মঙ্গলবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১লা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
◈ চাকসু নির্বাচন: দ্বিতীয় দিনে ১৪১ জনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ◈ নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাটে স্বামী-স্ত্রী ও চার বছরের শিশুর লাশ ◈ ‘সরকারি বেতন-রেশন খাস না, গুলি করবি না কেন?’ ◈ প্রশাসনের ১৭ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দূতাবাসে বদলি, তালিকা প্রকাশ ◈ একদিনে ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ◈ টানা ৫ দিন বৃষ্টির আভাস ◈ সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ফ্ল্যাট-জমি জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ◈ শুধু নিন্দা জানিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো সম্ভব নয়: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ◈ নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রীরও পদত্যাগ চায় জেন-জি ◈ গেমিং অ্যাপ ব্যবহার করে যেভাবে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিল নেপালের জেন-জিরা

রোজায় অনেকের পাতে উঠবে না গরুর মাংস

প্রকাশিত : ০৭:১৭ পূর্বাহ্ণ, ২০ মার্চ ২০২৩ সোমবার ১২২ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

দেশে গরু উৎপাদন বাড়ছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন খামার। গরু আমদানিও হচ্ছে। কিন্তু মাংসের দাম না কমে উল্টো প্রতি বছর কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে বাড়ছে। ফলে চড়া বাজারের কারণে অনেকেই গরুর মাংস কেনা কমিয়েছেন। কেউ কেউ বড় উৎসব ছাড়া মাংসের দোকানেই যাচ্ছেন না। রোজার আগে আরেক দফা দাম বাড়ায় সেহরিতে অনেকেই পাতে তুলবেন না মাংস।

ভোক্তারা বলছেন, সব জিনিসেরই দাম কম-বেশি ওঠানামা করে। কিন্তু গরু কিংবা খাসির মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ার পর কখনোই কমতে দেখা যায় না। কোনো উৎসব এলে বরং দাম আরও এক ধাপ বেড়ে যায়। প্রতি বছর উৎসব ঘিরে দাম বাড়ানোর প্রবণতা দেশে রীতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না সরকার। দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে হয়তো এবার রোজায় অনেকের পাতেই উঠবে না মাংস।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, গরুসহ সব ধরনের মাংসের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। দেশীয় গরু দিয়ে কোরবানি করার সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেও দাম নাগালের মধ্যে আসেনি। দাম নিয়ন্ত্রণে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে উৎপাদন বাড়ানোর নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে ভোক্তারা যাতে মাংস কিনে খেতে পারেন, সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন; যার পরিণতি হবে আমিষের ঘাটতি। এতে কমে যাবে মানুষের কর্মক্ষমতা। ব্যবসায়ী ও খামারিরা নানা অজুহাতে দাম বাড়াতে থাকলে সরকারকে ফের গরু আমদানির বিষয়টি ভাবতে হবে।

মাংস ব্যবসায়ীদের দাবি, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম বাড়ছে। দেশে গরু উৎপাদন বাড়াতে সরকারিভাবে উদ্যোগ না নিলে মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া উৎপাদন হয়েছে মোট ৫ কোটি ৬৩ লাখ ২৮ হাজার। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ৩৪ হাজার। অর্থাৎ এক বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৪ লাখ ৬ হাজার। এর মধ্যে সর্বশেষ অর্থবছরে গরু উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ এবং ছাগল ২ কোটি ৬৭ লাখ ৭৪ হাজার। অধিদপ্তরের হিসাবে এক বছরে গরু উৎপাদন বেড়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার এবং ছাগল বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার।

মাংস ব্যবসায়ীদের হিসাবে গত সাত বছরে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ২০১৬ সালে দেশে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৩২০ টাকার মতো। গতকাল রোববার রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। এ হিসাবে গত সাত বছরে প্রতি কেজি মাংসের দাম বেড়েছে ৪৩০ থেকে ৪৮০ টাকা, অর্থাৎ গড়ে ১৪২ শতাংশ। বছরে কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে বেড়েছে।

হাতিরপুল কাঁচাবাজার থেকে গত শুক্রবার দেড় কেজি গরুর মাংস কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘বেতন পাওয়ার পর মাসে একবার বাজার করি। এ জন্য সবকিছু একসঙ্গে বেশি করে কিনে নিই। আগে এক মাসের জন্য তিন-চার কেজি করে মাংস কিনতাম। এখন এক-দেড় কেজির বেশি কেনার সাহস পাই না।’

দাম বাড়ানোর পেছনে নানা যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, বর্তমানে সবকিছুর দামই বেড়েছে। এ ছাড়া ভুসি, খৈল ও খেসারিসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে বেড়েছে গরুর উৎপাদন খরচ। অন্যদিকে গরু কিনে আনার সময় চাঁদাবাজির কবলে পড়তে হয়। বেড়েছে দোকান খরচ ও কর্মচারীর বেতন। তাই মাংসের দাম বাড়লেও ব্যবসায়ীদের আগের চেয়ে মুনাফা কমেছে। কারণ দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ আর আগের মতো মাংস কিনতে পারছেন না। এ কারণে লোকসানের ভয়ে অনেকেই মাংসের ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন।

ঢাকার কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা সালাম মিয়া বলেন, খামারিদের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা গরুর দাম বাড়িয়েছেন। পাঁচ বছর আগে যে ধরনের গরুর দাম ছিল ৫০ হাজার টাকা, একই ধরনের গরু কিনতে এখন লাখ টাকার বেশি গুনতে হয়। তিনি আরও বলেন, পরিচিত ক্রেতাদের মধ্যে আগে যিনি মাসে পাঁচ কেজি মাংস কিনতেন, এখন কেনেন দুই কেজি। কেউ কেউ দুই মাসেও একবার আসেন না মাংসের দোকানে। ব্যবসায়ীরা এখন কোনো রকমে টিকে আছেন। অনেকেই অন্য ব্যবসায় চলে যাচ্ছেন।

ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে মাংসের দাম স্বাভাবিক রাখা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তাসহ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়ার কারণেও দাম বেড়ে যায়। তা ছাড়া ফুটপাত থেকে গরুর মাংস চলে যাচ্ছে ফাইভ স্টার হোটেলে। মাংস আসছে কোথা থেকে, সে ব্যাপারে কেউ জানেন না। এ কারণে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বৈঠকে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, পেঁয়াজে এখন বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। যথাযথ উদ্যোগ নিলে পেঁয়াজের মতো গরু উৎপাদনেও স্বনির্ভর হবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চর আছে। সেগুলোতে অনেক পতিত জমি আছে। সেখানে সরকার পশু প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের অধীনে ৫০ লাখ পরিবারকে দুটি করে গরুর বাছুর দিলে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই গরু উৎপাদনে বিপ্লব ঘটে যাবে। গরু বা মাংস আমদানি করতে হবে না। গরু ও মাংস আমদানির জন্য দেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যায়। তেল-চিনির মতো পণ্যের দাম বেঁধে দিতে পারলে সরকার মাংসের দাম বেঁধে দিতে পারে না কেন– এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ভারতে গরুর মাংসের কেজি ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। সীমান্ত পার হয়ে আসার পর সেই মাংস বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ভোক্তা অধিদপ্তর মাছ বাজারে মূল্য তালিকা তদারকি করলেও মাংসের ব্যাপারে চুপ। মাংস কত টাকায় আমদানি হচ্ছে, তা কেউ জানে না। মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে কিছু ব্যবসায়ীকে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, কোন পণ্যের দাম কোন পর্যায়ে রাখা উচিত, সেটি সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ। কিন্তু সরকার আমদানির অনুমতি দিলে মাংসের দাম কমে যাবে। তখন দেখা যাবে মাংসের কেজি ৪০০ টাকায় নেমে গেছে। বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ব্যবসার পরিবেশও সুষ্ঠু থাকবে। কারণ কিছু কিছু পণ্যের নিয়ন্ত্রণ মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ীর হাতে। এটি ভালো লক্ষণ নয়।

এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, গরুর প্রধান খাদ্য ঘাস। কিন্তু দেশে ঘাস উৎপাদনের জমি কমে যাচ্ছে। এ কারণে দানাদার খাদ্যের প্রতি নির্ভর হতে হচ্ছে। এ ধরনের খাবারের দামও বেশি। এ কারণে মাংসের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, কোথাও চর জেগে উঠলে তা বন বিভাগ নিয়ে যায়। কোনো একটি চর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দেওয়া হলে সেখানে প্রকল্প করা সম্ভব। চারণভূমিতে গরু পালন করলে দাম যা-ই হোক অন্তত মাংস নিরাপদ থাকবে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT