anusandhan24.com
প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ বেজে উঠেছে ভর্তি যুদ্ধের ঘণ্টা
শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ
anusandhan24.com anusandhan24.com :

উচ্চশিক্ষায় ‘ভর্তিযুদ্ধ’র ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। তবে এবারও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না গুচ্ছ পদ্ধতি। আগের মতোই বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বড় প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা চলো নীতিতে আছে। অন্যদিকে কৃষি, প্রকৌশল ও সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি)-এই তিন গুচ্ছে এবারও ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আবেদন নেওয়ার সিদ্ধান্তে আছে। যদিও এরই মধ্যে জিএসটি গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যেতে জগন্নাথ এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে ২৭ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঐক্যবদ্ধ থাকতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। এ কারণে শেষ পর্যন্ত এই গুচ্ছ না ভাঙার আশা করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

তবে ভর্তিতে আলাদা নীতি থাকলেও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই একমত বলে জানা গেছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করেছে, এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার (সংক্ষিপ্ত) সিলেবাস অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হবে। গত বছর সিলেবাসের বাইরে থেকেও প্রশ্ন করার অভিযোগ আছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। ৮ ফেব্রুয়ারি এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তখনই শিক্ষামন্ত্রী সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করার আহ্বান জানান।

এইচএসসির ফল প্রকাশের দিনই ভর্তি পরীক্ষার রোডম্যাপ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই সংস্থা দেশের সব সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে অভিন্ন পরীক্ষায় ভর্তি নেয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের আবেদন নেওয়ার কাজ চলছে। একইভাবে চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ মার্চ প্রথম দফার আবেদন নেওয়া শুরু করবে। বাছাই শেষে চ‚ড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের পরে ৯ এপ্রিল থেকে আবেদন করতে হবে। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ থেকে ২৫ মে ভর্তি পরীক্ষা হবে। এর আগে আবেদন নেওয়া হবে।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, মেডিকেল ও ডেন্টাল, কৃষি এবং বুয়েট বাদে বাকি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এছাড়া ২২টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিএসটি নামে আরেকটি গ্রুপ আছে। এখন যদি বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মিলে একটি গুচ্ছে পরীক্ষা নিত, তাহলে সরকার বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির অনুশাসন প্রতিফলিত হতো। কিন্তু এবারও সেই রকম কোনো লক্ষণ তো নেই-ই, বরং যারা পথ দেখাবে, তারাই আলাদাভাবে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তবে এরপরও আমরা আশাহত নই। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি। কেননা গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি কমে যাবে, এটি প্রমাণিত হয়েছে। এ বছর সবার আগে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ও ডেন্টালে ভর্তির আবেদন ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। আজ সকাল ১০টায় এমবিবিএস প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর ৫টিসহ দেশের ১৯টি কেন্দ্রে একযোগে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। এবার সরকারি মেডিকেলে ৪ হাজার ৩৫০ আসনে এমবিবিএসে এবং ৫৪৫টি আসনে বিডিএসে ভর্তি করা হবে। আর বেসরকারি মেডিকেলে এমবিবিএসে আসন আছে ৬ হাজার ৩৩৯টি আর বিডিএসে ১৪০৫টি।

বুয়েটে øাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন আবেদন ১ মার্চ শুরু হয়েছে। এই আবেদন নেওয়া হবে ১২ মার্চ বিকাল ৩টা পর্যন্ত। ২০ মে বুয়েট ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষার প্রাক-নির্বাচনি পর্ব এবং ১০ জুন চ‚ড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এবার ১ হাজার ৩০৯ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে বুয়েট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত। ভর্তি পরীক্ষা ২৯ এপ্রিল শুরু হবে। আর শেষ হবে ১৩ মে। এবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ডিগ্রির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে মিল রেখে স্নাতকের (সম্মান) পরিবর্তে এখন থেকে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম বলা হবে। তবে ডিগ্রির নাম (বিবিএ, বিএসএস, বিএ, বিএসসি) অপরিবর্তিত থাকবে।

এদিকে তিনটির মধ্যে প্রকৌশল গুচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এগুলো হচ্ছে রুয়েট, চুয়েট ও কুয়েট। এবার এই গুচ্ছের নেতৃত্ব দেবে কুয়েট। অন্যদিকে কৃষি গুচ্ছে ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় আর জিএসটিতে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এ দুই গুচ্ছ এখনো ভর্তি পরীক্ষার আবেদন নেওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করেনি। মূলত জিএসটি গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ বদলি নিয়ে এবার জটিলতা হয়। আর এর প্রভাব পড়ে উলি­খিত তিন গুচ্ছেই। ভর্তির পাশাপাশি ক্লাস শুরুও বিলম্বিত হয় প্রত্যেক গুচ্ছে। তবে শিগগিরই গুচ্ছগুলো এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেবে বলে জানান ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর।

জানা যায়, উলি­খিত তিনটির মধ্যে জিএসটি গুচ্ছকে নিয়ে বসেছিল ইউজিসি। বৈঠক থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা দ্রুত আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়। এক্ষেত্রে বিগত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন এবং ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু ও শেষ এবং শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর তারিখ নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে অনুষ্ঠিত এ সভায় ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, জিএসটি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, জিএসটি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. এমদাদুল হক, কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভ‚ঁইয়া, চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েটের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি এবং কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান এবং ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান অংশ নেন।

সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর আলমগীর বলেন, বিজ্ঞপ্তি ও প্রসপেক্টাসে ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সব শর্ত ও তথ্য উলে­খ করতে হবে এবং ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া অবধি এসব শর্ত অপরিবর্তিত রাখতে হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট কমিটিকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনকৃত শিক্ষার্থীকে তাদের পছন্দমতো স্থানে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় ব্যব হৃ ত সফটওয়্যার হালনাগাদ করে শিক্ষার্থীবান্ধব করারও পরামর্শ দেন। বৈঠকে গত বছরের ভুলত্র“টি পর্যালোচনা করা হয় বলে জানা যায়।