বুধবার ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঝুঁকি মানতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত : ০৭:২৪ পূর্বাহ্ণ, ৭ এপ্রিল ২০২৩ শুক্রবার ১৪৩ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

‘বায়ান্ন গলির তিপ্পান্ন বাজার’ প্রবাদের মতো অবস্থা রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেট। একদিকে ঢুকলে নিজের অজান্তেই অন্যদিকে চলে যান দিগ্ভ্রান্ত ক্রেতাসাধারণ। ফলে মার্কেট থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতেও বেগ পেতে হয়।

বৃহস্পতিবার গাউছিয়া মার্কেটে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল এমন পরিস্থিতি। এর আগে মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর নতুন করে আলোচনায় আসে গাউছিয়া। ইতোমধ্যেই ফায়ার সার্ভিস বলেছে, রাজধানীর সর্বোচ্চ অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে গাউছিয়া মার্কেট। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মার্কেটের অগ্নিঝুঁকি আমলে নিতে রাজি নন। ফায়ার সার্ভিসের সাবধানি বাণীতে বরং তারা ক্ষুব্ধ। উলটো এতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে গাউছিয়া মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান বাবু গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি পালটা প্রশ্ন রাখেন, গাউছিয়া ঝুঁকিপূর্ণ, এটা বলার অধিকার কি ফায়ার সার্ভিস রাখে? কে তাদের এ বিষয়ে কথা বলার অধিকার দিয়েছে? বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর তারা কেন গাউছিয়া নিয়ে কথা বলছে? রাজউক ভবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। ফলে ভবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা রাজউক থেকে যথাযথ অনুমোদন নিয়েছি।’

সরেজমিন দেখা যায়, গাউছিয়া মার্কেটসংলগ্ন কয়েকটি ভবন প্যাঁচানো বৈদ্যুতিক তারের মতো জড়িয়ে আছে একে অপরের সঙ্গে। ভেতরে অসংখ্য গলিপথ। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মার্কেটে শত শত দোকান। আসন্ন ঈদের আগে হাজারো ক্রেতার ভিড়ে মার্কেটের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

আরও দেখা যায়, গাউছিয়া মার্কেটের মূল ভবনটি চারতলা। তবে এখন পার্শ্ববর্তী আরও দুটি ভবন গাউছিয়ার সঙ্গে একাকার। ফলে পৃথকভাবে গাউছিয়া মার্কেট চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। একই ভবনের একদিকে গাউছিয়া, অন্যদিকে নিউ চিশতিয়া মার্কেটের সাইনবোর্ড ঝুলছে। ভেতরের দিকে চোখে পড়ে ঈসমাইল ম্যানশন ও নূর ম্যানশন শপিং সেন্টারের আরও দুটি সাইনবোর্ড। এর মধ্যে নূর ম্যানশনের একটি অংশে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা (সেন্ট্রাল এসি) চালু করা হয়েছে। এছাড়া ঈসমাইল ম্যানশন ও গাউছিয়ার মার্কেটের কয়েকটি ফ্লোরেও আছে অসংখ্য এসি।

সরেজমিন দেখা যায়, মার্কেটে আলো প্রবেশের প্রায় সব রাস্তা বন্ধ। ফলে দিনেও হাই ভোল্টেজের বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। এতে এসির মধ্যেও ভ্যাপসা গরম। এছাড়া প্রচণ্ড ভিড়ে ক্রেতাদের রীতিমতো চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা। বিশাল মার্কেটে ঢোকা ও বের হওয়ার পথ মাত্র ৩টি।

এছাড়া গাউছিয়া ও নিউ চিশতিয়া মার্কেটের মধ্যবর্তী অংশটুকু টিন ঝালাই করে জোড়া দেওয়া। টিনের ওপর টাইলস বিছানোয় জোড়া দেওয়া অংশ ওপর থেকে বোঝা যায় না। তাছাড়া মার্কেটের সর্বত্র মাকড়সার জালের মতো ঝুলছে বৈদ্যুতিক তারের কুণ্ডলী। বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে এসির আউটডোর ইউনিট।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. শাহজাহান সিকদার বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা গাউছিয়া মার্কেট পরিদর্শন করেছি। এ সময় পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আমরা কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডসহ অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাউছিয়া মার্কেটে দোকানের সংখ্যা ৪৭০টি। মার্কেটের এক ইঞ্চি জায়গায়ও অব্যবহৃত নেই। এমনিক অপরিসর সিঁড়িতেও দোকান বসানো হয়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সিঁড়িতে আছে টপস বাজার, জাফর এন্টারপ্রাইজ, ফাইজা ফ্যাশন নামের দোকান। সিঁড়িতে দোকান কীভাবে করা হলো জানতে চাইলে টপস বাজারের ম্যানেজার কমল কান্তি রায় বলেন, ‘মার্কেটের সব সিঁড়িতেই দোকান আছে। শুরু থেকেই এই ব্যবস্থা চালু। তবে এতে আমাদের কোনো অসুবিধা হয় না।’ আগুন লাগলে তখন কী করবেন-এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাইকারি দোকান। তাই ক্রেতা আসেন কম। আগুন লাগলেও অসুবিধা হবে না।’

দেখা যায়, গাউছিয়াসংলগ্ন নিউ চিশতিয়া মার্কেটের তৃতীয় তলায় বিশাল অংশজুড়ে থান কাপড়ের দোকান। নিউ ভাই ভাই ফেব্রিক্স, মেসার্স হৃদয় টেক্সটাইল, মেসার্স বাবুরহাট টেক্সটাইল, মেসার্স আল রিয়াদ এন্টারপ্রাইজসহ প্রায় প্রতিটি দোকানে বিপুল পরিমাণ কাপড়ের মজুত। এছাড়া বিশাল অংশজুড়ে আছে বোরকাসহ নারীদের সাজসজ্জার দোকান।

অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে মরিয়ম বোরকা হাউজের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণের যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে। তবে যতই ব্যবস্থা থাকুক না কেন, ফায়ার সার্ভিস যদি আগুন না নেভায় তবে শতচেষ্টা করেও কিছু হবে না। কারণ, ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের সামনে বঙ্গবাজার পুড়ে গেল। সেখানে ফায়ার সার্ভিস ছিল দর্শক।

প্রতিবছরই ঈদের আগে গাউছিয়াসহ নিউমার্কেট এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। এবারও পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কিছুক্ষণ পরপরই ক্রেতাদের সতর্ক থাকতে মাইকিং করা হচ্ছে।

গাউছিয়াসহ আশপাশের মার্কেটে অগ্নিঝুঁকি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘রমজানের আগেই আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা নিয়ে কথা বলেছি। তারা যথাযথ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের অস্বাভাবিক ভিড়ের কারণে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। তখন আইন প্রয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে আছি।’

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT