রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হল না ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েতের

প্রকাশিত : ০৫:৪৮ অপরাহ্ণ, ৫ জুলাই ২০২২ মঙ্গলবার ২১৭ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

আল্লাহর ওপর ভরসা, বুক ভরা স্বপ্ন আর সাহস নিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে সবার কাছে দোয়া চেয়ে গত ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত শেখ। কিন্তু ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন তার পূরণ হল না।

মঙ্গলবার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার যে ফল ঘোষণা হয়েছে, সেখানে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত ৬ হাজার ১১১ জনের মধ্যে তার নাম আসেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বেলায়েত শেখ ১২০ নম্বরের মধ্যে ২৬ দশমিক ০২ নম্বর পেয়েছেন। এমসিকিউ অংশে উত্তীর্ণ না হওয়ায় তার লিখিত অংশের উত্তরপত্র মূল্যায়ন হয়নি।তিনি এমসিকিউ অংশের বাংলায় ১৫ নম্বরের মধ্যে দুই, ইংরেজিতে ১৫ নম্বরের মধ্যে ২ দশমিক ৭৫, সাধারণ জ্ঞানে ৩০ নম্বরের মধ্যে ৩ দশমিক ২৫ পেয়েছেন। এ ছাড়া এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ২০ নম্বরের মধ্যে ১৮ দশমিক ০২ পেয়েছেন।

৫৫ বছর বয়সে ‘ভর্তিযুদ্ধে’ নেমে টিকতে না পারায় আক্ষেপ নেই বেলায়েতের। তিনি বলেন, ‘ঢাবিতে হয় নাই, এতে আমার কোনো আফসোস নাই, ভাগ্যের ওপর কিছু নাই। এই বয়সে ইয়াংদের সঙ্গে চেষ্টা করেছি, এটাই বড় অর্জন। তবে তিনি জানান, আরও তিনটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন তিনি। সেখানে না হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন।

বেলায়েত শেখ গত ১৯ মে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রকাশ করেন। এরপরই গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়।সবাই তাকে শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানান।

সংসারের অস্বচ্ছলতা, দরিদ্রতা আর বাবার অসুস্থতার কারণে ১৯৮৩ সালে লেখাপড়া থেকে ছিটকে গিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো বাধাই যেন দাবিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। সন্তানদের সঙ্গেই শুরু করেন লেখাপড়া।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের মৃত হাসেন আলী শেখ ও জয়গন বিবির ছেলে বেলায়েত শেখ। চলতি বছর তিনি এইচএসসি (ভোকেশনাল) পাশ করেন ঢাকা মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে। এর আগে ২০১৯ সালে বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল (ভোকেশনাল) পাশ করেন।

তার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনার। সেই লক্ষ্যে সাইফুরস ভার্সিটি কোচিংয়ের মাওনা শাখায় ক্লাস করেন তিনি। পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক। জাতীয় দৈনিক করতোয়ার শ্রীপুর প্রতিনিধি তিনি। এ ছাড়া জেটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন।

বেলায়েত শেখের জন্ম ১৯৬৮ সালে। ছোটবেলা থেকেই খুব কাছ থেকে অভাব দেখেছেন। এর মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। অভাবের তাড়নায় ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার।

বেলায়েত শেখ জানান, ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম তিনি। তখন বাবার অসুস্থতা এবং অভাবের তাড়নায় পরীক্ষা দিতে পারেনি। ফরম পূরণের টাকা দিয়ে বাবার চিকিৎসা করাতে হয়েছিল। এরপর ১৯৮৮ সালে পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা বন্যা আর অভাবের কারণে ভেস্তে যায়।

তিনি বলেন, ১৯৯০ সালেও পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। সে সময় মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মায়ের কথা ভেবে বিয়ে করেন তিনি। বাবার তখনও অভাব ছিল। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। ২৫-২৬ বছর একাধারে তিনিই সংসার চালিয়েছি। এসএসসি দিতে না পারায় মেকানিক্যাল কোর্স করেছিলেন। মোটর গাড়ির ওয়ার্কশপ ছিল। ওইসব করেই সংসার চালাতে হয়েছে। ভাই-বোনদের পড়াশোনা করানোর দায়িত্ব ছিল তার ঘাড়ে। কিন্তু তারপরও তাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না করতে পারার আক্ষেপ রয়ে গেছে। এই সময়ে আর লেখাপড়ারও সুযোগ পাননি।

বেলায়েত শেখের তিন সন্তান। ১৯৯৪ সালে তার প্রথম ছেলের জন্ম। বিরতি দিয়ে সে এখন গাজীপুরের একটি কলেজে অনার্সে পড়ছে। মাওনা চৌরাস্তায় তাকে স্যানিটারির দোকান করে দিয়েছেন। সম্প্রতি তাকে বিয়েও করিয়েছেন। একমাত্র মেয়ের জন্ম ১৯৯৯ সালে। ইচ্ছে ছিল তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। সেজন্য রাজধানীর নামকরা কলেজে ভর্তিও করিয়েছেন। কিন্তু মেয়ে সেখানে পড়াশোনা না করেই গ্রামে চলে যায়। সেখানে এইচএসসি শেষে একটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হয়। সে অনার্স সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত পড়েছে। এরপর তার বিয়ে দেন এবং একটি সন্তানের মা হন। ছোট ছেলের জন্ম ২০০৫ সালে। সে এ বছর বেলায়েত শেখের সঙ্গে এইচএসসি পাশ করেছে।

বেলায়েত শেখ বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল সন্তানরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। অনেক আশা ছিল তাদের নিয়ে। কিন্তু তিন সন্তানের কেউই তা পূরণ করতে পারেনি। সেই ক্ষোভ থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি আর ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায়। কিন্তু তার ঢাবিতে পড়ার সাধ অপূর্ণই থেকে গেল।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT