ও আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। আজ দেশটির চারটি প্রদেশের আইনসভার নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। একজন ভোটার দুটি করে ভোট দেবেন– একটি জাতীয় আইনসভার জন্য, অপরটি প্রাদেশিক পরিষদে। এবার ভোটার ১২ কোটি ৮০ লাখ।
এ নির্বাচনের ফোকাস শুধু দুই বছরের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করার দিকে নয়, বরং একটি নতুন স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠাও লক্ষ্য। যা ২৪ কোটির বেশি মানুষের দেশটিতে সংকটে থাকা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে পারে।
দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। মুদ্রাস্ফীতি ৩০ শতাংশেরও বেশি। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত একটি জরিপ অনুসারে, প্রায় ৭০ শতাংশ পাকিস্তানি বিশ্বাস করে, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
নির্বাচনে নওয়াজের দল পিএমএল-এন এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি অবাধে প্রচারণা চালাতে পারলেও ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাদের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার এবং প্রার্থীদের আত্মীয়স্বজনকেও কারাবন্দি করা হয়েছে।
এ অবস্থায় সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউনের মধ্যে ইমরান খানের দল প্রযুক্তিচালিত, অপ্রচলিত প্রচারণার কৌশল অবলম্বন করছে। দলটির সমর্থকরা বলছেন, তারা দলের প্রার্থীদের কৌশলে ভোট দেবেন। অন্যান্য দলের ব্যাজ বুকে ধারণ করলেও তাদের হৃদয়ে সাবেক ক্রিকেট তারকা।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রভাব রাজনীতিতে গভীর। তারা দেশটির ৭৭ বছরের ইতিহাসের তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি শাসন করেছে। বাকি বেশির ভাগ সময় পর্দার আড়ালে থেকে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেছে।
এবারের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ২৬৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে ৫ হাজার ১২১ প্রার্থী। পিটিআই পার্টিকে তার নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট ব্যবহার করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাই দলের প্রার্থীরা এবার স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বোমা বিস্ফোরণে নিহত ২৮
ভোট গ্রহণ শুরুর ২৪ ঘণ্টার কম সময় আগে বুধবার বেলুচিস্তান প্রদেশে দুটি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির ইংরেজি দৈনিক ডন। এ ঘটনা বৃহস্পতিবার ভোটের দিনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে গত কয়েক মাসে পাকিস্তানজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে।
এদিন প্রথম হামলাটি হয় বেলুচিস্তান প্রদেশের পিশিন জেলায় একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি হয় আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী কিল্লা সাইফুল্লাহ শহরে প্রাদেশিক রাজনৈতিক দল জামিয়াত উলেমা ইসলামের (জেইউআই) একটি কার্যালয়ের কাছে।
প্রথম হামলায় ১৪ জন নিহত এবং প্রায় ৩০ জন আহত হন। কিল্লা সাইফুল্লাহর বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত দুটি হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি।