বুধবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২রা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পলিশে বছরে নষ্ট ৭২০০ কোটি টাকার চাল

প্রকাশিত : ০৪:৩২ পূর্বাহ্ণ, ৭ এপ্রিল ২০২৪ রবিবার ৮১ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

ছাঁটাই বা পলিশের মাধ্যমে প্রতি বছর সাত হাজার ২৬০ কোটি টাকার চাল বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পলিশ করে সাধারণ চাল উন্নতমানের বলে বাজারজাত করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও তা বন্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো সরকারি পদক্ষেপ নেই।
অপরদিকে চালের ওপরের লাল আস্তরণ পলিশিংয়ের ফলে চালের গুণগতমান তথা পুষ্টি অর্ধেক কমে যায়। অতিসাদা ধবধবে চাল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। পলিশিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ চাল নষ্ট হলেও তা প্রতিরোধে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তর নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, প্রতি ১০০ টন চাল পলিশ করায় কমপক্ষে ৫ মেট্রিক টন চাল কমে যায়। সে হিসাবে বছরে ১৫ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন চাল বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এত বিপুল পরিমাণ চাল নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। চালের বস্তায় ধানের জাত লেখার বিষয়ে পরিপত্র জারি হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে চাল পলিশ বন্ধ করা হবে।

তিনি বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের সাফ বলে দিয়েছি, চাল পলিশের ব্যবসা আর চলবে না। আমরা আর এ সুযোগ দিতে চাই না।

জানতে চাইলে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, চাল পলিশের বিষয়টি সত্য। সবাই জানেন এবং বোঝেন। কম দামের চাল পলিশ করে চিকন করা হয়। সেই চাল অর্থাৎ ৫০ টাকা কেজি দরের চাল পলিশের পর ৮০ টাকা করে কেজি বিক্রি করা হয়।

প্রতি কেজি চালে তারা ৩০ টাকা লাভ করছেন। সেই হিসাবে প্রতি মণে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত ১ হাজার ২০০ টাকা লাভ করছেন। কিন্তু ভোক্তা ঠকছে। ভোক্তার পকেট কাটা হচ্ছে। ভোক্তা অপুষ্টিতে ভুগছে।

তিনি আরও বলেন, রাইস পলিশিং করে যে আবরণটা বের করে ফেলা হয় তা থেকে রাইসব্রান তেল উৎপাদন সম্ভব। এটি করতে পারলে দেশে তেলের বার্ষিক চাহিদার ৩০ শতাংশ কমে যেত। উল্লেখ্য, দেশে এখনও কিছু প্রতিষ্ঠান রাইসব্রান তেল উৎপাদন করছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ হ্যাস্কিং অটো-রাইস মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. লায়েক আলী বলেন, বছরে ১৫ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন চাল বাতাসে উড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। চাল ছাঁটাইয়ের সময় ওপরের কালো আবরণটা পরিষ্কার করা হয়। এর বেশি পলিশ করা হয় না। কম দামের চাল পলিশ করে উচ্চমূল্যে বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা মিথ্যা অভিযোগ।

লায়েক আলী আরও বলেন, কম দামের চাল সব সময় আকারে ছোট হয়। এই চাল পলিশ করে চিকন করা গেলেও লম্বা তো করা যায় না। বাজারে বেশি দামের যত চাল পাওয়া যায় সবইতো লম্বা চাল।

সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, ব্যবসায়ীদের বক্তব্য সত্য নয়। দেশে তো মিনিকেট নামে কোনো জাতের ধান চাষ হয় না। তাহলে বাজারে মিনিকেট চাল কোথা থেকে আসে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, চালের ওপরের যে আবরণটা পলিশ করা হয়, তা দিয়ে ভাত কিংবা সুজি কোনোটাই হয় না। পলিশ করা চকচকে চালের চাহিদা বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা চাল পলিশ করছেন। ধবধবে সাদা চাল গৃহিণীদের পছন্দের শীর্ষে।

উচ্চ মূল্যের জিরাশাইল, নাজিরশাইল, লতা, বাসমতি চাল পলিশ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। এছাড়া ইরি-২৮, ইরি-২৯, রঞ্জিত, শম্পাকাটারি, পঞ্চাশ ও অন্যান্য জাতের ধান পলিশ করে চিকন চালে রূপান্তর করে বাজারজাতের অভিযোগ অনেক দিনের।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীরা কম দামের চাল পলিশ করে বেশি দামে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি উপজাত হিসাবে চালের ওপরের আবরণ প্রতি মন বিক্রি করছেন ১ হাজার ৮শ থেকে দুই হাজার টাকা। এই আবরণ থেকে রাইসব্রান তেল উৎপাদন করা হয়। চালের উপজাত চলে যাচ্ছে ভারতে।

বাংলাদেশ ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, চাল থেকে আমরা যে ভিটামিন বি পাই সেটি আসলে চালের আবরণ বা বাইরের অংশেই বেশি থাকে। পলিশিংয়ের ফলে ফাইবারটা নষ্ট হয়ে যায়। এতে বিপাক প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে অবিসিটি বা মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

অতি সাদা ধবধবে চাল দেরিতে হজমের ফলে রক্তে চিনি মিশে যাচ্ছে। এতে ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের হঠাৎ রেগে যাওয়া, কথায় কথায় রাগ করার প্রবণতা খাদ্য সমস্যার কারণে হচ্ছে বলে জানান এই পুষ্টিবিদ।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT