মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোক্তার বাড়তি ব্যয় রেকর্ড ছাড়াবে

প্রকাশিত : ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ, ২৪ মার্চ ২০২৩ শুক্রবার ৫০ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র রমজান ঘিরে ক্রেতার জন্য কোনো সুখবর নেই। বাজারে নিত্যপণ্যের বাড়তি মূল্যে রোজা শুরু। সরকার একাধিক উদ্যোগ নিলেও অসাধুর কারসাজিতে ভোক্তা যেন অসহায়। তদারকি সংস্থার কাছে সিন্ডিকেটের অনিয়ম প্রমাণিত হলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেই।

ফলে খামার পর্যায়ে ১৩৫-১৪০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৭০ টাকা। গত বছর একই সময়ের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০০ টাকা বাড়িয়ে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৬০ টাকা। ছোলা, চিনি, মসুর ডালের দাম কেজিতে বাড়ানো হয়েছে ১০-২০ টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে এবার রমজানে ভোক্তার বাড়তি ব্যয় রেকর্ড ছাড়াবে।

এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে ইফতার পণ্য-মুড়ি, বেসন, রুহ আফজা, ইসপগুলের ভুসি কেজিতে ১০-৬০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের ফল ও খেজুরের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা। চাল, আটা, ময়দা, মসলা পণ্য, লেবু, শসা, বেগুন, আলুর দামও বাড়ছে হুহু করে। তবে বাজারে এসব পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে বাড়তি দরে। যে কারণে বাজারে ক্রেতারা একধরনের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন।

অন্যদিকে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাজার তদারকিতেও সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে কাজ করছে। সঙ্গে সারা দেশে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে, যা রমজানের পরও অব্যাহত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা বাজার বিষয়ে নজর রাখছে। তবে সরকারের এত উদ্যোগের পরও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক খুচরা বাজারের পণ্যমূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছর ঠিক একই সময়ের তুলনায় প্রতি কেজি ছোলা ১৭.২৪ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ৫১.৬১, মসুর ডাল ৮.১৬, পেঁয়াজ ১৩.৩৩, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১২.৩১, প্রতি কেজি খেজুর ২৬, ব্রয়লার মুরগি ৬২.৫০, গরুর মাংস ৮.৮৯, গুঁড়া দুধ ৩৯.৩২ ও অ্যাংকর ডাল ৩১.৮২ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা চলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অনিয়মের প্রমাণ থাকলেও তারা অদৃশ্য চাপে শাস্তি দিচ্ছে না। তিনি জানান, কয়েকদিন আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এক সভার অয়োজন করা হয়। সেখানে সংস্থার মহাপরিচালকের সামনে ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে কারসাজি প্রমাণিত হয়। সভায় খামারিরা বলেন, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৩৫-১৪০ টাকা, যা কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কারণে খুচরা বাজারে ২৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। সভায় এটাও প্রমাণিত হয়-করপোরেট প্রতিষ্ঠান এসএমএস-এর মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সেখানে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও এই অভিযোগ স্বীকার করেন। সেখানে সব অভিযোগের প্রমাণ থাকলেও অধিদপ্তর কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। বরং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়ে দায় সেরেছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু ব্রয়লার মুরগি নয়, ভোজ্যতেল নিয়েও মিল পর্যায়ে বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অসাধুতার প্রমাণ পেলেও তারা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এতে অসাধুরা বারবার সুযোগ পেয়ে অতি মুনাফা করতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে নাজেহাল করছে। তাই এখনই ব্যবস্থা না নিলে এবার রমজানে ভোক্তার বাড়তি ব্যয় রেকর্ড ছাড়াবে।

খুচরা বাজার ও টিসিবির পণ্যমূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫, যা গত বছর ঠিক একই সময় ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০, যা আগে ৮০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০, আগে ৩০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫, যা আগে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪৫০, আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৭০, আগে ১৬৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০, গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা। গুঁড়া দুধের মধ্যে প্রতি কেজি ফ্রেস প্যাকেট দুধ ৮৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর একই সময় ৫৯০ টাকা ছিল।

কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মেজবাহ বলেন, এবার রোজা ঘিরে পণ্যের বাড়তি দামে নাভিশ্বাস উঠছে। গত বছরের তুলনায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি। সেহরি বা ইফতারির আয়োজনে ফলসহ অন্যান্য পণ্য কেনা বাদ দিয়ে নিত্যপণ্যের জোগান নিশ্চিত করতে হচ্ছে। গত বছর আগেই খেজুর কিনে রাখলেও এবার মূল্য সমন্বয় করতে কিনতে পারিনি। এরপরও সব ধরনের পণ্যের বাড়তি দাম ব্যয়ের খাতায় রেকর্ড ছাড়াবে।

১৯ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য এবার নিত্যপণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি। তাই এবার বিক্রেতাদের অতি মুনাফা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। দেশে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলাসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত রয়েছে। কোনো পণ্যের ঘাটতি বা মূল্যবৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই। তাই একসঙ্গে বেশি পণ্য কিনে বাজারে চাপ সৃষ্টি করার কোনো প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি পবিত্র রমজান সামনে রেখে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। কেউ কৃত্রিম উপায়ে পণ্যের অবৈধ মজুত করে মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া বাজারে মুরগির সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।



© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT