প্যাকেটজাত চিনি উধাও, দফায় দফায় বাড়ছে মূল্য
প্রকাশিত : ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, ১২ মে ২০২৩ শুক্রবার ১৩৭ বার পঠিত
দীর্ঘদিন ধরেই অস্থির দেশের চিনির বাজার। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে দফায় দফায় দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলে বাজারে তা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। বর্তমানে বাজার মূল্যের থেকে প্রায় ৪০ টাকা বেশি দরে হচ্ছে চিনির বেচাকেনা। গত সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা নতুন দাম প্রস্তাব করলেও তা কার্যকর করা হয়নি। এর বিপরীতে এবার চিনির নতুন দাম প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
সংস্থাটি আগের নির্ধারিত দাম কেজি প্রতি ১০৪ টাকা থেকে ১৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। একইভাবে ১০৯ টাকার প্যাকেটজাত চিনির দাম বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতি কেজি ১২৫ টাকা। তবে গত ২ সপ্তাহ ধরে বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা দরে। নেই প্যাকেট চিনির সরবরাহ। প্রতি কেজিতে রেকর্ড ৪০ বাড়তি নেওয়া হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর কোনো উদ্যোগ নিতেও দেখা যায়নি।
এদিকে গত সপ্তাহেই ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে কার্যকর হয়েছে ভোজ্যতেলের নতুন দাম। একই সময়ে চিনির দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ছিল সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সে সময় সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তী ঘোষ চিনিরও নতুন দামের ঘোষণা আজকালের মধ্যে দেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। এরপর এক সপ্তাহ পার হলেও চিনির নতুন দামের ঘোষণা আসেনি।
জানা গেছে ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি চিনির দাম ২৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর বিপরীতে আমদানি দর, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয় পর্যালোচনা করে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশে ট্যারিফ কমিশন প্রতি কেজিতে ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ কারার প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিল ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও তাদের লোকসান হয়। অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবিত দামে থেকে ট্যারিফ কমিশনে দাম কেজিতে ১০ টাকা কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোজ্যতেলের সঙ্গেই চিনির নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবিত দামে আপাত্তি থাকায় তা কার্যকর হয়নি। অবশেষে ট্যারিফ কমিশন নতুন দাম প্রস্তাব করেছে। দেখার বিষয় এই দামে ব্যবসায়ীরা রাজি হন কিনা। যদি এর আগে বহুবার দুই পক্ষের সম্মতিতে চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু বাজারে তা কার্যকর হতে দেখা যায়নি।
বুধবারও রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে যা বিক্রি হয়েছে আরও বেশি দামে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবেও ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি একেবারে নেই।
ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, এক কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির প্রস্তাবিত মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য হবে ১১৭ টাকা। পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির মিলগেট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১১৯ টাকা আর পরিবেশক পর্যায়ে যার দাম হবে কেজিতে ১২১ টাকা। কমিশন এ দাম প্রস্তাব করেছে ডলারের বিনিময়মূল্য ১১১ টাকা হিসাব করে।
আন্তর্জাতিক বাজারদরের বিষয় উল্লেখ করে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলছে, ২০২২ সালের মে মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি বেচাকেনা হয়েছে ৪২০ ডলারে। চলতি মাসের শুরুতে অপরিশোধিত সেই চিনির দাম হয়েছে ৫৮০ ডলার, যা গত বছরের চেয়ে টনপ্রতি ১৬০ ডলারের মতো বেশি। গত বছর ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৯০ টাকা। এবার সেটা ১১০ থেকে ১১১ টাকা। তবে এই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবহণ ব্যয় বাড়েনি বলে জানিয়েছে কমিশন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান জানান, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের নতুন দামের প্রস্তাবের বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি জানতে পারেননি। তবে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্রে বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে এবং দেশে ডলারের বিনিময়মূল্য ১১৫ টাকা উল্লেখ করে চিনির দাম বাড়ানোর জন্য গত ১৭ এপ্রিল কমিশনে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির দাম ১২৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৩৫ টাকা প্রস্তাব করে মিল মালিকদের এই সংগঠন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সরকার বাজারে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিতে শুরু করে। এর মধ্যে পাঁচ দফায় চিনির দাম বেঁধে দেওয়া হলেও একবারও চিনির সরকারি মূল্য কার্যকর হয়নি। সবশেষে সরকার গত ৬ এপ্রিল প্রতি কেজি চিনির দাম তিন টাকা কমায়। এতে সরকার ঘোষিত পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল কেজিতে ১০৪ টাকা আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম প্রতি কেজি ১০৯ টাকা।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।