anusandhan24.com
বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা, তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে
রবিবার, ২১ মে ২০২৩ ০৫:২৪ অপরাহ্ণ
anusandhan24.com anusandhan24.com :

গত কয়েক বছরে দেশে বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনাগুলো দুর্ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত হওয়ায় দায়ী ব্যক্তিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যে কোনো বিস্ফোরণের কারণ উদ্ঘাটনে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। আবার ক্ষেত্রবিশেষ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও বাস্তবায়ন হয় না সুপারিশ। বিভিন্ন বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে জমাট বাঁধা গ্যাস। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে শিল্পকারখানার বয়লার, রাসায়নিক গুদাম, গাড়ি ও রেস্টুরেন্টে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার।

সারা দেশে বহু ভবনই রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। কয়েকটি বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে জমে থাকা গ্যাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন একটি আবদ্ধ ভবনে বিপুল পরিমাণ গ্যাস জমে, তখন ভবনের কক্ষগুলো একটি গ্যাস চেম্বার হিসাবে কাজ করতে পারে। এ ধরনের বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা এড়াতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সচেতনতা ও সতর্কতা।

উন্নত বিশ্বে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের জন্য আলাদা ইউটিলিটি ডিপার্টমেন্ট থাকে, যারা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি ভোক্তাদের এগুলো ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেয়। এর ফলে বহু অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। আমাদের দেশেও এমন ব্যবস্থা চালু করা দরকার। জনসাধারণের উদাসীনতার কারণেও বহু দুর্ঘটনা ঘটে। গ্যাস লিকেজ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার দায়িত্বশীল আচরণ এবং সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ দুর্ঘটনা হ্রাসে ভূমিকা রাখবে, এটি আশা করা যায়। গ্যাসের প্রতিটি অবৈধ লাইন বিপজ্জনক। এসব কর্মকাণ্ডে নানাভাবে দুর্নীতিবাজরা জড়িত থাকে। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর জনবল ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার যতই বাড়ানো হোক না কেন, দুর্নীতি বন্ধ করার উদ্যোগ না নিলে বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

রাসায়নিক, বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থ সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় মানুষের বিপদ বাড়ছে। যারা বিভিন্ন রাসায়নিক আমদানি করেন, ভোক্তা পর্যায়ে তা পাঠানোর আগে তারা যাতে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রাসায়নিক বা যে কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ ব্যবহারের সঠিক জ্ঞান যাদের নেই, তারা যাতে এসব পদার্থ আমদানি ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকতে না পারেন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। সারা দেশে বিপুলসংখ্যক গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার হচ্ছে যানবাহনে। অনেক ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহারে যাত্রীদের ঝুঁকি বাড়ে। যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজি সিলিন্ডার পাঁচ বছর পরপর রিটেস্টের নিয়ম থাকলেও অনেকেই তা করেন না। এতে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারগুলো পরিণত হয় চলন্ত বোমায়। বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনাগুলোর প্রকৃত রহস্য মানুষ জানতে চায়। কাঙ্ক্ষিত সময়ে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। দুর্ঘটনাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।