সোমবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
◈ ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিতে ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা: বদিউল আলম ◈ সার্কিট ব্রেকারের শীর্ষে চার কোম্পানির শেয়ার ◈ নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ৬ মাসের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন ◈ গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধন অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত ◈ ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ◈ স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর যুবকের আত্মহত্যা: পুলিশ ◈ ভারি বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হতে পারে ৯ জেলার নিম্নাঞ্চল ◈ টাইফয়েডের টিকা পাবে ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশু, দিবে যেদিন থেকে ◈ মেগাসিরিয়াল ‘খুশবু’র আইটেম গানে মাহি ◈ মৃত্যুর পাঁচ বছর পর এন্ড্রু কিশোরকে কর পরিশোধের নোটিশ

জমির মৌজামূল্যে বড় সংস্কার আসছে

প্রকাশিত : ০৬:৪০ পূর্বাহ্ণ, ২০ মে ২০২৫ মঙ্গলবার ৬৩ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

কালোটাকা তৈরি ও কর ফাঁকি প্রতিরোধ করতে আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটে জমির মৌজামূল্য নির্ধারণে আনা হচ্ছে বড় ধরনের সংস্কার। বিদ্যমান মৌজার মূল্য তুলে দিয়ে জমির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ হবে বাজারভিত্তিক। অর্থাৎ যে দামে জমি কেনাবেচা হবে, সে দামেই হবে নিবন্ধন বা দলিল। আর সে মূল্য নির্ধারণ করবে যৌথভাবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি প্রতিবছর এর হালনাগাদও করা হবে। যার তথ্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত ডাটাবেজ প্রকাশ পাবে। এছাড়া মৌজামূল্যের সঙ্গে হারাহারিভাবে (আনুপাতিক হারে) জমির রেজিস্ট্রেশন ফি, আয়কর, মূসক ও স্থানীয় সরকারসংক্রান্ত করের বিদ্যমান হার থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সূত্র আরও জানায়, আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটে স্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তরমূল্য বাজারমূল্যের সঙ্গে যৌক্তিকরণের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। সে লক্ষ্যে একটি নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সে খসড়া নীতিমালার ওপর আজ মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে এ নীতিমালায় অনুমোদন দিতে পারেন তিনি।

জানা গেছে, জমির মূল্য বাজারভিত্তিক নির্ধারণ করতে এর আগে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চারটি বৈঠক করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এছাড়া জমির প্রকৃত বাজার ও মৌজা দরের তারতম্য দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে এমন তথ্য জানিয়ে ২০২০ সালের ২৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। এতে বাজারমূল্য নির্ধারণ বিধিমালা সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।

জানতে চাইলে সাবেক অর্থসচিব (সিনিয়র) মাহবুব আহমেদ জানান, মৌজার মূল্য বাতিল করে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর কারণে যদি বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয় এতে জমির মূল্য বেড়ে যাবে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমান জমির মূল্য অনেক বেশি। নতুন করে আরও মূল্য বাড়লে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের খরচ বাড়বে। ফলে অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণের সুদ, জমির অধিক মূল্য বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করবে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতা হারাবে সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মিলন জানান, জমির গেইন টেক্স, রেজিস্ট্রেশন ফি, ভ্যাট ও স্থানীয় কর কমানোর প্রস্তাব রিহ্যাবের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করলে জমি ও ফ্ল্যাট বেচাকেনায় রাজস্ব কমবে না, আরও বাড়বে। আশা করছি আগামী বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। জমির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ উপদেষ্টার কাছে। সেখানে বলা হয় বাজারমূল্য বৃদ্ধির অনুপাতে জমির রেজিস্ট্রেশনসংক্রান্ত সব ধরনের কর কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (আয়কর ও মূসক), আইন মন্ত্রণালয় (রেজিস্ট্রেশন ফি) এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় (স্থানীয় সরকার কর) একযোগে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আর হারাহারিভাবে রেজিস্ট্রেশন ফি, আয়কর, মূসক এবং স্থানীয় সরকার কর কমানো হবে বিধায় সরকারের মোট রাজস্ব আয় হ্রাস পাবে না। এতে রেজিস্ট্রেশন খরচ হ্রাস পাবে বিধায় জমি রেজিস্ট্রেশনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে রাজউকসহ অন্যান্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসমূহ, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এবং গৃহায়ন ও পণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে জমির বাজারমূল্য হালনাগাদ করবে। আর আইন মন্ত্রণালয়-রেজিস্ট্রেশন ফি যৌক্তিকভাবে কমানো এবং সারা দেশের অন্যান্য জমির মৌজামূল্যের পরিবর্তে বাজারমূল্য নির্ধারণ করবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডসমূহের জমির হস্তান্তরমূল্য বাজারমূল্যে নির্ধারণ করবে। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ বাজারমূল্য বৃদ্ধির অনুপাতে রেজিস্ট্রেশনসংক্রান্ত সব কর আনুপাতিক হারে কমাবে।

জানা গেছে, বর্তমান সরকারের ‘নিবন্ধন অধিদপ্তর’ পূর্ববর্তী দুবছরের নিবন্ধিত মৌজামূল্যকে বিবেচনায় নিয়ে মৌজামূল্য নির্ধারণ করছে। প্রায় সব দলিল মৌজামূল্যে রেজিস্ট্রি হয় বিধায় পরবর্তী বছরে মোজামূল্য তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এছাড়া রাজউক মৌজাভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ না করে অঞ্চলভিত্তিক মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। তবে এখনো তা চালু হয়নি। অন্যান্য কর্তৃপক্ষের মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), গাজীপুর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এখনো মৌজাভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করছে। আর গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২০১১ এবং ২০১৬-এর নির্ধারিত মৌজামূল্যকে ভিত্তি ধরে সর্বশেষ ২০২১ সালে নতুনভাবে মৌজামূল্য নির্ধারণ করছে। তবে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কী উপায়ে মূল্য নির্ধারণ করছে তা জানা যায়নি। বর্তমান বাজারমূল্যের তুলনায় রেজিস্ট্রেশন মূল্য কম হওয়ার কারণে সরকার রাজস্ব কম পায়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা তথ্য অনুসারে মৌজার মূল্যে জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় সরকার প্রতিবছর ছয় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

সূত্রমতে, মৌজাদর নির্ধারণের কাজটি হয় ‘সর্বনিম্ন বাজারমূল্য বিধিমালা’ অনুযায়ী। সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌজাদর সর্বশেষ নির্ধারণ করা হয় ২০১৬ সালে, এখনো সেই দরে নিবন্ধন চলছে। সে হিসাবে ঢাকার গুলশান সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অধীন মৌজা আছে ১৪টি। এ ১৪ মৌজায় ৮ ধরনের জমি আছে। মৌজাদর অনুযায়ী ধরনভেদে এ এলাকার ১ শতাংশ জমির দাম ১ লাখ থেকে ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু গুলশানের কোথাও কোটি টাকার নিচে ১ শতাংশ জমি কেনাবেচা হয় না। ধানমন্ডি এলাকার মৌজাদর অনুযায়ী ১ শতাংশ জমির দাম ৪৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ধানমন্ডির কোথাও এ দামে জমি বেচাকেনা হয় না।

অর্থ বিভাগ মনে করছে, বাজারমূল্য গোপন রেখে মৌজামূল্যে লেনদেন করলে অতিরিক্ত অর্থ নগদে লেনদেন হয়, যা হিসাববহির্ভূত অর্থে পরিণত হয়। এছাড়া মৌজামূল্য ব্যবহার করে কর ফাঁকি ও কালোটাকা লেনদেন দেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। উচ্চমূল্যের জমি কম মূল্যে রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় ধনী ব্যক্তিরা কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে।

জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সম্পত্তি নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ এক হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা, আয়কর বাবদ ছয় হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা, মূল্য সংযোজন কর বাবদ ৩৬৮ কোটি টাকা, স্ট্যাম্প ফি ৭৭ কোটি টাকা, স্থানীয় কর ফি তিন হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ফি বাবদ আদায় হয়েছে ২৬২ কোটি টাকা।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT