মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ন্যায়বিচারের পথ এত কঠিন কেন, প্রশ্ন রোহিঙ্গাদের

প্রকাশিত : ০৬:০০ অপরাহ্ণ, ২৫ আগস্ট ২০২৩ শুক্রবার ১১৬ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

আমরা দাঁড়িয়ে আছি- বেঁচে থাকা, সাক্ষী এবং গণহত্যার শিকার হিসেবে। সেই মর্মান্তিক দিনের পর ছয় বছর পার হয়ে গেছে, তবুও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ন্যায়বিচারের সন্ধান অধরা। আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি, ন্যায়বিচারের পথ এত কঠিন কেন? যত দিন যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের আস্থা কমছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের আবেদন, সবার প্রচেষ্টাকে একত্রিত করে রোহিঙ্গা সংকটের একটি সমাধান করুন। কার্যকর পদক্ষেপের সময় এখনই।

শুক্রবার বাস্তুচ্যুত হবার অর্ধযুগ পূরণ হওয়ার দিনে গণহত্যার বিচার ও নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে সমাবেশ করেছেন রোহিঙ্গারা। এ সময় তারা এসব কথা বলেন। এর আগে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে স্বউদ্যোগে এ সমাবেশ করেছেন রোহিঙ্গারা।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে জড়ো হন রোহিঙ্গা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। সমাবেশ ও দাবি নিয়ে তারা অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সংশ্লিষ্টরাও তাদের এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করছেন।

শুক্রবার সকালে উখিয়া-টেকনাফের একাধিক ক্যাম্পের নির্ধারিত স্থানে পৃথক সমাবেশস্থলে আশা শুরু করেন তারা। সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয় কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে। সমাবেশে ২০১৭ সালের এই দিনে মিয়ানমার সরকার ও তাদের দোসর রাখাইন কর্তৃক নির্মম গণহত্যার বিচার ও বাপদাদার ভিটায় ফেরার দাবি জানান রোহিঙ্গারা।

উখিয়ার ৯, ১৪, ১৩, ১৭, ২ ওয়েস্ট, ১ ওয়েস্ট, ৪ ও ১৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং টেকনাফের জাদিমুরা ক্যাম্পের নির্ধারিত স্থানে সকাল ৮টা থেকে সমাবেশে আসা শুরু করেন রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পগুলোর পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পের রোহিঙ্গারাও অংশ নেন।

রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলেই ডাকা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে আরাকানের গ্রামে গ্রামে প্রত্যাবাসন, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত প্রত্যেক চুক্তি ও প্রক্রিয়ায় অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ, এনজিও, সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা, বার্মার ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, সম্পত্তি ফেরত, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারসহ নানান দাবি উত্থাপন করা হয় সমাবেশে।

সমাবেশে ইংরেজিতে লেখা লিফলেট প্রচার করা হয়। সেখানে তারা উল্লেখ করেছেন-আজ যখন আমরা রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবসের ৬ষ্ঠ বার্ষিকী স্মরণে জড়ো হয়েছি, তখন আমাদের সেই ট্র্যাজেডির ক্ষণগুলো খুব বেশি তাড়িত করে চলেছে। এই দিনটি রোহিঙ্গাদের দ্বারা সহ্য করা ক্ষতি, দুর্ভোগ এবং অকল্পনীয় নৃশংসতার বেদনা স্মরণ করিয়ে দেয়।

আমরা নতমস্তকে বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, এমন কঠিন সময়ে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় জন্য।

আমাদের আশাগুলো বাংলাদেশের অবিচল অংশীদারিত্বের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ, আসিয়ান এবং বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টায় নোঙর করে। আমরা আসন্ন গ্রীষ্মের মধ্যে নিরাপত্তা এবং মর্যাদার নিশ্চয়তাসহ আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে চাই।

অপর্যাপ্ত অগ্রগতি বিদ্যমান থাকলে, আমরা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বাসকারী রোহিঙ্গারা নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না। একদিন আরাকানের দিকে রোডমার্চ এবং সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারে ফিরে যাব আমরা।

এ দিনটিকে কেবল ট্র্যাজেডির স্মারক নয়, বরং কর্মের আহ্বান হিসেবে স্মরণ করি। আমাদের কণ্ঠস্বর যন্ত্রণার ঊর্ধ্বে উঠুক, রোহিঙ্গা জনগণের বিচারের দাবিতে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এমন একটি বিশ্বের জন্য পথ প্রশস্ত করুক- যেখানে এ ধরনের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি না হয় এবং যেখানে সমস্ত সম্প্রদায় শান্তি, সম্প্রীতি এবং নিরাপত্তায় বসবাস করতে পারে।

রোহিঙ্গা নেতা ডা. জুবায়ের বলেন, সম্মানজনক প্রক্রিয়ায় আমরা নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই। আমাদের আশা সমাবেশে উত্থাপিত রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক দাবিগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্ব পাবে।

টেকনাফের মুচনি ক্যাম্পের মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের মূল দাবি সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরতে চাই। বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, আমরা কৃতজ্ঞ।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে নিজ দেশে বাড়ি ফিরার আকুতি জানিয়েছেন।

ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়করা জানান, রোহিঙ্গারা নিজেদের দাবি নিয়ে সুশৃঙ্খল সমাবেশ করেছেন। ক্যাম্প এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও সবদিকে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে নতুন করে পালিয়ে আসে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা। সরকারি হিসাবে এদের বর্তমান সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ।

বিশ্লেষকরা এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় দেখছেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন। তাই যেকোনো উপায়ে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT