anusandhan24.com
সহিংসতার ভয় মোকাবিলায় চাই উন্নয়ন ভাবনা
বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২ ১০:৪৫ অপরাহ্ণ
anusandhan24.com anusandhan24.com :

সহিংসতার ভয় মোকাবিলায় তরুণদের সাহস ও আত্মপ্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে আসার পাশাপাশি প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ভাবনা। বুধবার ঢাকার শেরাটন হোটেলে ‘সহিংসতার ভয় আর নয়’ বিষয়ক এক জাতীয় সংলাপে আলোচকরা এ কথাই তুলে ধরেন।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং জাগো ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে এই জাতীয় সংলাপে আলোচকরা ‘সহিংসতার ভয়’ বিষয়ক জাতীয় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি তুলে ধরেন এই ভয় কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। কীভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ ভয়কে জয় করা সম্ভব।

আলোচকরা আরও বলেন, সর্বক্ষেত্রে সহিংসতার ভয়মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে এ বিষয়ে জোর দিতে হবে, সমাধানের কথা ভেবে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে।

জাতীয় সংলাপে আমাদের দেশে সহিংসতার ভয়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং স্থানীয় এবং জাতীয়ভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে এমন সমাধানগুলোকে সম্বোধন করা হয়েছে।

এছাড়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের যুবকরা যারা ‘সহিংসতার ভয়’ ক্যাম্পেইনের অংশ ছিল তারা তাদের অভিজ্ঞতা অতিথিদের সঙ্গে তুলে ধরেন। রংপুরের সাদমান নামের একজন অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বাল্যবিবাহ নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, এটা কখনোই আমার মনে হয়নি সহিংসতা বা ভয় একটি ট্রিগার ফ্যাক্টর হতে পারে। আমরা যদি দীপ্তির মতো আমাদের আওয়াজ তুলতে পারি এবং যখনই আমরা কোনো সহিংসতা দেখি তখনই জরুরি নম্বর ব্যবহার করার মাধ্যমে, আমরা আমাদের ভয়কে জয় করতে পারি।

স্থানীয় তরুণরা কীভাবে নীতিনির্ধারক ও সরকারের সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে বের করা যাবে সে বিষয়ও সংলাপে ওঠে এসেছে।

এই আলোচনায় আলোচক হিসাবে অংশ নেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান। তিনি বলেন, সরকার নারীদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সব সরকারি ব্যবস্থায় নারীদের সম্পৃক্ত করছেন। আমরা লিঙ্গ সংজ্ঞায়িত দায়িত্ব ভাগাভাগি পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা তরুণদের এ প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার জন্য অনুযোগ ও উৎসাহিত করছি।

আইনি ব্যবস্থার ভ‚মিকা নিশ্চিত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন অবকাঠামোগত ব্যবস্থার উন্নতির ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, অবকাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। যেন ভয়ের ক্ষেত্রগুলোকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি জোর দিতে হবে সাপোর্ট সিস্টেম তৈরিতে।

সম্মিলিত এবং সমন্বিত উপায়ে যুবদের সচেতনে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

মালালা ফাউন্ডেশন কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ এম.এইচ. তানশেন বলেছেন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহযোগিতামূলক জায়গা দরকার। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে। উপরন্তু, সহিংসতার ভয়ে শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতির উন্নতি করতে হবে।

নারীপক্ষের সদস্য কামরুন নাহার বলেন, আমরা মুক্তি চাই, রক্ষা চাইনা। সহিংসতার ভয়কে চ্যালেঞ্জ করার প্রক্রিয়ায় যুবক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নারী হওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে যা যা ঘটে বা ঘটতে পারে সবই সহিংসতা। কী কী ঘটে তা নিয়ে কথা বললেও কী ঘটতে পারে সেই ভয় নিয়ে আমরা কথা বলি খুবই কম।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুর মতে, যুবকদের তাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে উৎসাহিত করেছেন। তরুণরা যখনই কোনো সহিংসতার মুখোমুখি হয় তখনই তাদের এগিয়ে আসা উচিত এবং নিজেদের জন্য ওঠে দাঁড়াতে হবে। তাদের সব বৈষম্য এবং সহিংসতাকে সব অবস্থাতেই চ্যালেঞ্জ করতে হবে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ গার্লস রাইটের পরিচালক কাশফিয়া ফিরোজ সংলাপটি পরিচালনা করেন।

তিনি বলেন, এসডিজিকে মাথায় রেখে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ১০ বছরের কৌশলপত্র তৈরির সময় কিশোর-কিশোরী ও যুবদের সঙ্গে আলোচনা করে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী ১০ বছরের জন্য সহিংসতার ভয় নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নির্ধারণ করে। প্রায় ১২ হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপর জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী গণপরিসরে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হয়। ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী ও কিশোরী জানান তারা নিজ পরিবারেই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক, সিনিয়র স্টুডেন্ট দ্বারা বিভিন্ন বিরূপ ও অশালীন মন্তব্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন। অনলাইন প্ল্যাটফরমে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হওয়ার কথা জানান অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ, আর কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের ৫৬ শতাংশ। যা তাদের মনে দীর্ঘমেয়াদি ভয় সঞ্চার করে।

জরিপ হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি, ভয়ের কারণে অনেক সময় বাবা-মায়েরা মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, খেলাধুলা, পিকনিকে অংশগ্রহণ করতে দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। সহিংসতা তো বটেই, সহিংসতার ভয় তরুণদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভয় দূর করা সম্ভব হলেই তরুণরা তাদের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ করতে পারবে।