সেন্টমার্টিনে যাওয়ার অনুমতি পেলেও চলবে না জাহাজ
প্রকাশিত : ০৬:৫২ পূর্বাহ্ণ, ১ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার ১ বার পঠিত
দীর্ঘ নয় মাস পর আবারো খুলে গেল দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে যাওয়ার সুযোগ। আজ শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপটিতে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। তবে সরকারের অনুমতি সত্ত্বেও এখনো কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনমুখী হচ্ছে না।
ফলে হাজারো পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে। রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে দিয়ে আবার চলে আসতে হবে। কোনো কিছু দেখার সুযোগ পাবেন না তারা। এ জন্য জাহাজ মালিকরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজ মালিকরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন সেটা তাদের ব্যাপার। সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন। আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করবে।
রাত্রিযাপন নিষেধে পর্যটকদের অনীহা : সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব)-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টকর, তেমনি ব্যবসার জন্যও অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, রাত্রিযাপন না থাকলে সেন্টমার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্টমার্টিনের আসল আকর্ষণ।
বাহাদুর আরও জানান, ইসিএ (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া) ঘোষণা দিয়ে প্রশাসন ইনানী জেটি ঘাট ও টেকনাফ ঘাট থেকে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি দেয়নি। ফলে দিনে গিয়ে আবার দিনে ফিরে আসা বাস্তবিক অর্থেই অসম্ভব।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রস্তুতি : পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত বছরের মতো এবারো কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। আইনগত কারণে উখিয়ার ইনানী থেকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের সুযোগ নেই।
গত ২৭ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে নীতিগত সম্মতি প্রদানের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে ১২ নির্দেশনা : সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ১২টি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্টমার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। ভ্রমণের সময়সূচি ও পর্যটক সংখ্যা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বরে পর্যটকরা কেবল দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না।
ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন।
দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ। কেয়া বনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা যাবে না। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যে কোনো মোটরচালিত যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। পলিথিন বহন করা নিষিদ্ধ এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক (যেমন চিপস প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, মিনিপ্যাক সাবান ও শ্যাম্পু, ৫০০ বা ১০০০ মিলি লিটারের বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
























