সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাস্তবতা নয়, পরিবহণ নেতাদের দাবি প্রাধান্য

প্রকাশিত : ০৯:০৩ পূর্বাহ্ণ, ১৫ মার্চ ২০২৪ শুক্রবার ১১২ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

সড়ক পরিবহণ আইনের দুটি ধারা জামিনযোগ্য এবং ১০টি ধারায় জরিমানার বিধান কমিয়ে সংশোধনী পাশ করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলনকারীরা। তাদের বেশিরভাগের মতে, বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নয়, পরিবহণ নেতাদের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে এ সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে। এর ফলে সড়কে দুর্ঘটনা ও পরিবহণ বিশৃঙ্খলাকে আরও উসকে দেওয়া হচ্ছে। পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা যদি জরিমানা দিয়ে বারবার পার পেয়ে যায়, তাহলে সড়কে মৃত্যুর হার কমবে না বরং বাড়বে। তারা বলেন, সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ সালে পাশ হলেও দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমেনি, উলটো বাড়ছে। এরই মধ্যে সাজা শিথিল করে আনা এ সংশোধনী প্রস্তাব ইতিবাচক নয়। যদিও এ মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন পরিবহণ নেতারা। তারা জানান, আইনের ৩২টি ধারা-উপধারায় সংশোধনী চেয়েছিলেন তারা। এ সংশোধনীতে আংশিক সন্তুষ্ট তারা।

বুধবার ‘সড়ক পরিবহণ (সংশোধন) আইন-২০২৪’র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে আইনের বিভিন্ন ধারায় সাজা কমানো হচ্ছে। দুটি ধারা অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে অনুমোদিত খসড়া সংশোধনীতে। ১০টি ধারায় জরিমানা কমানো হচ্ছে।

আইনের এ সংশোধনীর প্রতিক্রিয়ায় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, মালিক-শ্রমিক নেতারা দীর্ঘদিন ধরে আইনের কয়েকটি ধারা শিথিল করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, সরকারও আমাদের কাছে মতামত চেয়েছে। আমরা আমাদের মতামতে বলেছি, আইন সংশোধন হতে পারে, তবে তা জনস্বার্থে। সংশোধনের নামে আইন দুর্বল করা হলে সড়কে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, আইন সংশোধনে আমাদের মতামতের চেয়ে মালিক-শ্রমিকদের দাবিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ৮৪ ও ৯৮ ধারাকে অজামিনযোগ্য রাখার পক্ষে আমরা মত দিয়েছিলাম। আর পরিবহণ নেতারা ওই ধারা দুটিকে জামিনযোগ্য করার দাবি জানিয়েছিলেন। তাদের দাবিই মানা হলো।

বর্তমানে আইনের ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারা অজামিনযোগ্য। সংশোধনীতে ৮৪ ও ৯৮ ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ ধারায় ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মোটরযান চালানোর ফলে দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতিসাধনে দণ্ডের কথা আছে। এই ধারায় মোটরযানের মালিককে বিমা করতে বলা হয়েছে। ১০৫ ধারা এখনকার মতো অজামিনযোগ্যই থাকছে। দুর্ঘটনাসংক্রান্ত অপরাধের শাস্তির কথা আছে এ ধারায়। ৮৪ ধারা যানবাহনের কারিগরি বিনির্দেশ অমান্য সংক্রান্ত। বাকি ১০টি ধারার কয়েকটি কারাদণ্ড এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরিমানা কমানো হয়েছে। এ বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমরা কিছু কিছু জায়গায় জরিমানা কমানোর পক্ষে মত দিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরিমানা কমিয়ে অর্ধেক বা তারও কমে নিয়ে আসা হয়েছে। পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা যদি জরিমানা দিয়ে বারবার পার পেয়ে যায়, তাহলে সড়কে দুর্ঘটনা কমবে না বরং বাড়বে। জরিমানা দিয়ে বারবার অপরাধ করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হবে। এতে সড়কে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা কমবে না উলটো বাড়বে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার যে উদ্দেশ্যে এ আইন করা হয়েছিল তা পূরণ হবে না।

সড়ক আইনের এ সংশোধনী সড়কে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়াবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, সড়কে বাস্তব যে অবস্থা তার আলোকে আইনে সংশোধনী আনা হয়নি। যে সংশোধনী আনা হচ্ছে তাতে সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা এবং শৃঙ্খলা ফেরানোর যে আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ হবে না। বরং বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য আরও উসকে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পরিবহণ খাত মূলত মালিক ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে। সরকার তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে। তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। তিনি বলেন, আমরা আইনের ৩২টি ধারা সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়ে বলেছিলাম, ওইসব ধারায় যে সাজার কথা বলা হয়েছে তা প্রয়োগ অবাস্তবভিত্তিক ও অসম্ভব। সরকার আমাদের ১২টি ধারার সংশোধনী মেনেছে। আইনের ১০৫ ধারাও জামিনযোগ্য করার দাবি জানিয়েছিলাম সেটি মানেনি। আমরা মনে করি, আমাদের দাবি আংশিক মানা হয়েছে।

সংশোধনী যাই হোক না কেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার বলে মনে করেন ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগ ছাড়া পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না। ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহণ আইন পাশ হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এখন এসব ধারায় সংশোধনী আনার পর সেগুলো যদি কার্যকর করা যায় তাহলে সেটা একটা ভালো দিক বলা যাবে। তিনি বলেন, সংশোধনীতে বিমাকে আবারও আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা খুবই ইতিবাচক।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT