কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শুক্রবার পরাজিত নৌকা সমর্থক দুই ভাই আলতাফ ও জিয়াকে হাতুড়িপেটা করে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা। এ সময় তাদের বাড়িঘরেও হামলা-ভাঙচুর করা হয়। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক দম্পতি ইমান আলী ও কাজল রেখার ওপর রড দিয়ে হামলা হয়েছে। এ সময় ইমান আলীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার। কুমিল্লায় নৌকার পরাজিত প্রার্থী সাবেক সংসদ-সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরী অভিযোগ করেন, তার বহু কর্মী-সমর্থক বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গাজীপুরে নৌকার পরাজয়ের পর থেকে কর্মী-সমর্থকদের মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর-আগুন ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) : আহত আলতাফ ও জিয়ার দাদি গোলাপি বেগম জানান, তাদের বাড়ি কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের বেলঘড়িয়া জেলেপাড়ায়। নির্বাচনে নৌকা হেরে যাওয়ার পর থেকে ট্রাকের সমর্থকরা তাদের হুমকি দিচ্ছিল। শুক্রবার ভোর ৬টায় ট্রাকের সমর্থক স্থানীয় খালেক মেম্বারের ছেলে রিপন ও শিপনের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন তাদের বাড়ি ভাঙচুর করে। পরে ঘরে ঢুকে তার দুই নাতি জিয়া ও আলতাফকে হাতুড়ি দিয়ে পেটায়। এ সময় বাইরে গুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানান তিনি। আহত জিয়া ও আলতাফকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আলতাফ জানান, হামলাকারীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার দুই পা এবং তার ভাই জিয়ার এক হাত ভেঙে দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ইমান আলী ও তার স্ত্রী কাজল রেখা স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার ঈগল প্রতীকের কর্মী। ভোটের আগে থেকে একই এলাকার কয়েকজন তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হলে ওই আসামিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাজল রেখা ও তার স্বামী স্থানীয় আলুকদিয়া বাজারে নিজ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রি শেষে হিসাব-নিকাশ করছিলেন। এ সময় দলবদ্ধভাবে এসে কয়েকজন ইমান আলীর ওপর হামলা করে। রডের আঘাতে তাকে রক্তাক্ত করা হয়। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্যাশে থাকা টাকা ও কাজল রেখার গলার সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লা : শুক্রবার বিকালে কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) আসনের নৌকার প্রার্থী সাবেক সংসদ-সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরী অভিযোগ করেন, তার পরাজয়ের পর থেকে নৌকার বহু কর্মী-সমর্থক এখন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলা-ভাঙচুর, হুমকি-ধমকির কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচনে নানা অসঙ্গতি ও প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতার কারণে ১৯৫১ ভোটে নৌকা পরাজিত হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে স্বতন্ত্র এমপি অধ্যাপক আব্দুল মজিদ বলেন, আমার কোনো কর্মী-সমর্থক এসব ঘটনায় জড়িত নয়। কেউ বিশৃঙ্খলা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি এসব বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। এ ধরনের ঘটনায় কেউ জড়িত হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) : গাজীপুর-৫ আসনে নৌকার পরাজয়ের পর কর্মী-সমর্থকদের মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার নৌকার প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির কাছে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলেন, ‘আমাদের বাঁচান, নৌকার সমর্থন করাই কি আমাদের অপরাধ।’ এ বিষয়ে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, বিজয়ী হয়ে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এরকম ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন এই প্রতিবেদকে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেলকুচি-চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) : সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচনের দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সমর্থকের হামলায় নৌকার সমর্থক আব্দুল হাকিম গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি রাজাপুর ইউনিয়নের সমেশপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে। এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি মজনু আকন্দকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।