শেষ সময়ে পক্ষের লোকদের চাকরি স্থায়ী করার চেষ্টা
প্রকাশিত : ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ, ১৭ মার্চ ২০২৪ রবিবার ১০৬ বার পঠিত
নিয়মের তোয়াক্কা না করে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিদের চাকরি স্থায়ী করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। আর এর সব দায়ভার পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের ওপর।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভাগে বিভক্ত চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার এবং শনিবার দুদফা হাতাহাতি ছাড়াও উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিএসএমএমইউর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মেনে গত ৩ বছরে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পদে প্রায় ২ হাজার জনকে অ্যাডহক নিয়োগ দিয়েছেন।
স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের চাকরি স্থায়ী করতে নিয়ম ভেঙেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতাদের একাংশ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ২৮ মার্চ বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু তিনি সংশ্লিষ্ট কমিটির মতামত না নিয়ে শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে পছন্দের লোকদের চাকরি স্থায়ীকরণে কাজ করছেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও স্বাচিপ নেতাদের একাংশ মিছিল করে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করতে গেলে উপাচার্যের অনুগতদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শনিবারও একই ঘটনা ঘটেছে। এদিন ঘটনাস্থলে স্লোগানরত তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. নুরে আলম দিপু বলেন, ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কর্মচারী চাকরি নীতিমালা নেই। ফলে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিকভাবে অনেকেই সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।
যেমন-১৬তম গ্রেডের ওয়ার্ড মাস্টার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েছেন। ওয়ার্ডবয় থেকে সেকশন অফিসার পর্যন্ত হয়েছেন। বর্তমান ভিসির গত ৩ বছরের মেয়াদে তিনটি নির্বাচিত সংগঠনের নেতাসহ সব কর্মচারী ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি নীতিমালা’ দাবি করে এলেও তিনি শোনেননি।
আন্দোলনে যোগ দেওয়া কর্মচারীরা জানান বর্তমান প্রশাসন নানা টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করছে। শেষ সময়ে পছন্দের লোকদের চাকরি স্থায়ীকরণের চেষ্টা করছে। ফলে উত্তেজিত চিকিৎসক, নার্স-কর্মচারীরা শনিবার সকাল ৯টা থেকে উপাচার্যকে নিজ দপ্তরে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
দুপুর ১টার দিকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সালাহউদ্দিন সিদ্দিক আন্দোলনরত কর্মচারীদের জানান ‘খসড়া নীতিমালা উপচার্য অনুমোদন দিয়েছেন। কিছু সংশোধনী শেষ করে ১৮ মার্চ প্রশাসনের নিকট উপস্থাপন করবেন তিনি।’
তবে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ কাছে দাবি করেন, ‘তড়িঘড়ি করে নয়, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণে অনেক আগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষাও নিয়েছি। এখন তারা ফলাফল চায়। কিন্তু বঞ্চিত একটা অংশ বিরোধিতা এবং শোরগোল করেছে। যদি ফলাফল দিতে পারি, তা হলে ভালো, না হলে প্রশাসনের সঙ্গে বসে যে সিদ্ধান্ত হবে পরবর্তীতে সে অনুযায়ী কাজ হবে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নীতিমালার বিষয়ে কমিটি করে দিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাব।’
বিএসএমএমইউ সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি এক বছর পর নিয়মিত হবে।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও স্থায়ীকরণ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে স্থায়ী হতে পারবেন। স্থায়ীকরণ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও অন্যান্যদের উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু অধ্যাপক শারফুদ্দিন মেয়াদের শেষ সময়ে এসে অনেকটা অগোচরেই পছন্দের লোকদের চাকরি স্থায়ীকরণের চেষ্টা করছেন।
বিএসএমএমইউ’র নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহ মো. জাকির হোসেন সুমন বলেন, তিনি (অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ) উপাচার্য হওয়ার পর থেকে সবকিছু নিজের মতো করে করেছেন।
এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের পছন্দের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়েছেন। মেয়াদের শেষ মূহূর্তেও একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়া নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, এর আগে অধ্যাপক শারফুদ্দিনের ছোট ছেলে তানভীর আহমেদ ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত স্নাতকোত্তর (এমডি/এমএস) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ওই পরীক্ষায় উপাচার্য নিজেই তত্ত্বাবধান কমিটির প্রধান ছিলেন।
উপাচার্যের ছেলে তানভীরের স্ত্রী ফারহানা খানম গত ১ জানুয়ারি বিএসএমএমইউর শিশু বিভাগে চাকরি পান। তখনও স্বজনপ্রীতির সমালোচনা হয়। এভাবে এই উপাচার্যের আমলে (২০২১ সালের মার্চ থেকে) বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৮৫৭ জনের বেশি নিয়োগ হয়েছে। এসব পদের মধ্যে রয়েছে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, মেডিকেল অফিসার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, গাড়িচালক, সুইপার ও এমএলএসএস ইত্যাদি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন, ‘আমি এখনো উপাচার্যের চেয়ারে বসিনি, তাই এসব বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলবে সে ব্যাপারে রেগুলেশন আছে।
প্রতিষ্ঠানটিতে কোন পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ হবে সে বিষয়েও কমিটি থাকে। এক্ষেত্রে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ডিন, বিভাগীয় প্রধান সবাই মিলে পরীক্ষা, ভাইভা ও সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনসহ নানা ধাপ পেরিয়ে জনবল নিয়োগ হয়। বিএসএমএমইউ’র মতো জায়গাতেও সবকিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে এটাই প্রত্যাশা করি।’
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
























