
anusandhan24.com :
সিলেট-১ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমান আর বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ভোলেননি সিলেট অঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীরা।
শনিবার সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে তা আবারও প্রমাণ হয়েছে। যতবারই নেতাদের বক্তব্যে এম সাইফুর রহমান আর এম ইলিয়াস আলী নাম এসেছে সঙ্গে সঙ্গেই স্লোগানে মুখরিত ছিল সমাবেশস্থল।
এম সাইফুর রহমান ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় এবং পরে খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। নেতাকর্মীদের মতে, অর্থমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সিলেট বিভাগে উন্নয়নের কারণেই তাকে মনে রেখেছেন তারা। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান এ বর্ষীয়ান নেতা। এই নেতার নাম যতবার সমাবেশে উচ্চারিত হয়েছে ততবারই স্লোগান ছিল সাইফুর রহমানের নামে।
অন্যদিকে সিলেট বিএনপির জনপ্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল। শনিবার বিভাগীয় সমাবেশে যখন বক্তব্যের জন্য এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদি লুনার নাম ঘোষণা করা হয়, ঠিক তখনি ইলিয়াস আলীর নামে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ। একই অবস্থা তৈরি হয় সিলেটের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম যখন ইলিয়াম আলীর গুম নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
কষ্ট হলেও তৃপ্তি নিয়ে ফিরেছেন কর্মীরা : বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের ৩ দিন আগেই ঘোষণা হয় ধর্মঘট। সে কারণে যারা সমাবেশের দিন যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাদেরও আসতে হয়েছে দুদিন আগে। সমাবেশস্থলে পৌঁছে কেউ ঘুমিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। নিম্ন আয়ের যারা এসেছিলেন তারা ছিলেন নিরুপায়। খাবারের জন্য ভরসা করতে হয়েছে সমাবেশস্থলের রান্নার ওপর। এমন অনেকের সঙ্গেই কথা হয় ।
মৌলভীবাজারের চা বিক্রেতা সোলাইমান। দলে কোনো পদ-পদবি নেই কিন্তু ভালোবাসেন বিএনপিকে। মৌলভীবাজারে শুক্রবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই তিনি রওয়ানা হন সিলেটের পথে। তিনি বলেন, শুক্রবার ধর্মঘট, চা বিক্রিও তেমন হবে না, তাই আগেই সমাবেশে চলে এসেছি। এসে গত দুদিন খুব কষ্ট হয়েছে। ঠান্ডার মধ্যে মাজারে ঘুমিয়েছি, সেখানে খেয়েছি, সমাবেশস্থলেও খেয়েছি। খুব কষ্ট হয়েছে, তবে সমাবেশে এত মানুষ দেখে মন ভরে গেছে। নেতাদের কথা শুনেছি, মনে হয় এবার কিছু একটা হবে। তিনি বলেন, কষ্ট হলেও নেতাদের কথা শুনে শান্তি পেয়েছি।
একই কথা সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বিএনপিকর্মী কৃষক আফসার মিয়ার। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে শনিবার সকালে আসার কথা ছিল কিন্তু ধর্মঘট থাকায় শুক্রবারই নৌপথে সিলেটে পৌঁছান। রাতে গাদাগাদি করে ঘুমিয়েছেন নৌকায়, খাবার খেয়েছেন সমাবেশস্থলে। সকালে দেরিতে আসায় খাবার পাননি। বিকালে যখন কথা হয় তিনি পাশের একটি দোকানে চা দিয়ে বিস্কুট খাচ্ছিলেন।
বলেন, দিনে এই প্রথম খাবার বলতে বিস্কুট আর চা। সমাবেশ কেমন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাস চালু থাকলে শহরে জায়গা অইত না। এখানে যারা আইছে হকলেই দু-তিন ধরে কষ্ট করছে, কিন্তু তারপরেও যত মানুষ অইছে, দেইহা খুব শান্তি লাগছে।’
আধা বেলা পর্যন্ত মিছিলের নগরীতে পরিণত ছিল সিলেট : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষ্যে দুপুর ১টা পর্যন্ত মিছিলের নগরী ছিল সিলেট। সব মিছিল গিয়ে মেলে সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে।
দুপুর ১টা পর্যন্ত কমপক্ষে শতাধিক মিছিল প্রবেশ করে সমাবেশস্থলে। এরমধ্যে ছাতক থেকে সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, সুনামগঞ্জের সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন খান, বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান, কানাইঘাট থেকে মামুনুর রশিদ মামুনসহ বেশকিছু নেতার সমর্থকরা কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে মাদ্রাসা মাঠে প্রবেশ করেন।
শেষ বিকালে পূর্ণ হয় আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ : বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশস্থল আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সমানের অংশ পূর্ণ হয়ে যায় বেলা ১১টার মধ্যেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসেন দুপুর ১টার দিকে। প্রখর রোদে সকাল থেকে আসা অনেক নেতাকর্মী মাঠ ছেড়ে আশ্রয় নেন মাঠের পাশে থাকা গাছের ছায়ায়। কেন্দ্রীয় নেতারা যখন বক্তব্য শুরু করেন তখনও মাঠের পেছনের দিক ছিল ফাঁকা।
তাই বারবারই মাইকে ঘোষণা দিয়ে মাঠে প্রবেশের অনুরোধ ছিল স্থানীয় নেতাদের। কিন্তু প্রখর রোদে অনেকটা নাজেহাল নেতাকর্মীরা যেন সূর্য পশ্চিমে হেলার অপেক্ষায় ছিলেন। প্রত্যাশার সেই ষোলোকলা পূর্ণ হয় বেলা ৪টার দিকে যখন বক্তব্য দিতে আসেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। মাঠের পাশে ও রাস্তায় থাকা নেতাকর্মীরা ঢুকে পড়েন মাঠে। মাঠ পূর্ণ হয়ে যায় কানায় কানায়।