বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেন আজ রোববার তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাত্রা শুরু করবে।
সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ পর্ব শেষে জানা যাবে কারা হচ্ছেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রায় ১৭ কোটি মানুষের জনপ্রতিনিধি। শাসকদল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ১৪ দলীয় জোটের শরিকরাসহ নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টিই এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে বিএনপিসহ তাদের বলয়ের বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে।
নির্বাচন উৎসবমুখর এবং ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে প্রথম থেকেই নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে আসা এবং ফিরে যাওয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সারা দেশে দলীয় কর্মীর পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই কেন্দ্রে ভোটার আনার দায়িত্ব পালন করবেন।
এজন্য দলীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রে ভোটার আনতে প্রশিক্ষণ দিয়ে কয়েক লাখ কর্মী তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে সারা দেশের জন্য ১২টি দল গঠন করা হয়। প্রতিটি দলকে গড়ে পাঁচ থেকে সাতটি সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসব জেলা থেকে আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রচারকর্মীর তালিকা তৈরি করা হয়।
এরপর তাদের ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নির্বাচনের দিন ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কেন্দ্রভিত্তিক এই কমিটি কাজ করবে।
আওয়ামী লীগের দলীয় কৌশলের বাইরেও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আরও কিছু উদ্যোগ আছে। গত ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মতবিনিময় সভা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে কাজ করবেন কাউন্সিলররা।
ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন পুলিশ সদস্যরা। ভোটারদের ভোট দিতে কেউ বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও ভোটারদের উৎসাহিত করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রচার চালাচ্ছে। তারা সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছে।
এছাড়াও যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারেন। সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন নিয়েছে।
তবে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে অনেক পদক্ষেপ থাকলেও সেগুলো কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা কেবল নির্বাচন বর্জনই করেনি, তারা জনগণকে ভোট দিতে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ১০ দিন ধরে সারা দেশে গণসংযোগ কর্মসূচি চালিয়েছে।
দলটি ভোটের দিন হরতাল কর্মসূচি দিয়ে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটাররা কতটা ভোটমুখী হবেন, তা নিয়ে সংশয় আছে।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম শনিবার বলেন, নির্বাচন ঘিরে সারা দেশেই উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটারদের মধ্যে যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে, তাতে ভোটার উপস্থিতি বেশ ভালো হবে বলেই আমরা মনে করি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ডামি প্রার্থী ও ডামি দল দিয়ে একতরফা ও ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন দেশের মানুষ আগেই বর্জন করেছে। নির্বাচনের দিনও তারা ভোট বর্জন করবে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি এবার নির্বাচনে নেই। তাদের জোটসঙ্গীরাও নেই। উপযুক্ত বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে এবারের নির্বাচনে ভোটারের বড় একটা অংশের এই নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই।
ভোট কেন্দ্রে যাওয়ারও কোনো তাগিদ বা তাড়না তাদের মধ্যে নেই। ভোট কেন্দ্রে যেতে চাপ সৃষ্টি করা না হলে তাই স্বাভাবিকভাবেই ভোটার উপস্থিতি অনেক কম হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ১৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ৩০০ সংসদীয় আসনের তফশিল ঘোষণা করেন। পরে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোট স্থগিত করা হয়। ভোট হবে ২৯৯ আসনে। প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ভোটগ্রহণ করবেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ যে ২৮টি দল অংশ নিচ্ছে, এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আছে ২৬৬ আসনে। এর বাইরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আরও ২৬৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এসব আসনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীদের সরিয়ে নিয়েছে। ২৬টিসহ জাতীয় পার্টি আরও দুই শতাধিক আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা সমঝোতার মাধ্যমে ছয়টি আসন পেয়েছে। এর মধ্যে জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি ও জাতীয় পার্টি-জেপি একটি আসন পেয়েছে। এসব আসনে তারা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন।