বৃহস্পতিবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩রা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাধারণ পণ্যের মতোই বেচাকেনা কেমিক্যাল

প্রকাশিত : ০৫:১১ পূর্বাহ্ণ, ৩০ মার্চ ২০২৪ শনিবার ২২৫ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড ও চকবাজারে সাধারণ পণ্যের মতোই অবাধে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য ও বিপজ্জনক বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল। এসব মার্কেট থেকে যে কেউ চাইলে যে কোনো ধরনের কেমিক্যাল কিনতে পারেন। পুরান ঢাকা, হাটখোলা, আলুবাজারের বিভিন্ন দোকানে অন্তত ৪০০ আইটেমের কেমিক্যাল বিক্রি হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কেমিক্যালের গুদাম থাকায় অগ্নিঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন বাসিন্দারা।
জানা যায়, মিটফোর্ডের কেমিক্যাল মার্কেটগুলোতে অবাধে মিথাইল এম, জেলডিন, সালফারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বিক্রি হচ্ছে। এসব কেমিক্যাল সরবরাহ, মজুত ও বিপণন করার সময় কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। পুরান ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় অন্তত তিন থেকে চার হাজার কেমিক্যালের গোডাউন রয়েছে। সরকারি পর্যায় থেকে অ্যাসিড ও অ্যালকোহল তদারকি করা হলেও অন্যান্য কেমিক্যাল তদারকি করা হচ্ছে না।

মিটফোর্ড এলাকায় অনুমোদিত অ্যাসিড ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৫০ জনের মতো হলেও দুই থেকে আড়াইশ ব্যবসায়ী অ্যাসিড ব্যবসা করছেন। একক কোনো সংস্থাও এসব আইটেম তদারকি করছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, মিটফোর্ডের এম প্লাজা মার্কেট, পোড়া মার্কেট, মোনা কমপ্লেক্সসহ আশপাশের গ্লাস মার্কেটের ওপর কেমিক্যাল গুদাম রয়েছে। ওই এলাকার শরৎচন্দ্র রোডের দুই পাশের ভবনগুলোতে এবং মার্কেটগুলোতে শত শত কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। ভবনগুলোর নিচে কেমিক্যাল দোকান এবং ভেতরে ও ওপরে গোডাউন রয়েছে। তাছাড়া আলুবাজার এলাকায় অনেক বাসাবাড়িতে গোপনে কেমিক্যালের গুদাম রয়েছে। দোকান ও গোডাউন থেকে শ্রমিকরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম গ্লাভস, মাস্ক ছাড়াই কেমিক্যালের বস্তা, ড্রাম ওঠানামা করছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা বিরক্তি প্রকাশ করেন।

গত সোমবার মিটফোর্ডের এম প্লাজা মার্কেটে কেমিক্যাল জারে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় হতাহতের কোনো ঘটনা না ঘটলেও এ বিষয় নিয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ীর সঙ্গে স্থানীয়দের বাগবিতণ্ডা হয়। তবে বংশাল ফাঁড়ির পুলিশ দুই পক্ষকে থামিয়ে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, মিটফোর্ডের কতিপয় ব্যবসায়ী আশপাশে গোপন গোডাউন রেখে দাহ্য ও নিষিদ্ধ কেমিক্যাল ব্যবসা করছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিভিন্ন সংস্থার তল্লাশির কারণে এই গোডাউনগুলো ঢাকার মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, সাইনবোর্ড, কেরানীগঞ্জের নারিকেলবাগ, পলাশপুর, আব্দুল্লাহপুর, হাসনাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া মেঘনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গোডাউন গড়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারপিউমারী মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ বিক্রয় না করতে সমিতির পক্ষ থেকে আমরা ব্যবসায়ীদের নোটিশ দিয়েছি। তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমরা সরাসরি অভিযানে নামব। কোনো ব্যবসায়ীর কাছে দাহ্য পদার্থ পাওয়া গেলে তার দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। সোমবারের বিস্ফোরণের বিষয়ে তিনি বলেন, এম প্লাজার ওই ব্যবসায়ীকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তার দোকান এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বংশাল থানার ওসি মইনুল ইসলাম বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ের কেমিক্যাল ব্যবসা ও গোডাউন সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছি। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট, সংশ্লিষ্ট সংস্থার পরিদর্শক ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারলে কেমিক্যালের অবাধ বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত বলেন, কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো লাইসেন্স দিচ্ছে। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে, তখন কেউই দায় নিচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স না পেলে আমদানি করতে পারত না। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে এই ব্যবসা পুরান ঢাকায় চলে আসছে। চকবাজারের চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত তদন্ত কমিটি পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসাকে শৃঙ্খলায় আনতে অনেকগুলো সুপারিশ করেছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমবে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT