রবিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে সরকারি নথি জাল করে জমি নিবন্ধন

প্রকাশিত : ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার ১৪১ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠে ১৮ কোটি টাকা মূল্যের ১১ বিঘা জমি কেনাবেচায় বড় ধরণের জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই জমির ক্রেতা দ্য কংগ্রিগেশন অব আওয়ার লেডি অব দ্য মিশন-আরএনডিএম যা খ্রিস্টান মিশনারি হিসাবে পরিচিত। আলোচিত ১১ বিঘা জমির দলিল মূল্য করা হয়েছে ১৭ কোটি ৬৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। অথচ এই জমি কেনাবেচায় রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া সরকারি অনুমতিপত্র ব্যবহার করা হয়েছে। আরও অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি আইন ভঙ্গ করে গোপনে কৃষি শ্রেণি পরিবর্তন ছাড়াই ভিটা হিসাবে নিবন্ধন করেছে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। তবে ভয়াবহ এ জালিয়াতির ঘটনা ফাঁসের পর তোলপাড় চলছে প্রশাসনে ও নিবন্ধন অধিদপ্তরে। জালিয়াতচক্রকে শনাক্ত করতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে জেলা নিবন্ধক ঘটনা জানার পর দলিলটি জব্দ করেছেন এবং পৃথক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে সাব-রেজিস্ট্রারসহ একটি চক্র বিপুল টাকার বিনিময়ে সরকারি জাল নথিপত্র তৈরি করে এসব জমি নিবন্ধন করেছে। অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলমগীর কবির, তার স্ত্রী নাজনীন ইসলাম, ছেলে তানভীর কবির ও আবুল খায়ের, বোন সুকমন বেগম ও আসমা বেগম এবং মা নুর নেহার বেগমের কাছ থেকে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউপির কুখণ্ডি মৌজার তিন দশমিক ৬৪৬৮ একর বা ১১ বিঘা জমি কিনেছে খ্রিস্টান মিশনারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য কংগ্রিগেশন অব আওয়ার লেডি অব দ্য মিশন’। এর মধ্যে দুই দশমিক শূন্য ৯৬৮ একর জমি ধানি ও এক দশমিক ৫৫০০ একর জমি ভিটা দেখানো হয়েছে। পবা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গত বছরের ১৯ মার্চ দলিল সম্পাদন করা হয়। দলিল নং ৩৫১৯। তৎকালীন পবার সাব-রেজিস্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকার স্বাক্ষরে দলিল নিবন্ধন হয়েছে।

এ ঘটনা জানাজানি হলে জেলা প্রশাসন ও রেজিস্ট্রি অফিসে তোলপাড় শুরু হয়। এ নিয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। গত বছরের ৬ নভেম্বর রাজশাহী জেলা প্রশাসককে জালিয়াতির ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সরকারি নথি জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছেন পবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিত সরকার।

ঘটনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিজিত সরকার জানান, ঘটনাটি এখনো তদন্তাধীন। জমির ক্রেতা মিশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে তলব করা হয়েছে। এই জালিয়াতিতে কারা কারা জড়িত তা শনাক্তে কাজ চলছে। এ মাসেই তদন্তকাজ শেষ হবে। অভিজিত সরকার আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে যা বোঝা গেছে তাতে জেলা প্রশাসক দপ্তরের অনুমতিপত্রটি জাল করা হয়েছে। জমি নিবন্ধনে ব্যবহৃত অনুমতিপত্রটি জাল বলে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকেও জানানো হয়েছে। এখন দলিলটির ভবিষ্যৎ কী তা তদন্ত শেষে বলা যাবে।

এ বিষয়ে জানতে খ্রিস্টান মিশন প্রতিনিধি ফাদার লিটন কস্টার সঙ্গে যোগাযোগ করতে গত কয়েক দিন ধরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি নগরীর উপকণ্ঠ বাগানপাড়া এলাকায় অবস্থিত বিশপ চার্চে গিয়েও তার দেখা পাওয়া যায়নি। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি জমির দাতা আলমগীর কবিরও।

এদিকে সরকারি জাল নথি দিয়ে ১১ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে নেওয়ার ঘটনা আলাদাভাবে তদন্ত করছে জেলা নিবন্ধন দপ্তর। পুরো বিষয়টি পৃথকভাবে তদন্ত করছেন বাগমারার সাব-রেজিস্ট্রার মাসুদ রানা। মাসুদ রানা জানিয়েছেন, তিনি ইতোমধ্যে দলিল লেখক আয়নাল হকসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। তিনিও দ্রুত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। জাল সরকারি নথিপত্র দেখিয়ে জমিটি নিবন্ধনের ফলে দলিলটিও বাতিল হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় দলিল লেখক সমিতির একজন শীর্ষ নেতা।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT