
anusandhan24.com :
আর কত চোখের জল ঝরালে শান্ত হবে স্বামী সাজ্জাদ হোসেন চপলের হৃদয়। আর কত আহাজারি করলে পাঁচ মাসের শিশু আরফান ফিরে পাবে তার মাকে। এমন প্রশ্নের উত্তর নেই কারও কাছে।
বাবার মৃত্যুর খবর শুনে ১০ দিন আগে ঢাকা থেকে রাজবাড়ীতে গিয়েছিলেন সাজ্জাদের স্ত্রী এলিনা ইয়াসমিন। সঙ্গে ৫ মাসের ছেলে শিশু আরফান। শুক্রবার বিকালে বেনাপোল এক্সপ্রেসে ঢাকায় ফিরছিলেন এলিনা। ছেলে আরফানসহ সঙ্গে ছিলেন এলিনার ভাই-ভাবী।
আগুন লাগার পর এলিনা আরফানকে তার মামা মিঠুর কাছে তুলে দেন। তখন আরফানকে নিয়ে মামা-মামি বের হতে পারলেও আটকে পড়েন এলিনা। নিশ্চিত মৃত্যু হয়েছে জানলেও তার লাশ মিলছে না।
এলিনার স্বামীর বড় ভাই জাফরুল সাদিক জানান, ছোট ভাই সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন মিরপুরে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। গত সপ্তাহে তার শ্বশুর মারা গেলে স্ত্রী-সন্তানসহ রাজবাড়ীতে যান।
দুদিন পর সাজ্জাদ ঢাকায় ফিরলেও স্ত্রী-সন্তান রাজবাড়ীতে ছিল। শুক্রবার দুপুরে রাজবাড়ী থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেসের এসি ‘চ’ বগিতে করে এলিনা ইয়াসমিন, শিশু আরফান, এলিনার ছোট ভাই মিঠু আর তার স্ত্রী ফিরছিলেন। ট্রেনটি গেন্ডারিয়া স্টেশন পার হলে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় তাদের বগি।
এলিনার কোলে থাকা আরফানকে ছোট ভাই মিঠু ও তার স্ত্রী নিয়ে বের হলেও এলিনা বের হতে পারেনি। ট্রেনের ভেতরে ঠেলাঠেলির মধ্যে পড়ে সেখানে আগুনে পুড়ে মারা যান। জাফরুল সাদিক জানান, ছোট্ট আরফান এখন তার মামা মিঠুর ফার্মগেটের বাসায় আছে।
তিনি জানান, শিশুটি মায়ের দুধ ছাড়া আর কোনো কিছু খায় না। এখন বাসায় যাওয়ার পর থেকে মাকে না দেখে কান্না করছে। তিনি বলেন, মা এলিনার মরদেহ দেখে চেনার উপায় নেই। পুলিশ বলছে পরে লাশ শনাক্ত করে দেওয়া হবে।
এলিনা স্বামী ও সন্তান নিয়ে রাজধানীর মিরপুরের ৬০ ফুট রোডের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। এলিনার ফুপু শাহনাজ পারভীন ঢামেক হাসপাতালে এ প্রতিবেদককে বলছিলেন, আমার বিশ্বাস হয় না এলিনা বেঁচে নেই।
এলিনার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন চপল জানান, ছেলে আরফানের হৃদযন্ত্রে ছিদ্র আছে। তাই চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ছেলেকে নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ও সচেতন থাকতেন এলিনা।
তিনি বলেন, স্ত্রী সন্তানকে আনার জন্য শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষা করছিলাম। এলিনার মোবাইলে কল দেওয়ার পর সে রিসিভ করে। কিন্তু কথা বলতে পারেনি। লাইনটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে জানতে পারি ট্রেনে আগুন লেগেছে। সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পাসপোর্ট হয়েছে। ভিসার জন্য ছেলের মেডিকেলের কাগজপত্র তৈরি করছিলাম। ট্রেনে এলিনার কাছে থাকা ব্যাগে ছেলের চিকিৎসার অনেক কাগজপত্র ছিল।
তিনি জানান, এলিনাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না। মর্গে যে চারটি লাশ রয়েছে, সেটা এতটাই পোড়া যে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। লাশ শনাক্তের জন্য তিনি ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেছেন।
মরদেহ নিতে আবেদনকারীদের একজন ডা. দিবাকর চৌধুরী। তিনি জানান, তার বোন চন্দ্রিমা চৌধুরী রাজবাড়ী থেকে শুক্রবার বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকায় আসছিলেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।
দিবাকর আরও জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও আশপাশের হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে কোথাও বোনের সন্ধান মেলেনি। সৌমির বাসা ফার্মগেট এলাকার পশ্চিম রাজাবাজারে। এছাড়া রাজবাড়ীর আব্দুল হক ছেলে আবু তালহার (২৪) লাশের দাবি করছেন।
তার ধারণা পুড়ে যাওয়া মরদেহের মধ্যে তার ছেল আবু তালহা রয়েছে। আবু তালহা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। সে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় আসছিল। এছাড়া গেন্ডারিয়ার নারিন্দা এলাকার বাসিন্দা নাতাশা জেসমিনের মরদেহের দাবি করে আবেদন করেছেন তার স্বজনরা। রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে।