সোমবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
◈ ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিতে ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা: বদিউল আলম ◈ সার্কিট ব্রেকারের শীর্ষে চার কোম্পানির শেয়ার ◈ নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ৬ মাসের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন ◈ গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধন অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত ◈ ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ◈ স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর যুবকের আত্মহত্যা: পুলিশ ◈ ভারি বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হতে পারে ৯ জেলার নিম্নাঞ্চল ◈ টাইফয়েডের টিকা পাবে ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশু, দিবে যেদিন থেকে ◈ মেগাসিরিয়াল ‘খুশবু’র আইটেম গানে মাহি ◈ মৃত্যুর পাঁচ বছর পর এন্ড্রু কিশোরকে কর পরিশোধের নোটিশ

হুন্ডি-অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

প্রকাশিত : ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ, ১৭ মে ২০২৫ শনিবার ৫৯ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

বড়লোক আরও বড় হবে, গরিব আরও গরিব হবে-এমন বাজেট চাই না। তাই এবারের বাজেটে মধ্যবিত্তকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া হুন্ডি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ঢেলে সাজাতে হবে ভঙ্গুর ব্যাংক খাত। কমিয়ে আনতে হবে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামাতে হবে। সার্বিক বিষয়ে বাজেটে সুস্পষ্ট সমাধান থাকা দরকার। সর্বোপরি বাজেটের সুফল নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার হামিদ বিশ্বাস

প্রশ্নকর্তা: কেমন বাজেট দেখতে চান?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : এবারের বাজেট হতে যাচ্ছে পুরোপরি একটি ভিন্ন পরিবেশ এবং পরিবর্তিত সময়ে। এখানে আগের মতো দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক লুটেরা নেই। বাজার সিন্ডিকেটও অনেকাংশে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাই আসন্ন জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করতে হবে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে। সেজন্য বলব, এবারের বাজেটে মোটা দাগে কয়েকটি চাওয়ার মধ্যে একটি হলো নাগরিকদের তিনবেলা পেটভরে খাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এরপর বাসস্থান, পোশাক, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। এসব সুবিধা সব নাগরিক সমানভাবে পাওয়ার অধিকার রাখে। তবে এবারের বাজেটে বিশেষ করে মধ্যবিত্তকে গুরুত্ব দিতে হবে। বড়লোক আরও বড় হবে, গরিব আরও গরিব হবে-এমন বাজেট চাই না। এছাড়া বাজেটের উচ্চ ব্যয় মেটাতে আয় বাড়াতে হবে। বিশেষ করে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে-আয়কর নয়, আয়করের আওতা বাড়াতে হবে। সর্বনিম্ন ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা যাদের আয়, তাদের আয়করের বাইরে রাখতে হবে। যেন জনসাধারণ ভালো থাকেন। আগের সরকার তো খেয়েছে লুটেপুটে, সেটার মাশুল এখন গুনতে হচ্ছে।

প্রশ্নকর্তা: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রান্তিক মানুষের দুর্ভোগ কমাতে করণীয় কী?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। এটা আরও কমাতে হবে এবং এর সুফল প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। সেজন্য আয়বৈষম্য যেন সন্তোষজনক পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়-বাজেটে তেমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

প্রশ্নকর্তা: ভঙ্গুর ব্যাংক খাত দিয়ে কীভাবে বাজেট বাস্তবায়ন হবে?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : দেশের আর্থিক খাতে গত ১৫ বছরে যে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার, তা অকল্পনীয়। এরই প্রভাবে ৫০ শতাংশ ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। বর্তমানে ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। এর মধ্যে প্রায় ৩০টি ব্যাংক ভালো নেই। লুটপাটের কারণে কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, ব্যাংকগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পর্যন্ত নিয়মিত দিতে পারছে না। অনেক ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এছাড়া পরিবর্তিত সময়ে প্রকৃত চিত্র বের হওয়ার কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ লাফিয়ে বেড়েছে, আরও বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের ৭২ শতাংশ, বেসিক ব্যাংকের ৬৮.৫৭ শতাংশ, বিডিবিএলের ৪৩.৮৬ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ৩৮.৪৬ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের ৩১.৭৩ শতাংশ এবং সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৮.৬১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি খাতের আরও ১৩টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৭.৯৮ শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। এছাড়া অন্তত ১১টি ব্যাংকের চিত্রও প্রায় অভিন্ন। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি গত সেপ্টেম্বরে ৪০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। বর্তমানে তা কিছুটা কমে এসেছে। এরই মধ্যে ২০০ কোটি টাকা নগদ আদায় করেছি। আগামী জুনের মধ্যে অগ্রণীর খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এখনো অনেক ব্যাংকে তারল্য সংকট। এর প্রধান কারণ ব্যাংক খাত থেকে বড় অঙ্কের টাকা পাচার হয়ে গেছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আগে খেলাপি ঋণ কার্পেটের নিচে লুকানো থাকত। এখন সেটা প্রকাশ পাচ্ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ১৭ শতাংশ বা ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ। একই সময়ে ঋণ অবলোপন স্থিতি ৮১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৭১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ অবলোপন বেড়েছে ৯ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১২২ কোটি টাকা পুনঃতফশিল করেছে ব্যাংকগুলো। এসব কারণে বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকগুলো। যা প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা ছুঁইছুঁই। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাত সংস্কারে কাজ চলছে। এরই মধ্যে ব্যাংক একীভূত করার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। মনে রাখতে হবে দুই পক্ষের রাজি-খুশিতে ব্যাংক মার্জার করা যেতে পারে। এর বাইরে জোর করে মার্জার করলে সেটা কখনো টেকসই হবে না। আশা করি কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে না। যদি প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে আমানতকারীকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে হবে। অন্তত সুদ না দিলেও প্রিন্সিপালের ১০০% টাকা ফেরত দিতে হবে।

প্রশ্নকর্তা: পাচার করা টাকা ফেরতে বাজেটে কেমন প্রতিশ্রুতি চান?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার হয়েছে। এসব টাকা দেশে থাকলে অনেক উন্নতি করা যেত। মূলত দুর্নীতি যত বাড়বে টাকা পাচারও তত বাড়বে। সাধারণত রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে সব দেশেই কমবেশি টাকা পাচার হয়। তবে এ দেশের মতো এত বেশি টাকা পাচার পৃথিবীর আর কোথাও হয়েছে বলে জানা নেই। টাকা পাচারের কারণে ডলার সংকট শুরু হয়। আর ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভ নেমে আসে তলানিতে। যদিও ৫ আগস্ট-পরবর্তী ঘুরে দাঁড়িয়েছে রিজার্ভ। সেজন্য আসন্ন বাজেটে পাচার করা টাকা ফেরতে সুনির্দিষ্ট এবং শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। জিটুজি চুক্তি থাকলে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব। হয়তো বা সময় লাগতে পারে।

প্রশ্নকর্তা: দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : দেশের অর্থনীতিকে যে তলানিতে নেওয়া হয়েছিল তার গতি কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব হয়েছে। একজন গ্রাহকের আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রায় আড়াই বছর কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। কখনো খেলাপি করা হয়নি। এখন এসব বের করা হচ্ছে। সুতরাং অর্থনীতি এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সঠিক পদ্ধতিতে চলছে। আগে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা কিছুই ছিল না, এখন সেটা অনেকাংশে ফিরে এসেছে। সেজন্য বাজেট প্রণয়নে এসব বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রশ্নকর্তা: রেমিট্যান্সে জোয়ার, রপ্তানি আয় নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : হুন্ডি ও পাচার বন্ধ হওয়ায় রেমিট্যান্সে জোয়ার বইছে। এখন প্রতি মাসে গড়ে ২০০-২৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসছে। এটা ইতিবাচক। সে কারণে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রিজার্ভ। এক্ষেত্রে কখনো যেন ভাটার টান না পড়ে, বাজেটে সে দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজার তৈরি করতে হবে। পণ্যের মানে ভিন্নতা ও নতুনত্ব আনতে হবে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT