anusandhan24.com
লোপাটের অর্থ ফেরত দেবে ইউএফএস
শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:১৭ পূর্বাহ্ণ
anusandhan24.com anusandhan24.com :

শেয়ারবাজারে ৪ মিউচুয়াল ফান্ড থেকে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের (ইউএফএস) হাতিয়ে নেওয়া ২৩৫ কোটি টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে ইউএফএস। চিঠিতে লোপাটের এই অর্থ পরিশোধে ৩ মাস সময় চাওয়া হয়েছে।

এক্ষেত্রে এপ্রিলের মধ্যে ৫০ কোটি টাকা জমা দেবে। কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুবাই পলাতক সৈয়দ হামজা আলমগীরের বাবা সৈয়দ আলমগীর ফারুক এবং মা ইশরাত আলমগীর সম্প্রতি কমিশনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর এ ব্যাপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি চাওয়া হলে তারা বোর্ড মিটিং করে রেজুলেশনসহ কমিশনে চিঠি দেয়। চিঠির বিষয়টি স্বীকার করেন আলমগীর ফারুক।

জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর ফারুক বৃহস্পতিবার বলেন, আপনারা ডকুমেন্ট পেলে আমার কিছু বলার নেই। তবে এতটুকু বলতে পারি যা লিখেছি, সেটা ভেবেচিন্তে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। পুলিশ তদন্ত করছে। ফলে তদন্তাধীন বিষয়ে এর বেশি বলা ঠিক হবে না।

সূত্র জানায়, এপ্রিলের মধ্যে ৫০ কোটি টাকা দেওয়ার ব্যাপারে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে দেবে ২০ কোটি। ২৯ এপ্রিলের মধ্যে আরও ৩০ কোটি টাকা দেবে ইউএফএস। মে মাসের মধ্যে ৭৫ কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় কোম্পানিটি। বাকি ১০০ কোটি টাকার কিছুটা বেশি জুনের মধ্যে পরিশোধের আগ্রহ দেখিয়েছে।

জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ৪ মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ২৩৫ কোটি ১২ লাখ টাকা সরিয়ে নিয়েছে ইউএফএস। এরমধ্যে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীরের নেতৃত্বে ১৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা সরাসরি আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। এই টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর তিনি দুবাই পালিয়েছেন। এ বিষয়ে ১ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। স্বতপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতি রুল জারি করেন সর্বোচ্চ আদালত। সর্বশেষ বিএসইসির তদন্ত রিপোর্টে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বেশকিছু পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এসব পদক্ষেপের মধ্যে ইউএফএস’র লাইসেন্স বাতিল, কোম্পানির এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা, অডিট কোম্পানি নিষিদ্ধ করা এবং সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বিএসইসির তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ৫টি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করছে ইউএফএস। এসব তহবিলের আকার ৪৪০ কোটি টাকা। ইউএফএস’র ফান্ডগুলোর মধ্যে-আইবিবিএল ২০০ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া ১০০ কোটি, পপুলার লাইফ ৮০ কোটি, পদ্মা লাইফ ৫০ কোটি এবং প্রগতি লাইফ ইউনিট ফান্ডের ১০ কোটি টাকার তহবিল পরিচালনা করছে এই প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও সানলাইফ ইউনিট ফান্ডের ১০ কোটি এবং ইউএফএস ইউনিট ফান্ডের ১০ কোটি টাকার তহবিল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে ১৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীরের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। এক্ষেত্রে নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে ৫৮ কোটি ৯০ লাখ, এফডিআর থেকে তুলে নিয়েছে ৪৭ কোটি ৯২ লাখ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে থাকা ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। এরমধ্যে জড়িত রয়েছেন কোম্পানির প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক, ম্যানেজার সাকিব আল ফারুক এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান রাজিব। এই চার কোম্পানির মাধ্যমে শুধু কাটালি টেক্সটাইলের শেয়ার কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত রয়েছে এরা হলেন-সৈয়দ হামজা আলমগীর, ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস, এছাড়া ইশরাত আলমগীর ও সৈয়দা মেহরীন রহমান, সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী, সৈয়দা শেহরীন হুসাইন, আলিয়া হক আলমগীর, মাহিদ হক, তারেক মাসুদ খান, মোহাম্মাদ জাকির হোসেন, মোসা. উম্মে ইসলাম সোহানা, ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ফান্ড। পরে আরও ১০ জনের হিসাব স্থগিত করা হয়। এরা হলেন-ইউএফএস’র প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক, ম্যানেজার সাকিব আল ফারুক, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান রাজিব, প্রতিষ্ঠান হিসাবে-নিটওয়্যার ক্রিয়েটর, ভেনগার্ড ট্রেডার্স, ম্যাক্স সিকিউর লিমিটেড, তানজিনা ফ্যাশন, আরআই এন্টারপ্রাইজ, নেত্রকোনা এক্সেসরিজ ও মাল্টিম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল।