সোমবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোটার তালিকার কাজে বাধার সাজা দ্বিগুণ!

প্রকাশিত : ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ, ৩ নভেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার ১৪৫ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

ভোটার তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ কাজে বাধা দেওয়া বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপরাধে সাজার মেয়াদ দ্বিগুণ বাড়িয়ে ‘ভোটার তালিকা আইন-২০০৯’ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়।

এ অপরাধে অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া অসত্য তথ্য দিয়ে ভোটার হওয়া ও ভোটার তালিকা তৈরির কাজে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাজাও দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় কমিশনের নবম সভায় এ আইন সংশোধনে এসব প্রস্তাব তোলা হচ্ছে। এ আইনের বাইরে পিতার নামোল্লেখ ছাড়াই ভোটার হওয়ার বিধানসংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও তোলা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরও দুটি বিধিমালায় সংশোধনের প্রস্তাব তুলছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। সেগুলো হচ্ছে-‘নির্বাচন পরিচালনা বিধামালা-২০০৮’ ও ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বিধিমালা-২০১৮।’ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় হিজড়া পরিচয়ে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন থাকার মধ্যে এসব আইন ও বিধিমালায় সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে। এছাড়া সভায় রংপুর সিটি করপোরেশন, পাঁচটি পৌরসভা ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন শূন্য পদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।

এসব আইন ও বিধিমালা সংশোধনী প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশনের আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি। ওই প্রস্তাবই আজ কমিশন সভায় উঠছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কমিশনের সভা হবে। সেই সভায় একটি এজেন্ডা হচ্ছে আইন ও বিধি সংশোধন। এর বেশিকিছু মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

ভোটার তালিকা আইন : ইসি সূত্র জানায়, কমিশন সভায় যে তিনটি আইন ও বিধিমালা সংশোধনীর প্রস্তাব তোলা হচ্ছে এর বেশিরভাগজুড়েই রয়েছে ভোটার তালিকা আইনের সংশোধনী। এ আইনের চারটি ধারায় সংশোধনী ও একটি ধারায় দুটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ধারাগুলো হচ্ছে-১১, ১৮, ১৯ ও ২০। ধারা ১১(খ) এ সংশোধনী এনে মৃত ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে। এ সংশোধনী পাশ হলে এর মধ্য দিয়ে ভোটার তালিকার ফরম নম্বর-১২ এর মাধ্যমে মৃতদের নাম বাদ দেওয়ার যে আইনি জটিলতা ছিল তা দূর হবে বলে মনে করছে কমিটি।

ধারা-১৮ এ কেউ অসত্য তথ্য দিয়ে ভোটার হলে বা তথ্য হালনাগাদ করলে তার সাজা বাড়িয়ে ১ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে এ অপরাধে সাজা রয়েছে ৬ মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। ধারা-১৯ এ ভোটার তালিকার কাজে কেউ বাধা দিলে বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ওই অপরাধে দুই বছর কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে এ অপরাধে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

ধারা-২০ এ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ কাজে অবহেলা বা ইচ্ছাকৃত ত্রুটি করলে তা অপরাধ গণ্য করে ওই কর্মকর্তার সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে এ অপরাধে ৬ বছর করাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এ অপরাধের বিচার হবে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী। এটি জামিনযোগ্য এবং অ-আপসযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে।

আরও জানা গেছে, নতুন ভোটারদের হয়রানি কমাতে একটি প্রস্তাব কমিশন সভায় তোলা হচ্ছে। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির বাইরে কেউ ভোটার হতে চাইলে ফরম নম্বর-২ ও ১১ পূরণ করতে হবে। ইসির প্রস্তাবনা অনুযায়ী, শুধু ফরম নম্বর-২ পূরণ করেই একজন নাগরিক ভোটার হতে পারবেন। এছাড়া পিতার পরিচয় প্রকাশ না করেই ভোটার হওয়ার সুযোগ রেখে আরেকটি প্রস্তাব তোলা হচ্ছে। এ প্রস্তাবনায় ভোটার হতে হলে পিতা ও মায়ের নাম প্রকাশের যে বাধ্যবাধকতা আছে তা তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে পিতৃপরিচয়হীন নাগরিকদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে যে জটিলতা ছিল তা দূর হবে বলে মনে করছে ইসি সচিবালয়। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ প্রস্তাবনা তোলা হয়েছে। বিগত কেএম নূরুল হুদা কমিশনের একটি কর্মশালার প্রাপ্ত সুপারিশ থেকে এ প্রস্তাবটি নেওয়া হয়েছে।

হিজড়া পরিচয়ে প্রার্থী : জানা গেছে, হিজড়া পরিচয়ে বর্তমানে ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। প্রার্থী হওয়ার ফরমে পুরুষ বা মহিলা যে কোনো একটি লিঙ্গ বেছে নিতে হয়। নির্বাচন কমিশন হিজড়া পরিচয়ে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিতে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় সংশোধনীর প্রস্তাব এনেছে। এতে তফসিল এর মনোনয়ন ফরম-১ এর দ্বিতীয় অধ্যায়ে পুরুষ বা স্ত্রী লিঙ্গের পাশাপাশি হিজড়া শব্দ যুক্ত হবে। ওই ঘরে টিক চিহ্ন দিয়ে হিজড়া পরিচয়ে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিতে এ সংশোধনী আনা হয়েছে। ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনসহ সব ধরনের নির্বাচনে শুধু পুরুষ বা মহিলা এ দুটি অপশন রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে হিজড়া পরিচয়ে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিলে ওইসব আইনেও একই ধরনের সংশোধনের প্রয়োজন হবে।

ইভিএম : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত বিধিমালায় সংশোধনের প্রস্তাব তোলা হচ্ছে আজ। এতে ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার আঙুল দিয়ে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ভোটারকে ভোটের সুযোগ করে দেওয়ার বিধানটি আইনে রূপ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিধিমালায় ইভিএম থেকে মুদ্রিত ফলাফল প্রকাশের বিধানও সংযুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিধি-১৭ তে বলা হয়েছে, ভোটগণনার বিবরণী ফরম-১৬ এর সঙ্গে মেশিন থেকে মুদ্রিত ফলাফল সংযুক্ত করার প্রস্তাব করতে হবে। এছাড়া ইভিএমের এসডি কার্ড, পোলিং কার্ড ও অডিট কার্ড কাস্টমাইজেশনের পর তা কাস্টমাইজেশন টিম দিয়ে প্রত্যয়ন করার বিধানও রাখা হয়েছে।

রংপুর সিটি ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন : সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমিশনের এ সভায় রংপুর সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তাবনা তোলা হচ্ছে। তবে ওই প্রস্তাবনায় কবে ভোট হবে সম্ভাব্য সেই দিন উল্লেখ করা হয়নি। এটি কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য রাখা হয়েছে। তবে ওই প্রস্তাবনায় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার, ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া স্থানীয় সরকারের বেশকিছু নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য রাখা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে পাঁচটি পৌরসভাও রয়েছে। পৌরসভাগুলো হচ্ছে-রাজশাহীর বাঘা, দিনাজপুরের বিরল, পঞ্চগড়ের বোদা, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও নাটোরের বনপাড়া। এছাড়া মেহেরপুর, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ নির্বাচন এবং বেশকিছু উপনির্বাচনের প্রস্তাব তোলা হচ্ছে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT