anusandhan24.com
কক্সবাজার যাবে স্বপ্নের ট্রেন
সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ
anusandhan24.com anusandhan24.com :

অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। ১ ডিসেম্বর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। মাঝে আর কোনো ট্রেন বা গাড়ি পালটাতে হবে না যাত্রীদের। রোববার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেনের ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক চলাচল) হয়েছে। সকাল ৯টা ২ মিনিটে একটি লোকোমোটিভসহ ৮টি কোচের ট্রেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ে। ট্রেনটি সকাল ১০টায় চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী রেলস্টেশনে পৌঁছায়। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে সৈকতের নগরীতে স্থাপিত আইকনিক স্টেশন স্পর্শ করে। পরীক্ষামূলক ট্রেনটি যাওয়ার সময় বিভিন্ন স্টেশন ও রেললাইনের দুপাশে শত শত উৎসুক মানুষ হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। কক্সবাজারে স্বপ্নের ট্রেন দেখে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন হাজারো দর্শনার্থী।

রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, পর্যটননগরী কক্সবাজারের সঙ্গে পুরো দেশের রেল নেটওয়ার্ক সম্পৃক্ত হচ্ছে। ওই পথে অত্যাধুনিক ট্রেন চলবে। সাধারণ যাত্রীর সঙ্গে বিদেশি পর্যটকও বাড়বে। পূর্ব-পশ্চিম-উত্তরাঞ্চল থেকে সরাসরি ট্রেন যাবে কক্সবাজারে। ১১ নভেম্বর নতুন রেলপথ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলের উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তার হাত ধরেই রেলে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চলাচলের আগে ট্রেনের ট্রায়াল রান করা বাধ্যতামূলক। ট্রায়াল রানে রেললাইনের ত্রুটি, পাটাতনে ভুল থাকলে তা সহজেই ধরা পড়ে। পরীক্ষামূলক যাত্রার প্রথম এই ট্রেনটি চালান লোকোমাস্টার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ও সহকারী লোকোমাস্টার রুকন মিয়া। ট্রেনে একাধিক গার্ড, রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য (আরএনবি), রেল ট্র্যাকসংক্রান্ত রেলকর্মী, প্রকৌশল, বাণিজ্যিক ও পরিবহণ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রেলওয়ে পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও পরিদর্শক দলের প্রধান রহুল কাদের আজাদ বলেন, পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট দেওয়া হবে। এরপরই আনুষ্ঠানিক ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

এর আগে শনিবার কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হওয়ায় সেতুটির ওপর ট্রায়াল রান পর্যবেক্ষণ করে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল। কর্ণফুলী নদীর উপর অবস্থিত ৯২ বছরের পুরোনো কালুরঘাট সেতুটি সংস্কার করে পুরোপুরি ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এরফলে আগামী ২৫ থেকে ৩০ বছর এ সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নজর রয়েছে রেলে। তার নিজস্ব চিন্তায় রেল উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আসছে। আমি ১০ বছর ধরে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। রেলে চলমান এবং ৩০ বছর মেয়াদি যে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে-সেগুলো বাস্তবায়ন হলে বিশ্বমানের রেল হবে। সব জেলায় রেল সংযুক্ত হবে। কক্সবাজারের পর রাঙামাটি ও কাপ্তাইয়ে নতুন রেলপথ স্থাপন হবে। নতুন রেলপথ, ইঞ্জিন, কোচ সবই অত্যাধুনিক-অর্থাৎ রেলে বিমানের ছোঁয়া।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালাতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ১১ নভেম্বর উদ্বোধনের আগেই কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পরিপূর্ণ একটি যাত্রীবাহী ট্রেন প্রস্তুত রাখা হবে। আধুনিক ওই ট্রেনটি দিয়ে নতুন রেলপথের উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনের পরপরই ট্রেনটি কক্সবাজার রেলস্টেশন ছেড়ে চট্টগ্রাম স্টেশন হয়ে সোজা ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসবে। ওই দিন নতুন লাইন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই ভাগে কাজটি করেছে।

ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ : ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দুটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব থাকলেও, ঢাকা থেকে প্রথমদিকে দিনে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলবে। দিনে একটি ট্রেন ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিয়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছবে। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় যাত্রা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় ফিরবে। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে ট্রেনটির। ঢাকা থেকে যাত্রার সময় আসন সংখ্যা হবে ৭৯৭টি। ফিরতি পথে আসন হবে ৭৩৭টি। ঢাকা-কক্সবাজার সর্বনিম্ন ৫১৫, সর্বোচ্চ ভাড়া ২০৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পথে শোভন চেয়ারে ৫১৫ টাকা ও এসি সিটে ৯৮৪ টাকা, এসি সিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ভাড়া হবে ১ হাজার ১৩২ টাকা। ভ্যাটসহ এসি কেবিনে ১ হাজার ৩৬৩ ও এসি বার্থে ভাড়া পড়বে ২ হাজার ৩৬ টাকা।

কক্সবাজারে উল্লাস : রোববার রাত ৬টা ২৫ মিনিটে পরিদর্শন ট্রেনটি কক্সবাজারের আইকনিক রেল স্টেশনে এলে হাজারো দর্শনার্থী বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়েন।

আইকনিক স্টেশনের পার্শ্ববর্তী পাওয়ার হাউজ এলাকার বাসিন্দা তারেক আরমান বলেন, দুপুর ২টার দিকে ট্রেন আসবে-এমন খবরে এলাকার নারী-পুরুষ দলবেঁধে প্ল্যাটফর্মে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু সন্ধ্যা হলেও ট্রেন না আসায় কেউ কেউ বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে স্বপ্নের ট্রেন দেখতে অনেকেই ১০ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেন।

ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের রেলস্টেশন এলাকার ইউপি সদস্য মিজান সিকদার বলেন, আমরা উৎফুল্ল। কক্সবাজারে স্বপ্নের রেল এসেছে। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার অপেক্ষায়ও মানুষ ক্লান্তি প্রকাশ করেননি। সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে ট্রেন কক্সবাজারে এলে জনতা উল্লাস প্রকাশ করে।