আজ (রোববার) বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ঢাকা-১ আসনে দোহার-নবাবগঞ্জের পাঁচ লাখ ভোটার প্রস্তুত।
ভোটকে কেন্দ্র করে নানা গুজবও চলছে এই আসনে। তবে কোনো গুজবে কান না দিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। ভোটাররা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন।
ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের উৎসব ও আমেজ বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের অভিযোগ পেলে প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং ঢাকা-১ আসনের লাঙ্গলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম শনিবার সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, নবাবগঞ্জ ও দোহারবাসীর কাছে আমি আহ্বান করছি আপনারা সকাল বেলায় প্রত্যেকে ভোটকেন্দ্রে আসবেন এবং নির্দ্বিধায় ভোট দেবেন। আপনার পছন্দের প্রার্থীকে আপনি ভোট দেবেন। দোহার-নবাবগঞ্জের উন্নয়নের জন্য আপনার ভোট অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান।
দোহার-নবাবগঞ্জে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। এসব কাজ সম্পন্ন করতে আপনারা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন। বিভিন্নভাবে শুনতে পারছি কেউ কেউ ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এসব বিষয়কে আপনারা আমলে নেবেন না। কিছু লোকই আছে যারা গুজব ছড়ায়। এসব গুজবে আপনারা কান দেবেন না। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ সুন্দর থাকবে এটি আমি আশা করব।
দোহার সার্কেল এসপি আশরাফুল আলম শনিবার বলেন, যে কোনো অভিযোগ আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। মাহমুদপুর পুলিশ ক্যাম্প আবাসন ভোটকেন্দ্রসহ যেসব ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে বার্তা আসছে, আমি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ টিম পাঠিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ এ বছর নাশকতা প্রতিরোধ করা। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আমরা তল্লাশি ব্যাপক বাড়িয়েছি। প্রতিটি সেন্টারে আমাদের মোবাইল টিমগুলো পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন। কেউ এখনো মামলা কিংবা থানায় অভিযোগ করছে না কিন্তু আমার হাতে মোবাইল কোর্ট আছে। নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন করলে আমরা তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব।
নির্বাচনি আচরণবিধি প্রসঙ্গে কেউ যদি নির্দিষ্টভাবে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারব এবং আমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে। সার্বিক পরিস্থিতি ইউএনওকে অবহিত করা হয়েছে। আপনারা নিশ্চিত থাকেন প্রশাসনের সহযোগিতার কোনো অভাব হবে না। আগামীকাল (আজ) ভোটের দিন পুলিশ সদস্য প্রবেশ করবে না। যদি ভেতর থেকে প্রিসাইডিং অফিসার তার কোনো অসুবিধার জন্য সহযোগিতা চান আমরা সঙ্গে সঙ্গে সহযোগিতা করব।
জানা গেছে, দোহার-নবাবগঞ্জে ১৮৪ কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৯৮টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে দোহারে ৩৯টি এবং নবাবগঞ্জে ৫৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। মোট ভোটার ৫ লাখ ৮ হাজার ১৬৭ জন।
লাঙ্গলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম ছাড়াও এ আসনে ভোট করছেন নৌকার প্রার্থী সালমান এফ রহমান। এছাড়া ছোট দলের ৫ জন প্রার্থী রয়েছেন।
সরেজমিন এবং নবাবগঞ্জের কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কোনো কোনো কেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন করা আছে। ভোটারদের গমন উপলক্ষ্যে মাঠে প্রস্তুতি কাজ চলছে। আনসার প্রহরাও দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রগুলোতে।
বক্সনগর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সেখানে মাঠ পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে আজকের জন্য। একই পরিবেশ দেখা গেছে পাঠানকান্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে মাহমুদপুর পুলিশ ক্যাম্প আবাসন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে। এখানে খোলা আকাশের নিচে বুথ নির্মাণ করা হয়েছে। এই কেন্দ্র অনেকটাই অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জালালপুর মডেল স্কুল মাঠে গিয়ে দেখা গেছে লাইন ধরে দাঁড়ানোর অবকাঠামো বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। আনসার বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে।
মুকসুদপুর শামসুদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন ব্যালট পেপার সকালে পাঠানো হবে। তার জন্য আগে থেকেই কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, পদ্মা সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোটার ৩ হাজারেরও বেশি। এর জন্য সাতটি বুথ তৈরি করা হয়েছে। আনসার সদস্য মোতায়েন আছেন এবং বাইরে বিজিবি সদস্যরা কাজ করছেন। ভোট বক্সসহ সব ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে নির্বাচনি কর্মকর্তারা এসেছেন।
সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে কথা হয় ওই গ্রামের রহিম মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। যদি কোনো ধরনের পরিস্থিতি খারাপ না হয় তাহলে আমরা ভোটকেন্দ্রে আসব এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেব। তবে এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার জন্য বাহিনীকে অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলে ভোটাররা হয়তো নির্বিঘ্নে এসে ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন।