রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দানের টাকার ওপরও দুর্নীতির থাবা

প্রকাশিত : ০৫:৫০ অপরাহ্ণ, ২২ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার ২৭৯ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

সম্পূর্ণ দান ও অনুদানে পরিচালিত বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা-বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানেও দুর্নীতির থাবা পড়েছে। ট্রান্সফরমার স্থাপন, বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটা, জনবল নিয়োগসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি। আর্থিকসংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন-১০টি অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছে এ কমিটি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটিতে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) উপসচিব ড. মোকতার হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতি অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পরিচালনা কমিটি ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছি। আমার দায়িত্বটা খণ্ডকালীন। পরিচালনা কমিটির নির্বাচন দিয়ে আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করব। পরবর্তী নির্বাচিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে দুদকসহ যে কোনো স্থানে মামলা করতে পারবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তারা কেউই এখন দয়িত্বে নেই। তবে আমি তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও সমবায় মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি।’

প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা-বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়টি তদন্তে ২৮ ফেব্রুয়ারি সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) মোহাম্মদ রবিউল ইসলামকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। কমিটির অপর তিনজন হলেন-সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) মোস্তফা মাহমুদ সারোয়ার, সদস্য সচিব, উপপরিচালক কামাল হোসেন, সদস্য এবং সহকারী পরিচালক (অর্থ) অধীর রঞ্জন মজুমদার, সদস্য। কমিটি ৩০ মার্চ প্রতিবেদন প্রশাসকের কাছে জমা দেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক হাজার কেভি সাবস্টেশন (ট্রান্সফরমার) স্থাপনে ৭২ লাখ টাকায় ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। গত বছরের ১০ মার্চে এ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেখানে চারশ কেভি ট্রান্সফরমার চালু করা হয়েছে। অথচ বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬২ লাখ টাকা। আর কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন কেনায় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। পুরোনো মডেলের (২০১৭-১৮) মেশিন কিনে বিল দেওয়া হয়েছে নতুন (২০২১-২০২২) মডেলের। সংস্থাটির মোট এফডিআর ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এ খাত থেকে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। এটি তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, এই এফডিআরের ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও প্রতিষ্ঠানের আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় দেখানো হয়েছে।

৬৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন ও জনবল কাঠামোবাহির্ভূত ৫০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সের শর্ত মানা হয়নি। এ বিষয়ে প্রমাণ দিয়ে বলা হয়, কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ৬৯ বছর বয়সেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসএসসি পাশ জয়নাল আবেদীনকে পদোন্নতি দিয়ে ৯ম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডিপ্লোমাধারী তিনজনকে ৯ম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জনবলের সঠিক চাহিদা নিরূপণ করা হয়নি।

এছাড়া ৭ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির যে পিকনিক অনুষ্ঠিত হয় সেখানেও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পিকনিকে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৯০৪ জন। অথচ উপহারের জন্য কাশ্মিরী শাল কেনা হয়েছে ১৫শ। প্রতিটি শাল ১৩শ টাকা হারে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভাউচারের মাধ্যমে পরিশোধ দেখানো হয়েছে। আর ৯০৪ জন ব্যক্তির জন্য খাসির মাংস কেনা হয়েছে ৬শ কেজি, মুরগি ৪শ পিস, গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে ১৪ হাজার টাকা করে ২৫টি। ভেন্যু ভাড়া ৫ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এর বাইরেও অন্যান্য সামগ্রী অতিরিক্ত কেনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত খরচের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। পিকনিকের আগে এজিএমে নথিপত্র পাঠানোর খরচও বেশি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা-বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর এইজেড অ্যান্ড ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন বা বাইগাম) এখন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় সমাজ কল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদানসহ বিভিন্ন অনুদান ও নিজস্ব আয়ে পরিচালিত হয়। তহবিলের নিজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হলো-সদস্যদের দান, প্রবীণ হাসপাতাল ও সংঘের নামে থাকা পুরাতন বাড়ি ভাড়া থেকেও আয় আসে। এছড়া অন্যান্য উৎস হচ্ছে-ডব্লিউএইচও, ইউএনএফপিএ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ, সংস্থা এবং ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ।

১৯৬০ সালের ১০ এপ্রিল অধ্যাপক ডা. একেএম আব্দুল ওয়াহেদ এই প্রবীণ হিতৈষী সংঘ গঠন করেন। স্বাধীনতার আগে তিনি ‘পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য এইজেড’ বা পাকিস্তান প্রবীণ হিতৈষী সংঘ নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটি ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা এইজেড অ্যান্ড ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন’ বা ‘বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা-বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান’ নামে পরিচিত। ডা. ওয়াহেদ সংঘের গোড়াপত্তন করেন ঢাকায় তার ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কের ৭৮ নম্বর নিজ বাড়ির একটি অংশে নিজের আসবাবপত্র এবং নিজস্ব যন্ত্রপাতি দিয়ে। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আগারগাঁওয়ে চলে আসে। ১৯৯৮ সালে ৫০ শয্যার হাসপাতাল হয়। বর্তমানে এর অধীনে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বর্তমানে সংঘের ৭টি বিভাগীয়, ৫৬টি জেলা, ২৭টি উপজেলা এবং ২টি আঞ্চলিক পর্যায়ে শাখাসহ ৯২টি শাখা রয়েছে। দেশের সব শ্রেণির প্রবীণের কল্যাণার্থে এই সংঘ নব্বই দশক হতে শাখা গঠন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ১৯৮১ সালে গণপূর্ত ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয় প্রায় এক একর জমি ইনস্টিটিউট অব জেরিয়াট্রিক মেডিসিনকে (বাইগাম) বরাদ্দ দেয়।

প্রবীণ হিতৈষী সংঘের প্রধান ও শাখা কেন্দ্রগুলো বরাবরই গঠনতন্ত্রের আওতায় পরিচালিত হয়। শাখাগুলো মূলত প্রবীণদের নিজস্ব সংগঠন। বর্তমানে এর সদস্য হতে হলে ব্যক্তিকে ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সি হতে হয়। কেন্দ্র হতে শাখায় স্বাস্থ্য সেবা খাতে কিছু পরিমাণে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT