চট্টগ্রামের ৯টি আসনে ভোটের দিন সহিংসতার শঙ্কা
প্রকাশিত : ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ, ৬ জানুয়ারি ২০২৪ শনিবার ৯৩ বার পঠিত
চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে ৯ আসনে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন ভোটাররা। এসব আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিপরীতে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। বেশিরভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের। এর মধ্যে একজন বর্তমান সংসদ-সদস্যও রয়েছেন। ইতোমধ্যে এসব আসনে কয়েক দফা নির্বাচনি সংঘাত হামলা ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। এরপর থেকে ভোটারদের মাঝে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। পাশাপাশি এসব আসনে অতিরিক্ত নজরদারি করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নগরীর ৬টি সংসদীয় আসনের ৬৬০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৪৬টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ২১৪টি কেন্দ্রকে ‘সাধারণ কেন্দ্র’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। একই ভাবে চট্টগ্রাম জেলার ১০টি সংসদীয় আসনের ১৩৬৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১০১৩টি ভোট কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ৩৫০টি ভোটকেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে চারজন ও কম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে বা সাধারণ ভোটকেন্দ্রে তিনজন সশস্ত্র পুলিশ এবং ১৫ আনসার সদস্য থাকবেন। পাশাপাশি মোবাইল টিম, থানা এবং কন্ট্রোল রুমে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডের কে-নাইন ইউনিটকেও স্ট্রাইকিং হিসাবে রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপি-জামায়াত ভোটের মাঠে না থাকায় কিছু কিছু আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র। যেসব আসনে ভোটের দিন সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। ইতোধ্যে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-৩ স্বন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ), চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম জেলার আলোচিত এসব আসনে সহিংসতা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে ভোটারদের। তবে পুলিশ কর্মকর্তারাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভৌগলিক অবস্থান এবং ‘প্রভাবশালী প্রার্থীর’ বাসাবাড়ি বিবেচনায় নিয়ে এসব আসনকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসাবে চিহ্নিত কেন্দ্রে থাকবে তাদের বাড়তি নজর।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) ও চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনের নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর রেষারেষি ক্রমশ বাড়ছে। তাতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনের দিন সংঘাতের আশঙ্কা করছেন ভোটারা। চট্টগ্রাম-৩ আসন (সন্দ্বীপ) আসনে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের একাধিকবার নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পালটাপালটি অভিযোগের মধ্যে মামলা হয়েছে চারটি। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন চিকিৎসক নেতা জামাল উদ্দিন চৌধুরী। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন মাহফুজুর রহমান মিতা। সেবার জয় পান বিএনপির মোস্তফা কামাল পাশা। এবার নৌকার প্রার্থী মিতা আর স্বতন্ত্র জামাল উদ্দিন চৌধুরী। নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে। এ কারণে ভোটাররা অনেকটা ভয়ের মধ্যে রয়েছেন।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সবচেয়ে ঝুঁঝিপূর্ণ আসন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া)। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী (নৌকা)। নৌকা প্রতীক না পেয়ে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করছেন টানা তিনবারের সংসদ-সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। তার প্রতীক ঈগল। নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা একাধিকবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের ওপর হামলা করেছে। অনেকে আহত হয়েছে। এ দুই প্রার্থী ঘিরে ইতোমধ্যে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতারা। নেতাকর্মীরা প্রচারণাও চালিয়েছেন বিভক্ত হয়ে। ইতোপূর্বে প্রচারণা ঘিরে সংঘাতও হয়েছে একাধিকবার। এ কারণে পটিয়া আসনে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।
১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য প্রার্থী এমএ মোতালেবের সমর্থক এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে নৌকা প্রতীকের স্লোগান দিয়ে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গভীর রাতে সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিদোয়ানুল ইসলাম সুমনের বাড়ি ইছানগরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেবের প্রচার কাজে নিয়োজিত একটি মাইক্রো, পুলিশ পরিবহণে নিয়োজিত সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর করে। ২১ ডিসেম্বর চরতি এলাকায় বর্তমান এমপি প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর স্ত্রী ও চরতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল্লার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেবের সমর্থকরা জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়।
পালটাপালটি তিনটি মামলাও হয়েছে সাতকানিয়া থানায়। আসনটিতে ১৫৭টি ভোটকেন্দ্র। এরমধ্যে সাতকানিয়ার ৯০টির মধ্যে ৫৫টি এবং লোহাগাড়া ৬৭টি কেন্দ্রের সবগুলোকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করে শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব নির্বাচনি সংঘাতে একাধিক মামলাও হয়েছে। জড়িত একাধিক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব কারণে ভোটররা আশঙ্কা করছেন নির্বাচনের দিন সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে উভয়পক্ষই।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ সব ভোট কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে। কোনো ধরনের সংঘাতের সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
























