রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢেউয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত সেন্টমার্টিন, তছনছ হয়ে গেছে ১১ হোটেল-রিসোর্ট

প্রকাশিত : ০৭:০৮ পূর্বাহ্ণ, ২৯ জুলাই ২০২৫ মঙ্গলবার ৪৭ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টির কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সেন্টমার্টিন দ্বীপ। উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে কক্সবাজারের টেকনাফ প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন অংশ। জোয়ারের আঘাতে সেখানকার সমুদ্র তীরবর্তী ১১টি হোটেল-রিসোর্ট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুই দিনে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বড় বড় ঢেউ যেন তাণ্ডব চালিয়েছে। পাকা স্থাপনাসহ ১১টি হোটেল তছনছ হয়ে গেছে। উপড়ে পড়েছে বহু গাছপালা।

ক্ষতির শিকার হোটেলগুলো হলো হোটেল অবকাশ, নোনাজল বিচ রিসোর্ট, আটলান্টিক রিসোর্ট, বিচ ক্যাম্প রিসোর্ট, নিল হাওয়া বিচ রিসোর্ট, শান্তি নিকেতন বিচ রিসোর্ট, মেরিন বিচ রিসোর্ট, পাখি বাবা রিসোর্ট, সি-ভিউ রিসোর্ট, ড্রিমার্স প্যারাডাইস রিসোর্ট, সানডে বিচ রিসোর্ট।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১-৩ ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় দ্বীপের বিভিন্ন অংশের গাছপালা ভেঙে পড়েছে। লোকালয়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এমন ভয়াবহতা এর আগে দেখেনি দ্বীপবাসী। ঢেউয়ের আঘাতে ১১টির মতো হোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

সেন্টমার্টিনের মাঝের পাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘বিচ সংলগ্ন হোটেলেগুলো জোয়ারের পানির আঘাতে অধিকাংশ তলিয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি ভেসে উঠছে। এবারের মতো এত ভাঙন আগে দেখিনি।’

আরেক বাসিন্দা আলী আহমদ বলেন, ‘গত দুই দিনের জোয়ারের পানিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সেন্টমার্টিনের চারপাশ। সুতরাং সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হলে টেকসই বেড়িবাঁধের কোনো বিকল্প নেই।’

তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন ভিন্ন কথা। কক্সবাজার ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক বলেন, ‘জোয়ারের পানির আঘাতে যে হোটেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই হোটেলগুলো মূলত সরকারি অনুমোদন ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটা হোটেলের বিরুদ্ধে বালিয়াড়ি দখলেরও অভিযোগ উঠেছে।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানির আঘাতে বেশ কয়েকটি হোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুনেছি। বিষয়টি আমরা দেখছি, আরও খোঁজখবর নিচ্ছি।’

অপরদিকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ৭ নম্বর, ৮ নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে একটি এলাকা। এ এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। চতুর্পাশে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদী ঘেরা। তবে সাগর তীরবর্তী শাহপরীর দ্বীপের গোলাপাড়া, পশ্চিম পাড়া, দক্ষিণপাড়া, ডাঙ্গর পাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাজারপাড়া ও জালিয়াপাড়া এলাকায় মানুষগুলো বেশি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। বাধ ভেঙে গেলে পুরো দ্বীপের মানুষ বসতি হারাবে।

সাগর তীরবর্তী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জুন মাসে ১৫১ কোটি টাকার খরচ করে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কিছু দিনের মধ্যেই বাধের সিসি ব্লকগুলো ধসে পড়ে।

শাহপরীর দ্বীপ রক্ষা ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি প্রবীণ শিক্ষক জাহেদ হোসেন বলেন, ‘১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপে পশ্চিম পাশে ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। সেই ১ কিলোমিটার ভাঙা বাঁধ নির্মাণে ১০ বছরে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে পাউবো। দুর্নীতির কারণে বেড়িবাঁধ হয়ে ওঠেনি। ওই সময়ের জলোচ্ছ্বাসে শাহপরীর দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার একরের চিংড়ির ঘের ও ফসলি জমি সাগরগর্ভে তলিয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অন্তত চার হাজার ঘরবাড়ি। প্রায় তিন বছর আগে ১৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধটির সিসিব্লক ধসে পড়ার ঘটনায় দ্বীপের লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।’

বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজে তাড়াহুড়ো ছিল বলেও মন্তব্য করেন সাবরাং ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ টেকসই ছিল, কিন্তু দক্ষিণপাড়া অংশে যেখানে সাগরের আগ্রাসন বেশি, সেখানে এসে তাড়াহুড়া করে কাজ শেষ করায় বাঁধের কাঠামো দুর্বল হয়েছে। যে কারণে কিছু দিনের মাথায় ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। আর এখন বর্ষা মৌসুমে বাঁধের উপর দিয়ে জোযারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার পাশাপাশি বাধটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পুরো এলাকার মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।’

টেকনাফ উপজেলা জ্যৈষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা ও সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের বেড়িবাধের উপর দিয়ে শনিবার , রোববার ও সোমবার জোয়ারের পানি বেড়িবাধ টপকে লোকালয়ে প্রবেশ করায় এলাকার প্রায় চার হাজার পরিবারের ২০ হাজারের বেশি মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আজ রাতেও একই অবস্থা হলে বেড়িবাঁধটি বিলীন হয়ে যেতে পারে।’

পাউবো টেকনাফের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘জোয়ারের পানি বেড়ে গিয়ে বাঁধ টপকে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। বিষযটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT