বিশ্বকাপ ও ‘সেভেন আপ’ শব্দযুগল একসঙ্গে উচ্চারিত হলেই ঠোঁটের কোণে চলে আসে ব্রাজিলের নাম। ২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে চূর্ণ হওয়ার দুঃস্বপ্ন হয়তো অনন্তকাল ধরে তাড়া করবে ব্রাজিলকে। ক্রিকেটের একদিবসী বিশ্বকাপে এমন একটি ‘সেভেন আপ’ দুঃস্বপ্ন তাড়া করে পাকিস্তানকেও। ওয়ানডে বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে সাত ম্যাচের সাতটিতেই হারায় কারণ-অকারণে পাকিস্তানের হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগান নিন্দুকরা। মোদির শহরে ঐতিহাসিক সেই গেরো খুলে শাপমোচনের আরেকটি সুযোগ পাকিস্তানের সামনে। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আজ বিশ্বকাপের লিগ পর্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও আবেদনময় ম্যাচে দেখা হচ্ছে দুই পড়শি, প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের।
রোমাঞ্চের বারুদে ঠাসা ভারত-পাকিস্তান মহারণকে বলা হয় সব ম্যাচের সেরা ম্যাচ। বিশ্বকাপের মঞ্চে ক্রিকেটের এল ক্লাসিকো ঘিরে সমর্থকদের উন্মাদনা এবারও তুঙ্গে পৌঁছে গেছে। এক লাখ ৩২ হাজার টিকিট বিক্রির পরও দর্শকদের চাহিদা না মেটায় অতিরিক্ত ১৪ হাজার টিকিট ছাড়তে হয়েছে। তার পরও টিকিটের জন্য হাহাকার।
কালোবাজারে ভুয়া টিকিট বিক্রি হচ্ছে তিন লাখ রুপিতে! আহমেদাবাদের সব হোটেলের বুকিং শেষ তিন মাস আগেই। হোটেলে কক্ষ না পেয়ে রাত কাটানোর জন্য অনেক ক্রিকেটপ্রেমী হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন।
এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান না হলেও আজ ভারত-পাকিস্তান মহারণের আগে থাকছে বিশেষ আয়োজন। সব মিলিয়ে জমজমাট প্রস্তুতি। আজ আহমেদাবাদে হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও তাতে ম্যাচ ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখন মাঠের লড়াই কতটা জমে সেটাই দেখার।
দুদলই প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে মাঠে নামবে। রোহিত শর্মার ভারত জিতেছে অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বাবর আজমের পাকিস্তান হারিয়েছে নেদরল্যান্ডস ও শ্রীলংকাকে। লংকানদের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতায় ভারতের বিপক্ষেও আশার আলো দেখছেন পাকিস্তানের ব্যাটিং হিরো মোহাম্মদ রিজওয়ান, ‘এবার আমাদের সঙ্গে আছে মোমেন্টাম। দুদলই নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে নামবে। যারা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে, জিতবে তারাই। রেকর্ড বা ফর্ম নয়। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বরাবরই ব্যবধান গড়ে দেয় চাপ সামলানোর সামর্থ্য। ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা অবশ্য বাইরের চাপ নিতেই নারাজ, ‘যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তা নিয়ে আমরা ভাবতেই চাই না। আমরা শুধু মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা দিতে চাই। বাইরে কী হচ্ছে, তাতে কিছু যায়-আসে না।’ ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের একনম্বর দলটি যে কর্মে আছে তাতে বাবর, শাহিনদের নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই রোহিতের। তবে ভারতের সমীহ ঠিকই পাচ্ছেন বাবররা। গত মাসে এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে ২২৮ রানে হারানো ভারত বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে কখনো না হারলেও ওয়ানডেতে মুখোমুখি লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে পাকিস্তান। ভারতের ৫৬ জয়ের বিপরীতে তাদের জয় ৭৩টি। দুই বছর আগে টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতের গেরো খোলায় একদিবসী বিশ্বকাপেও এবার ‘সেভেন আপ’ দুঃস্বপ্ন ভোলার আশা অন্তত করতে পারেন বাবররা।