বৃহস্পতিবার ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে অনেক নামকরা রেস্টুরেন্ট

প্রকাশিত : ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ, ৪ মার্চ ২০২৪ সোমবার ১১০ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

ঢাকা এখন রীতিমতো রেস্টুরেন্টের নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার এমন কোনো অলিগলি নেই, যেখানে রেস্টুরেন্ট পাওয়া যাবে না। বেইলি রোড, ধানমন্ডি, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর এলাকা যেন রেস্টুরেন্ট হাব। রাস্তার দুই পাশে আবাসিক ভবনে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অংসখ্যা হোটেল-রেস্তোরাঁ। যথাযথ মনিটরিং ও সক্ষমতার অভাবে এসব রেস্টুরেন্ট থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যৎসামান্য ভ্যাট আদায় করতে পারছে। যদিও এ খাতে ভ্যাট আদায়ের বিপুল সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মোট দেশ উৎপাদন বা জিডিপিতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতের অবদান জানতে ২০২২ সালে একটি জরিপ চালায়। জরিপের তথ্য মতে, ২০০৯-১০ সালে যেখানে দেশে হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার, সেখানে ২০২১ সালে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৩৬ হাজারে। এক দশকে জিডিপিতে মূল্য সংযোজন বেড়ে হয়েছে আট গুণ। এক দশক আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে মূল্য সংযোজন হয়েছিল মাত্র ১১ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাত থেকে মূল্য সংযোজন হয়েছে ৮৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা।

ভ্যাট আইন অনুযায়ী, পণ্য ও সেবার বিপরীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে প্রতি মাসে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর দায়িত্ব। কিন্তু অনেক রেস্টুরেন্ট ভ্যাট আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না। বছর দুয়েক আগে এনবিআর ভ্যাট ফাঁকি রোধে রাজধানীজুড়ে নিয়মিত অভিযান চালালে নামিদামি অনেক রেস্টুরেন্টের ভ্যাট ফাঁকির চাঞ্চল্যকর তথ্য জনসমক্ষে আসে। গুলশানের পূর্ণিমা রেস্টুরেন্ট, মাদানি অ্যাভিনিউ’র শেফস টেবিল, ধানমন্ডির স্টার রেস্টুরেন্ট, গুলশানের খানা খাজানা, দ্য মিরাজ, র’ ক্যানভাসের মতো রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করা হয়। বর্তমানে সেই অভিযান কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে খিলগাঁও ও ভাটারা এলাকার কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে ভ্যাট নেওয়া হয় না। আবার অনেক রেস্টুরেন্ট নিজস্ব সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় করছে। সেই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভ্যাট আদায়ের দায়িত্বে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ব্যবসা চালাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ খিলগাঁও-এ কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ভ্যাট আদায় করা হয় না। হাতের লেখা কাগজে ভোক্তাদের কাছ থেকে বিল আদায় করা হয়। বিক্রির তথ্য গোপন করতে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে বিল নেওয়া হয় না। একই অবস্থা ভাটারা এলাকার সুলতান ডাইন রেস্টুরেন্টের। এ এলাকার আরেকটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ হচ্ছে ম্যাগপাই। এই রেস্তোরাঁতেও ভ্যাট আদায় করা হয় না।

খিলগাঁও এলাকা ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন। এ কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদী বলেন, খিলগাঁও এলাকার হোটেল রেস্টুরেন্ট থেকে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে ইএফডি মেশিন স্থাপনের কাজ চলমান আছে। তবে জনসচেতনতা ছাড়া ভ্যাট আদায় বাড়ানো সম্ভব নয়। কারণ মাঠ পর্যায়ের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট আদায় ছাড়াও শিল্প-কলকারখানা থেকে ভ্যাট আদায়ে কাজ করতে হয়, রিটার্ন যাচাই-বাছাই ছাড়া আরও অনেক কাজ থাকে। তাই তার পক্ষে সার্বক্ষণিক মনিটরিং দুরূহ ব্যাপার। ভোক্তারা এগিয়ে না এলে সিস্টেম দিয়ে কখনোই শতভাগ ভ্যাট আদায় করা যাবে না।

গত ৩ বছরে করের বোঝা কমিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়াতে এনবিআর হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের ভ্যাট ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। আগে সব ধরনের রেস্টুরেন্টকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হতো। ২০২১ সালে প্রথম দফায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্টুরেন্টের ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এরপরও এনবিআর কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে ভ্যাট আদায় করতে পারছে না। খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট আদায় বাড়াতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ থাকলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প ও ইএফডি মেশিনের মধ্যকার কারিগরি ত্রুটির কারণে মেশিন স্থাপন কালক্ষেপণ হচ্ছে। ইএফডি মেশিনে দোকানে বিক্রির ডাটা রিয়েল টাইমে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সার্ভারে সংরক্ষণ থাকার কথা। কিন্তু ত্রুটির কারণে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সিনক্রোনাইজ হচ্ছে না। এ ত্রুটি শনাক্তে এনবিআরের আইটি টিম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইটি টিম এবং ইএফডি মেশিন স্থাপনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস একসঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া যেসব হোটেল-রেস্টুরেন্ট নিজস্ব সফটওয়্যারের মাধ্যমে হিসাব সংরক্ষণ করে সেসব দোকানে এসডিসি (সেলস ডাটা কন্ট্রোলার) মেশিন স্থাপন করা হবে, যাতে ওই দোকানের বিক্রির তথ্য রিয়েল টাইমে ভ্যাট অনলাইনের সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে।

এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য ড. মইনুল খান বলেন, খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট আদায়ে এনবিআর তৎপর রয়েছে। তাই গত বছরের জুলাইতে ইএফডি মেশিন স্থাপনে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। ফলে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৬ হাজার নতুন ইএফডি মেশিন বসানো হয়েছে। আগামী জুন নাগাদ ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরও ৬০ হাজার মেশিন স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যেই জরিপ চালানোর মাধ্যমে যেসব দোকানে, শপিংমলে মেশিন স্থাপন করা হবে, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT