শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভৈরবে তাণ্ডবের মহোৎসব

প্রকাশিত : ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার ৫৪ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে কালা মিয়া নামে একজন হত্যার শিকার হন। এ হত্যা মামলায় পুলিশের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় এক পক্ষের লোকজন।
এ সুযোগে তাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন এবং কিছু সুযোগসন্ধানী লোক। অন্তত অর্ধশত বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় তারা। সঙ্গে চলে ব্যাপক লুটপাট।

গরু-ছাগল, আসবাবপত্র, টাকাপয়সা, কাঁচা ঘরের টিন এমনকি থালাবাসন ও লেপতোশকও নিয়ে যায় তারা। ২০ দিন ধরে এমন বর্বরতা চলে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের বোধনগর ইসলামপুর গ্রামে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, এ যেন অপরাধের ‘মহোৎসব’। দিনের পর দিন হামলা-লুটপাট চললেও পুলিশ ছিল একেবারেই নির্বিকার। তারা এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। তবে পুলিশ বলছে, তারা সেখানে দিনে পাহারায় ছিলেন, কিন্তু অপরাধীরা রাতে এসে এমন কাণ্ড ঘটায়। ঘটনাস্থল প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় রাতে সেখানে টহল দেওয়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়।

রোববার সরেজমিনে ওই গ্রামে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। কোথাও কোনো নারী-পুরুষ নেই। একটি ভাঙা বাড়ির সামনে একজন বৃদ্ধ লোককে দেখা যায়। নাম আবদুর রহিম। তিনি জানান, তার ছেলে কালা মিয়া হত্যা মামলার আসামি। পরিবারের সবাই ছেলের শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি এসেছেন ঘরের অবস্থা দেখতে।

তিনি বলেন, আমার ঘর ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। সব জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। ঘরের থালাবাসন, লেপতোশকও নেই। তিনি জানান, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে ২৭ জানুয়ারি একই গ্রামের ফরিদ মিয়া বাদী হয়ে ৬৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।

জানা যায়, ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের বোধনগর ইসলামপুর গ্রামে ১৬ জানুয়ারি সকালে জমি নিয়ে বিরোধে কালা মিয়া খুন হন। দুদিন পর তার ছেলে জসীম উদ্দিন বাদী হয়ে ৬২ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার পর পুলিশের ভয়ে প্রতিপক্ষের শতাধিক পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। এর আগে থেকেই শুরু হয় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট। এমনকি এ নিয়ে ২৭ জানুয়ারি মামলা হওয়ার পরও থামেনি হামলা। শনিবার রাতেও গ্রামে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে।

গ্রামের ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, আমার ছেলেরা বিদেশ থাকে। আমি ঘটনায় জড়িত ছিলাম না। কিন্তু কালা মিয়ার লোকজন আমার চারটি গরু এবং কয়েক লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। তারা আমার পাকা ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে তছনছ করেছে। এমনকি ইটও খুলে নিয়ে গেছে। পাশের লুন্দিয়া গ্রামের সহীদ মেম্বার ও সাবেক মেম্বার হারুনের নেতৃত্বে এই লুটপাট হয় বলে দাবি তার।

একই গ্রামের নবী হোসেন বলেন, তারা আমার দোতলা বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আমার দুই লাখ টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। নিহত কালা মিয়ার ছেলে আল-আমিন ও জসীম এবং লাদেন, আনার মিয়া, জাকের মিয়া, সামাদ মিয়া ও বাবুর নেতৃত্বে লুটপাট হয়েছে।

আলফাজ মিয়া নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমি এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার ঘরের লেপতোশক, থালাবাসন পর্যন্ত নিয়ে গেছে তারা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নিহত কালা মিয়ার ছেলে জসীম উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় আমাদের কোনো লোক জড়িত নয়। একশ্রেণীর সুবিধাবাদীরা সুযোগ বুঝে ভাঙচুর-লুটপাট করেছে।

আরেক অভিযুক্ত সহীদ মেম্বার বলেন, আমি লুটপাট, ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। একটি খুন গ্রামের ৫০টি পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পুলিশ পর্যন্ত ঘটনা রুখতে পারছে না। তিনি বলেন, আমিও চেষ্টা করেছি ভাঙচুর, লুটপাট বন্ধ করতে; কিন্তু পারিনি।

এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, সেখানে তিন-চার দিন ধরে ২০-২৫ জন পুলিশ দিনে পাহারা দিয়েছে। কিন্তু অপরাধীরা রাতের আঁধারে ভাঙচুর-লুটপাট করেছে। ওই সময় আমাদের পক্ষে সেখানে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। দুই পক্ষ থেকেই মামলা হয়েছে। মামলা তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।



© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT