শনিবার ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে পাহাড় কাটছেন আ.লীগ নেতারা

প্রকাশিত : ০৮:৫১ পূর্বাহ্ণ, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ রবিবার ১০১ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

পাহাড় ও টিলা কাটার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকলেও এসবের কোনো কিছুই পাত্তা দিচ্ছেন না চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারা। বরং প্রতিনিয়ত পাহাড় কেটে তৈরি করছেন আবাসিক এলাকা। দলীয় পরিচয় থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন সময় মামলা করলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে অভিযান চালিয়েও সুফল মিলছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় থানা পুলিশের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে পাহাড়খেকোরা ঠিকই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বর্ষার ভারি বর্ষণের সময়। প্রতি বছর পাহাড় ধসে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। গত ১৭ বছরে পাহাড় ধসে ২৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। যদিও বর্ষায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয় জেলা প্রশাসন। পরে এসব বাসিন্দারা আবারও ফিরে যান পুরোনো ঠিকানায়।

সরেজমিন নগরীর আকবর শাহ থানার মিরপুর আবাসিক এলাকা, শাপলা আবাসিক এলাকা ও ইমাম নগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়-স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং থানা পুলিশ ম্যানেজ করে সেখানে প্রতিদিন পাহাড় কাটছে সংঘবদ্ধ চক্র। ইমাম নগর এলাকায় অন্তত ৪৫-৫০ ফুট উচ্চতার পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। সেখানে বিভিন্ন আকারের প্লট বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া মিরপুর আবাসিক এলাকায় প্রবাসী আবাসন প্রকল্প নামে একটি প্লটে টিলাসহ চারদিকে বাউন্ডারি দেওয়া রয়েছে। জানা গেছে, কিছুদিনের মধ্যে প্লটটির ভেতরের মাটি সমতল করার কাজ শুরু হবে। কিন্তু মালিকপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে এ এলাকার অধিকাংশ ঘরবাড়ি পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে।

প্রবাসী আবাসন প্রকল্পের মালিকপক্ষের মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় এক কাউন্সিলরের কাছ থেকে তিন গ্লা এবং অন্য একজন ব্যক্তির কাছ থেকে তিন গ্লাসহ মোট ছয় গ্লা জায়গা ৩৫ জন প্রবাসী মিলে ক্রয় করেছেন। সেখানে বহুতল ভবন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং থানা পুলিশের অনুমতি পেলে মাটি কাটার কাজ শুরু করা হবে।’

সূত্র জানায়, ২০ এপ্রিল নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দ্রনগর এলাকায় নাগিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটার বেশকিছু সরঞ্জাম জব্দ করেছে জেলা প্রশাসন। এসময় সেখানে গড়ে তোলা প্রায় আটটি কাঁচা টিনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়া পাহাড়ের চারপাশে দেওয়া টিনের বেড়া অপসারণ করা হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় নাগিন পাহাড় কাটার অভিযোগে ১৮ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে বায়েজিদের জালালাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহার উদ্দিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শামসুদ্দিনও রয়েছেন। এ দুজনকে ২০২১ সালে ওই এলাকায় পাহাড় কাটার দায়ে ছয় লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছিল।

এর আগে ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর নাগিন পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের দায়ে ২২ ব্যক্তিকে ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। এছাড়া ১৮ জানুয়ারি নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ করার খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতি সর্ববিদ্যা। ৯২ ব্যক্তি সেখানে স্বপ্নীল ফ্যামিলি ওনার্স নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনটি ভবন নির্মাণ করছিলেন। ঘটনাস্থলে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া না যাওয়ায় জরিমানা করতে পারেনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাহাড় কাটার অভিযোগে জড়িতদের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ২০২১ সালে ছয়টি ও ২০২২ সালে ২০টি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, প্রভাবশালীদের লোভের শিকার হয়ে চট্টগামে একে একে পাহাড় যেমন নিশ্চিহ্ন হচ্ছে তেমনি ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। পরিবেশ ভারসাম্য ঠিক রাখতে চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় আমরা বহু বছর আগ থেকে বলে আসছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা! পাহাড় রক্ষায় সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত না জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবেন ততক্ষণ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নিবৃত্ত হবেন না।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT